বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাজরিগার পাখি সম্পর্কে কতটুকু জানি

বাজরিগার পাখি সম্পর্কে কতটুকু জানি

ছবি: সংগৃহীত

 

বাজরিগার পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় পোষা পাখি। বাজরিগার অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলে বনাঞ্চলের পাখি। বর্তমানে এই পাখি পালন কারীর সংখ্যা বাংলাদেশে বেড়েই যাচ্ছে, এই পাখি খাঁচায় পালন করা যায়। অসাধারণ সুন্দর এই পাখিটি যদি সঠিক নিয়মে লালন পালন করা যায় তা আপনাকে ও আপনার পরিবারকে যেমন আনন্দ দিবে সেই সাথে ভালো পরিবেশ নিশ্চিত হলে ডিম দিয়ে বাচ্চাও উপহার দিবে। তবে এই পাখি লালন পালনের বেশ কিছু নিয়ম আছে, সাধারণ পাখিদের চেয়ে একটু ভিন্ন নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। সাধারণত খাঁচায় পালা বাজরিগার পাখি লম্বায় ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। আর খাঁচায় পালন করা পাখির ওজন ৩৫ থেকে ৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। বাজরিগার প্রাকৃতিকভাবে সবুজ ও হলুদের সঙ্গে কালো রংয়ের এবং সাদা ও দুসর কালারের হয়ে থাকে। এছাড়াও থাকে নীল, সাদা, হলুদ রংয়ের ছোপ।

কিভাবে শনাক্ত করবেন স্ত্রী ও পুরুষ পাখি এবং ছোট বড়ঃ

সাধারণত ৩-৪ মাস বয়স হলেই নাকের উপরের রং দেখেই সনাক্ত করা যায় স্ত্রী ও পুরুষ পাখি। যেমন- পুরুষ পাখির প্রথমে নাকের বর্ণ থাকবে গোলাপি রংয়ের। বয়স বাড়ার সঙ্গে রং হবে নীল। আর স্ত্রী পাখির নাকের বর্ণ হবে সাদা। বয়স বাড়ার সঙ্গে  হবে খয়েরি বা চকলেট। ছোট বড় চেনার উপায় হচ্ছে প্রধানত চোখ দেখে। ছোট পাখির চোখের আকার হবে বড়। বড় হওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চোখের আকার হবে ছোট। কারণ বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত চোখের বৃত্ত তৈরি হয় না। সেই সঙ্গে নাকের বর্ণ হবে গাঢ়।

বাজরিগারের প্রজনন সময় কাল, ডিম ও বাচ্চাঃ

বনে জঙ্গলে এরা ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। খাঁচাতে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর। প্রজনন উপযোগী হতে সময় লাগে চার মাস। তবে চার থেকে আট মাস বয়সে প্রজনন ক্ষমতা অনেক বেশি। পাখি পালনে যারা বেশি অভিজ্ঞ তাদের মতে আট মাস বয়সের আগে জোড়া তৈরি করা ঠিক না। কম বয়স হলে ডিম-বাচ্চা পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয় না। প্রাথমিক অবস্থায় এরা ৪-৫টি ডিম দেয়। পরে সংখ্যা বেড়ে আট বা তারও বেশি হতে পারে। তবে ১২টি পর্যন্ত ডিম দেওয়ার তথ্য আছে। ডিম থেকে বাচ্চা হতে ১৭-১৮ দিন সময় লাগে। বাচ্চাগুলো উড়তে সক্ষম হয় ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সে।

বাজরিগার লালন পালন নিয়মাবলীঃ

খাঁচা নানান সাইজের পাওয়া যায়, ১৮”২২” সাইজের খাঁচা হচ্ছে পারফেক্ট ২/৪ টি পাখি পালতে পারবেন। সাধারণত ১ জোড়া ব্রিডিং উপযোগী খাঁচার দাম ৩৫০-৪৫০ টাকা। খাঁচার কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে আসলে দাম। প্রথমত দুইজোড়া পাখি দিয়ে শুরু করলে ভালো। দুটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী পাখি নিয়ে দুই জোড়া পাখির বয়স তিন থেকে চারমাসের মধ্যে হলে ভালো। প্রথমত পুরুষ ও স্ত্রী পাখি আলাদা খাঁচায় রাখুন ৪/৫ পর এক খাচায় দিয়ে দিন। খাঁচায় দেওয়ার এক থেকে দুই মাসের মধ্যে হাঁড়ি ঝুলাবেন খাঁচার এক কোণে। বসার লাঠির একপ্রান্ত হাঁড়ির মুখের কাছাকাছি দিবেন আর লাঠিটি নিমের ডাল হলে সবচেয়ে ভালো হয়। খাবারের প্ল্যাস্টিকের / টিনের পাত্র পাওয়া যায়, পানির ফিল্টার পাওয়া যায় বাজারে, কিনে খাঁচায় লাগিয়ে দিন। খেলা ধুলার জন্য ছোট্ট দোলনা বা ছোট আয়না জুলিয়ে দিতে পারেন খাঁচায়।

বাজরিগারের খাবার তালিকাঃ

এদের প্রধান খাবারের তালিকার একটি হচ্ছে চিনা কাউন। তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় থাকবে চিনা-কাউন সমপরিমাণ। সাথে অল্প পরিমাণ সূর্যমুখীর বীজ, তিসি, গুজিতিল, কুসুম ফুলের বীজ ও পোলাওয়ের চালের ধান ইত্যাদি। খাদ্য তালিকায় থাকবে কলমি শাক বা পালন শাক। ধান ও কলমি শাক চর্বি কাটাতে ও প্রজননে সাহায্য করে। কাঁচা মরিচ কুচি কুচি করে গাজরের সাথে দিতে পারেন। ডিম সিদ্ধ করে খেতে দিতে পারেন কুচি কুচি করে। কমলা ফল, আপেল, শীত কালীন সবজি কপি, ব্রকলিও দিতে পারেন। প্রথমত খেতে চাইবে না তবে অভ্যাস করাতে পারলে ভালো। ইটের গুড়াও দিন, কেট ফিস (সামুদ্রিক মাছের খোসা), মিনারেল ব্লক। ছোট পাখি মানে বাচ্চা পাখি না খেলে বা বাবা-মা খাবার না দিলে হেন্ড ফিড করাতে হয়। বাজারে মিক্স হ্যান্ড ফিড পাওয়া যায় চাইলে আপনিও বানাতে পারেন। সিরিজ বা চা চামছ দিয়ে খাবার দিতে পারেন।

প্রজনন সময় কালঃ

শখের বসে যারা বাজরিগার পালন করেন তাদের এই পাখি পালন করতে ধৈর্য লাগবে। প্রথম অবস্থায় ডিম, প্রজনন এই সকল আসা বাদ দিয়ে দেওয়াই ভালো। মনে রাখবেন সময় দিতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও নিরিবিলি পরিবেশ না পেলে এই পাখি প্রজননে যায় না। কোন কোন পাখি ৭-৮ মাসের মধ্যেই প্রজননে চলে যায় আবার কিছু কিছু পাখি ১০-১২ মাস বয়স না হলে প্রজনন শুরু করে না। নিয়মিত খাবার দেওয়া, পানি চেইঞ্জ করা, শাক সবজি ও অন্যান্য ক্যালসিয়াম ঠিক মত দিলে দ্রুত প্রজননে যায়।

  • প্রজনন সময়ঃ বাজরিগার পাখি ৪ মাস বয়স থেকেই প্রজননে সক্ষম কিন্তু ৮-১২ মাসে প্রজনন ক্ষমতা অনেক বেশী।
  • প্রজনন করতে শ্রেষ্ঠ বা সঠিক বয়সঃ পুরুষ ১০+ মাস ও নারী ১১+ মাস
  • ডিমে থেকে বাচ্চা ফুটার সময়ঃ ১৮-২১দিন

 

সতর্কতাঃ

  • লক্ষ রাখুন পাখির খাঁচায় পানি শেষ হয়ে গেছে কিনা।
  • অজানা খাদ্য তালিকা নিজে নিজে তৈরি করবেন না।
  • খাবারের বক্সে খাবার আছে কিনা দেখুন নিয়মিত, চেইঞ্জ করতে হবে কিনা।
  • পাখিকে অযথা বিরক্ত করা থেকে বিরত বিশেষ করে প্রজনন সময় কালে।
  • মাঝে মধ্যে শাক সবজি ও ক্যালসিয়াম দিতে ভুলবেন না।
  • কোন ভাবেই বার বার ডিম দেখার জন্য উঁকি দিবেন না।
  • গরমের দিনে সপ্তাহে ১ বার অথবা অনেক গরম পড়লে পানি স্প্রে করবেন।
  • টিকটিকি ও তেলাপোকা এড়াতে নেপ্তথালিন দিয়ে রাখুন খাঁচার আশে পাশে।

বন্য বাজরিগার পাখির গড় আয়ু ৪-৫ বছর কিন্তু খাঁচায় এর পাখি ১০-১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

ছবি ও তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট, গুগোল এবং ব্লগ।

দৈনিক বগুড়া