শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারীদের বিভিন্ন শারিরীক সমস্যার সমাধান

নারীদের বিভিন্ন শারিরীক সমস্যার সমাধান

মা, বোন, স্ত্রী – যে নামেই ডাকা হোক নারীর সঙ্গে মায়া, মমতা আর ভালোবাসার রয়েছে ভিন্নরকম যোগসূত্র। পরিবার কিংবা কাছের মানুষটির জন্য সর্বস্ব দিয়ে ভালো রাখার চেষ্টার ত্রূটি থাকে না তাদের। কিন্তু নিজের বেলায়? নিজের যত্নের বরাবরই বড্ড আনাড়ি এই মানুষগুলো। তাই স্বাস্থ্য সমস্যায় নারীদেরই বেশিরভাগ ভুগতে দেখা যায় বিভিন্ন সময়। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের এই ধরনের সমস্যা দেখা গেলেও এখন স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে বেশ অল্প বয়সেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন নারীরা। তাই এখনই সময় আগেভাগে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার।

ঋতুস্রাবের সময় ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব বা বমি, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। অনেক খাবার আছে যা নারীদের জননাঙ্গ এবং রক্ত পরিষ্কার করবে।

ঋতুস্রাবপূর্ব ব্যথা: আদা বেশ উপাকারী ঋতুস্রাবের ব্যথা রোধের জন্য। ঋতুস্রাবের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার  জন্য পেঁপে খাওয়া বেশ কার্যকরী।পেটে ব্যথার জায়গায় গরম পানির সেঁক দিতে পারেন। হট ব্যাগের মধ্যে গরম পানি নিয়ে পেটের ওপর দিতে পারেন। এটি আপনার ব্যথা অনেকটা কমিয়ে দেবে। অ্যালোভেরা রসের সাথে মধু মিশিয়ে একটি জুস তৈরি করে ফেলুন। ঋতুস্রাবের ব্যথার সময় এটি পান করুন। দিনে কয়েকবার এটি পান করুন। ব্যথা অনেকখানি কমিয়ে দেবে এই পানিয় টি।

পাইলস:  মল ত্যাগে সমস্যা, রক্তক্ষরণ এবং মলদ্বারের আশেপাশে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া সমস্যা হলে হরিতকি, পেস্তা খেতে পারেন। পাইলস প্রতিরোধ ও কমাতে প্রচুর পানি খেতে হবে এবং ব্যায়াম করতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খান।

পাকা চুল: আয়ুর্বেদ তথ্য মতে রাগ, গরম পানিতে গোসল, ঠাণ্ডা এবং সাইনাস সমস্যা চুল পাকার জন্য অনেকাংশে দায়ী।

মেনোপজ: এসময় বিভিন্ন প্রকার ভেষজ খাবার রক্ত ও জননাঙ্গের পুষ্টি সাধন করে। তাছাড়া, তলপেটের সুস্থতা নিশ্চিত করে। এই সময়টাতে, অস্টিওপরোসিস এড়াতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাবার গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া, ইয়োগা করতে পারেন।

স্থূলতা: আমলকি এবং পুনর্ভবা ওজন কমাতে সহায়তা করে। স্থূলতা কমাতে ও প্রতিরোধে নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক ডায়েট মেনে চলা উচিত।

ব্রণ: ব্রণ ত্বকে স্থায়ী দাগ তৈরি করতে পারে। ব্রণ প্রতিরোধে দারুচিনি, চন্দন, হলুদ, নিম, গিলয় এবং গুলঞ্চ ব্যবহার করতে পারেন।

ইউরেনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনঃ কিডনি,  জরায়ু,  মূত্রথলি ও  মূত্রনালিতে  সংক্রমণের রোগ  এটি। ইউরেনারি ট্র্যাক্ট  ইনফেকশন (ইউটিআই) পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে দেখা যায়।অন্তত অর্ধেক নারীই জীবনের  কোনোনা কোনো পর্যায়ে এ ধরনের একটি সংক্রমণে আক্রান্ত হয়।নিয়মিত পানি পান না করা এবং প্রস্রাবআটকে রাখা শহুরে  নারীদের মধ্যে এমন সংক্রমণের একটি সাধারণ কারণ।  এ ছাড়া যৌন সংস্রব  এবংপরিবারে অন্য কারও এ রোগ  থাকাটাও এ  ধরনের সংক্রমণের  ঝুঁকি হতে পারে।

বিষাদগ্রস্ততাঃবিষাদগ্রস্ততার ঝুঁকিতে অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পুরুষের তুলনায় এগিয়ে থাকেন। সামাজিক কাঠামো ও জীবনযাপনের ধরন বিষাদগ্রস্থতার একটি বড় কারণ।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে উচ্চ,  মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশ সব  জায়গাতেই  নারীদের  রোগাক্রান্ত  হওয়ার একটি বড় কারণ  ডিপ্রেশন বা  বিষাদগ্রস্ততা।  গর্ভধারণের  পর(পোস্টাপার্টাম)  এবং  মাসিক  ঋতু বন্ধ  হয়ে যাওয়ার পর (মেনোপজ)  অনেক নারী বিষাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হতে পারেন।  এ ছাড়া  দাম্পত্য  সম্পর্ক  ও যৌন জীবন বিষাদগ্রস্ততার  একটি বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত।

হরমোনাল ইমব্যালেন্সঃ  মুখের ত্বকের মতোই হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে গোপনাঙ্গেও ব্রণ হতে পারে, এর পাশাপাশি দায়ীহতে পারে ব্যাকটেরিয়া।  টেস্টোস্টেরোন বা ইস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্যের কারণে  এ ধরণের  অ্যাকনি দেখা দিতে পারে। এর পাশাপাশি অন্য কোনো মেয়েলী সমস্যা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে  নিরাপদ  থাকাই ভালো। এর পাশাপাশি কপি জাতীয় খাবার, অর্গানিক সয়া,  উদ্ভিজ্জ ফ্যাট আপনার  খাদ্যভ্যাসে অন্তর্ভুক্তকরুন।

গোপনাঙ্গে হেয়ার রিমুভার ব্যবহার করবেন নাঃ হেয়ার রিমুভার বা রেজর ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে পারেন।অনেকের  কাছেই তা অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। তবে রেজরের কারণেও  অনেক সময়ে  ব্রণ  হয়,  নিয়মিত  হেয়ার  রিমুভালের ফলে ত্বকের নিচে রোমআটকে গিয়ে ইনগ্রোন হেয়ারের সমস্যা তৈরি করতে পারে। এর থেকে  দেখা  দিতে পারেন ইনফেকশনও।

আঁটসাঁট অন্তর্বাস পরিহার করুনঃ  যদিও আঁটসাঁট অন্তর্বাসে আপনার ফিগার ভালো দেখায়, কিন্তু এগুলোর কারণে হতে পারে ব্রণ। রাতে ঘুমানোর সময়ে অন্তর্বাস ছাড়াই থাকুন।   এতে আপনার  গোপনাঙ্গে যথেষ্ট  বাতাস চলাচল  করবে  এবং ব্যাকটেরিয়া দূর হবে।

পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকুনঃ গোসলের ক্ষেত্রে সবাই নিয়ম মেনে চলেন।  তবে গোপনাঙ্গের  একটু বাড়তি  যত্ন নেওয়া জরুরী। অরিগানোবা টি–ট্রি অয়েল আছে  এমন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল  সোপ ব্যবহার  করতে  পারেন এক্ষেত্রে।

অন্তর্বাস পরে ঘুমাবেন নাঃ  এ ধরণের ব্রণ দূর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অন্তর্বাস পরেনা  ঘুমানো।আমাদের শরীর ঘুমের মাঝেই বেশি ঘামে।এ সময়ে ব্রণ দেখা দেয় বেশি। পাতলা কাপড় পরে  ঘুমালে  ত্বক  আরাম  পাবে, ব্রণের সমস্যা কম হবে।

কিছু সহজলভ্য ওষুধ ব্যবহার করুনঃ ঘরোয়া প্রতিকারে কাজ না হলে আপনি কিছু ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। মুখে ব্যবহারের কিছু ব্রণের ওষুধ আপনি  এক্ষেত্রেও  নিশ্চিন্তে প্রয়োগ করতে  পারেন। নিশ্চিত হতে  চাইলে  কথা বলুন  ডাক্তারের সাথে।

 

দৈনিক বগুড়া