বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘কেরোসিনের যুগ শেষ, ৯৪ শতাংশ ঘর এখন নিয়ন বাতির দখলে’

‘কেরোসিনের যুগ শেষ, ৯৪ শতাংশ ঘর এখন নিয়ন বাতির দখলে’

পরিবারে আলোর উৎস হিসেবে ফুরিয়ে আসছে কেরোসিনের কদর। এমনকি এই জ্বালানি তেলের অন্যান্য ব্যবহারও দিন দিন কমছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে বলে কেরোসিনের ব্যবহার বলতে গেলে বিলীন হতে চলেছে। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে এখন আর কুপি বাতি কিংবা হ্যারিকেন জ্বলে না। সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে নিয়ন আলো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপেও উঠে এসেছে এমন চিত্র।

সংস্থাটির তৈরি করা ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে খানার (পরিবারের) বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়েছে, পরিবারের আলোর উৎস হিসেবে এখন বিদ্যুৎই প্রধান ভূমিকা রাখছে। দেশের প্রায় ৯৪ শতাংশ পরিবার এখন বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের পরিচালক একেএম আশরাফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, “সরকারের অন্যতম একটি স্লোগান হচ্ছে ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’। এটি শুধু স্লোগানের মধ্যেই যে সীমাবদ্ধ নয়, সেটি এখন প্রমাণিত। আমাদের জরিপেও উঠে এসেছে সেটির বাস্তব চিত্র।”

তিনি জানান, ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি পারপাস স্যাম্পল ডিজাইন (আইএমপিএস) অনুযায়ী দেশের ২০১২টি নমুনা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তারপরই সেই তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে প্রতিবছর নিয়মিতভাবেই এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়ে থাকে।

বিবিএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে দেশের মোট পরিবারের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবার আলোর উৎস হিসেবে কেরোসিন ব্যবহার করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই দিন বদলে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের জরিপে সেটি কমে দাঁড়ায় ১৩ শতাংশে। ২০১৭ সালে কমে হয় ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে আরও কমে দাঁড়ায় ৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৯ সালের জরিপে কেরোসিনের ব্যবহার কমে গিয়ে হয়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশে ঠেকেছে। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দ্রুত গতিতে কেরোসিনের ব্যবহার কমে যাচ্ছে।

৯৩ দশমিক ৫ শতাংশে পরিবারেই বিদ্যুৎ

বিবিএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের সাড়ে ৬ শতাংশ পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশের ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবারে আলোর উৎস হিসেবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিদ্যুৎ সুবিধা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচে-কানাচে। যেখানে গ্রিড স্থাপন সম্ভব নয় সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দিচ্ছে সরকার। ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, দেশে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতো ৯০ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার। ২০১৭ সালের জরিপে এই হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের জরিপে সেটি ছিল ৮১ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে পরিবারের আলোর উৎস হিসেবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতো ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার।

কমছে সোলারের ব্যবহার

বিবিএস এর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশে সৌর বিদ্যুতের (সোলার) ব্যবহার কখনও বেড়েছে, আবার কখনও কমেছে। ২০১৫ সালের হিসাবে দেশে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার আলোর উৎস হিসেবে সোলার ব্যবহার করতো। ২০১৬ সালের জরিপে কিছুটা বেড়ে হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে আরও কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশে। কিন্তু ২০১৮ সালের জরিপে দেখা গেছে, সোলারের ব্যবহার কিছুটা কমেছে। এই বছর ৪ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার আলোর উৎস হিসেবে সোলার ব্যবহার করেছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের জরিপে সেটি আরও কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে।

অন্যান্য জিনিসের ব্যবহার

পরিবারে আলোর উৎস হিসেবে ‘অন্যান্য’ জিনিসের ব্যবহার ২০১৯ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। যেটি ২০১৮ এবং ২০১৭ সালে ছিল শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই হার ছিল শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৫ সালে পরিবারের আলোর উৎস হিসেবে অন্যান্য জিনিসের ব্যবহার হতো শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।

দৈনিক বগুড়া