বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় ভালবাসা দিবসে গোলাপ ফুল বিক্রির নতুন নিয়ম

বগুড়ায় ভালবাসা দিবসে গোলাপ ফুল বিক্রির নতুন নিয়ম

বিশ্ব ভালবাসা, পহেলা ফাল্গুন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এক মাসে হওয়ায় ফুল বাজারের একটি বড় মৌসুম ফেব্রুয়ারি মাস। তবে করোনার প্রভাবে লাভের অঙ্ক নিয়ে এখনও শঙ্কায় রয়েছে বগুড়ার ফুল ব্যবসায়ীরা। এ জন্য লোকসানের ঝুঁকি কমাতে দোকানীরা বারোশ পিস করে গোলাপ ফুল বেচবেন। এ পরিমাণ বেঁধে দিয়েছে ফুল ব্যবসায়ী সমিতি।

সমিতি বলছে, প্রতিবছর এই মাসে গড়ে বগুড়ার বাজারে অর্ধ কোটি টাকার ব্যবসা হতো। সেখানে এবার তার ৪০ শতাংশ বেচাকেনায় হওয়ার সম্ভবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। আর অন্য বছর প্রায় প্রতিটি দোকানী গড়ে ২ হাজার পিস গোলাপ বিক্রি করলেও এবার ১২০০ পিস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চাহিদা থাকলেও এর বেশি কোনো দোকানী বিক্রি করতে পারবেন না বলে বগুড়ায় এবার নতুন নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে।    

ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালবাসা দিবসের ক্রেতাদের বড় একটি অংশ স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা। এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যবসায় লাভের আশা করছেন না। তার উপর ফুলের দামও বিগত বছরের চেয়ে বেশি।

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় ফুল বাজার বগুড়া জেলা। উত্তরবঙ্গের দ্বারপ্রান্ত বগুড়া অতীতকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর। আবার এ জেলায় সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরও বেশি। যার জন্য এখানে ফুলের ব্যবহারও বেশি।

সমিতির হিসাবে, প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকার ফুল বগুড়া থেকে বাইরের জেলায় বিক্রি হয়। তবে গত বছরের করোনাভাইরাস এসব বাজার অনেকখানি নষ্ট করে দিয়েছে।

করোনার কারণে প্রায় ছয় মাস ব্যবসা বন্ধ ছিল। এ সময়টায় গড়ে প্রতি ব্যবসায়ী ২০ হাজার টাকার মতো লাভের পরিমাণ হারিয়েছে। এখন অনেকে মূলধন সংকটে রয়েছেন। সেই সংকট থেকে এবার ব্যবসায়ের ভরা মৌসুমেও ফুল তুলতে সাহস পাচ্ছেন না দোকানীরা।

বগুড়া ফুল বাজারের সমিতির হিসাবে ১৭ জন ব্যবসায়ী। বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকে ১২০০ পিস গোলাপ ফুল তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে অন্যান্য ফুলের যোগান স্বাভাবিক রয়েছে।

শনিবার বিকেল তিনটার দিকে ফুল বাজারে ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের ফুল মোটামুটি রয়েছে। দোকানগুলোয় ক্রেতাও ঘুরছেন; তবে উপচে পড়া ভিড় নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি গোলাপ ৩০ টাকা এবং মাথার ব্যান্ড ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাজরা দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা, জারবারার ব্যান্ড ৮০ থেকে ২০০ টাকা, ঝুড়ি তোড়া ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, গোল তোড়া ৭০ থেকে ১০০ টাকা এবং চায়না বুটি ২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। অন্যান্য ফুলের দামও রয়েছে তুলনামূলক স্বাভাবিক।

বাজারের গোড়াপত্তন থেকে রয়েছেন বিউটি ফুল ঘরের মালিক শ্রী অজিত কুমার। তিনি বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২০০ পিস গোলাপ তোলা হচ্ছে। এর বেশি তুলে বিক্রি না হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এমনিতে করোনার কারণে লোকসানে রয়েছি।

ফুল বাজারের অবস্থা নিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও করতোয়া ফুল ঘরের মালিক লক্ষণ দাসের সঙ্গে কথা হয়। লক্ষণ বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের ব্যবসার মূল আইটেম থাকে গোলাপ। প্রতিবছর প্রত্যেকে গড়ে তিন হাজার পিস ফুল দোকানে তুলতেন। কিন্তু এবার তুলছে ১২০০ পিস। লোকসানের ঝুঁকি কমাতে সমিতি থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বগুড়া ফুল বাজারে স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু চাষী ফুলের একটি অংশ সরবরাহ করেন। এদের মধ্যে একজন জান্নাতুল ফেরদৌস জনিও জানান ফুলের সংকটের কথা। সাধারণত এই দিনে স্থানীয়ভাবে শুধু গোলাপ সরবরাহের চাহিদা থাকে গড়ে ২০ হাজার পিস। সেখানে বগুড়ার শাজাহানপুরের ফুল চাষীরা মাত্র ৬ হাজার পিসের চাহিদা অর্জন করেছেন।

জনি বলেন, আবহাওয়া বৈরী থাকায় ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে বাজারের গোলাপের পরিমাণ বেঁধে দেয়ায় আমরাও ফুল সরবরাহে ধরা খেয়েছি।

ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জুয়েল হাসান বলেন, সাধারণত এই মাসে ৫০ লাখ টাকার মতো ব্যবসায় হয় ফুল বাজারে। এবার তার ৪০ শতাংশ বেচাকেনা হলেই আমরা খুশি। শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত ব্যবসা হালকা গেছে। সন্ধ্যায় একটু বেচাকেনা বেড়েছে। ১৪ তারিখে এই পরিমাণ ৪০ থেকে বেড়ে ৬০ বা ৭০ শতাংশ হয়; তবে মনে করব ঘাটতি থেকে কিছুটা কাটিয়ে উঠা যাবে।

দৈনিক বগুড়া