মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় যে দোয়ায়

জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় যে দোয়ায়

পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর জিকির (স্বরণ)-ই সবচেয়ে বড়। (সূরা: আল আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দোয়াই হলো (মূল) ইবাদত।’ (আবু দাউদ- হা: ১৪৭৯, তিরমিযী- হা: ২৯৬৯, ইবনু মাজাহ- হা: ৩৮২৮; সহিহ)। 

দোয়ার মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। সমাধান করা যায় যেকোনো সমস্যা। 

সব কিছুর মালিক আল্লাহ তায়ালা। তাই সব বিষয়ে তাঁর সাহায্য চাওয়ার বিকল্প নেই।  নিম্নে এমন কিছু দোয়া তুলে ধরা হলো, যেগুলোর মাধ্যমে জান্নাত লাভের সুসংবাদ রয়েছে।

যে দোয়া পড়লে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়:

উচ্চারণ : ‘রদিতু বিল্লাহি রব্বাউঁ ওয়া বিল ইসলামী দ্বিনাউঁ ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যাঁও ওয়া রাসূলা’। 

অর্থ: আমি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বিন এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসূল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি।

ফজিলত: হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি উল্লিখিত দোয়াটি পড়বে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫২৯)।

অপর বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি সকাল-বিকেল তিনবার এই দোয়া পড়বে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে নেকি বৃদ্ধির দ্বারা সন্তুষ্ট করবেন। (তিরমিজি: ২/১৭৬)।

সবার চেয়ে বেশি নেকি অর্জনের দোয়া:

উচ্চারণ : ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি’।

অর্থ: আল্লাহ পবিত্র এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। কোনো কোনো আলেম দোয়াটির অর্থ এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি।

ফজিলত: যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ১০০ বার এই দোয়া পড়বে, কেয়ামতের দিন তার চেয়ে বেশি নেকি নিয়ে কেউ আল্লাহর দরবারে হাজির হতে পারবে না। তবে যারা এই দোয়ার আমল করে, তারা ছাড়া। (মুসলিম, হাদিস: ২৬৯২)।

উচ্চারণ: ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’।

অর্থ: আল্লাহ পবিত্র, মহান-শ্রেষ্ঠতর। সব প্রশংসা তাঁরই।

ফজিলত: যে ব্যক্তি সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে ১০০ বার বলবে ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ এবং সন্ধ্যায় উপনীত হয়েও অনুরূপ বলবে, সৃষ্টিকুলের কেউ তার সমপরিমাণ মর্যাদা ও সাওয়াব অর্জন করতে পারবে না। (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৯১)।

যে দোয়ায় জান্নাতে বৃক্ষ রোপণ করা যায়:

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়। (তিরমিজি: ৩৪৬৪)।

যে দোয়ায় আমলের পাল্লা ভারী হয়ে উঠবে:

উচ্চারণ: ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ অর্থ: মহান আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, মহান আল্লাহর পবিত্রতা, যিনি শ্রেষ্ঠতর।’

ফজিলত: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা বলা সহজ, আমলের পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহর কাছেও অধিক পছন্দনীয়। সেটি হলো, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৬)।

উচ্চারণ: ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলক ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির’।

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।

ফজিলত: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার এ দোয়াটি পড়বে—‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলক ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির’, সে ১০টি গোলাম মুক্ত করার সমান সওয়াব পাবে। তার জন্য ১০০ সওয়াব লেখা হবে এবং আর ১০০ গুনাহ মিটিয়ে ফেলা হবে। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে। কেউ তার চেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ওই ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে ওই দোয়াটির আমল বেশি পরিমাণ করবে। (বুখারি, হাদিস: ৩২৯৩)।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় দোয়া:

উচ্চারণ : ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’

অর্থ : ‘আল্লাহ পবিত্র, সব প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান।’

ফজিলত: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি বলি, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ পড়া আমার কাছে সেসব বিষয়ের চেয়ে বেশি প্রিয়, যার ওপর সূর্য উদিত হয়েছে (দুনিয়া ও দুনিয়ার সব কিছু থেকে বেশি প্রিয়)। (মুসলিম, হাদিস: ৬৭৪০)।

যে দোয়ায় ধনীদের দান-সদকার সঙ্গে পাল্লা দেয়া যায়:

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দরিদ্র লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তাঁরা আমাদের মতো সালাত আদায় করছেন, আমাদের মতো সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হজ, ওমরাহ, জিহাদ ও সদকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ কথা শুনে তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে? তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার করে ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করবে। (বুখারি, হাদিস: ৮৪৩)।

যে দোয়া পড়লে সব চাওয়া পূর্ণ হয়:

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু, লা-ইলাহা ইল্লা আংতাল মান্নান, বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়্যুম।’

ফজিলত: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল (সা.) এর সঙ্গে বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি নামাজ আদায় করে এই বলে দোয়া করল, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। তুমিই তো সকল প্রশংসার মালিক, তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি দয়াশীল। তুমিই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর একমাত্র সৃষ্টকর্তা! হে মহান সম্রাট ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, হে চিরঞ্জীব, হে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।’ নবী (সা.) বলেন, এই ব্যক্তি ইসমে আজম দ্বারা দোয়া করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর কাছে চাওয়া হলে তিনি দান করেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৯৫)।

শ্রেষ্ঠতম জিকির:

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৩)।

এ ছাড়া বহু দোয়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া যায়।

দৈনিক বগুড়া