মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানবতা বেচে আছে আজও এমন কিছু মানুষের হাত ধরে!

মানবতা বেচে আছে আজও এমন কিছু মানুষের হাত ধরে!

বিশেষ একটি কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এর পাশে একটা চায়ের দোকানে বসে সন্ধায় চা খাচ্ছিলাম, ট্রেন রাত ১১ টায়। পাশে একটা মোটামুটি ভালো খাবার হোটেল ছিল। হঠাৎ চোখ পড়লো হোটেলটির সামনে একটা বাচ্চা ছেলে সামনে দাড়িয়ে এক পলকে তাকিয়ে আছে হোটেলের ভিতরের দিকে। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা দেখছে। খুবই মায়া হতে লাগলো তাকে দেখে কিন্তু আমার কাছে তখন ট্রেনের টিকেট আর সীমিত কিছু টাকা ছাড়া কিছুই ছিলনা যে তাকে দিব।

অনেকটা সময় ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমিও তার দিকে তাকিয়ে। ভাবছিলাম চলে যাবো হঠাৎ দেখলাম ব্যাগ কাধে দুইটা লোক এসে তার পাশে দাঁড়ালো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল বেশ আন্তরিকতার সাথে কিছু বলছে। ছেলেটিকে নিয়ে লোক দুটো হোটেল থেকে তাকে কিছু খাবার নিয়ে খেতে দিল আর কিছু খাবার কিনে ছেলেটিকে নিয়ে হাটা শুরু করলো। কৌতূহল নিয়ে দূর থেকেই এসব দেখছিলাম। এবার আমিও পিছু নিলাম তাদের কারণ ছেলেটিকে নিয়ে যাচ্ছিল কোথায় এটা জানার জন্য। কিছু সময় পরে তারা রেল ষ্টেশনের সামনের কোর্ণারের দিকে চলে গেল আমিও গেলাম পিছু পিছু কারণ এরই মাঝে আবার মনে হচ্ছিল ছেলে ধরা নয় তো। তারা একটা ঘরে (ওইটাকে ঘর বলা যায় না) ঢুকলো আমিও কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছিলাম কি হয় এর পর সেই আগ্রহ নিয়ে। কিছু সময় পর তারা চলে গেল ছেলেটিকে রেখে। তার চলে যাবার পরে আমি ওই পিচ্চিটার সাথে কথা বললাম বেশ আগ্রহ নিয়ে, গিয়ে জানতে পারলাম ছেলেটি ক্লাস ২তে পড়ে। তার মা দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত তার ছোট একটি বোন আছে, বাবা নেই। ছেলেটি রোজ সকালে পেপার বিক্রি করে, তার টাকা দিয়েই চলে সংসার আর মায়ের চিকিৎসা। ওই লোক দুটো ছেলেটিকে খাবার খাইয়ে তার পরিবারের জন্য খাবার এনেছে আর তার মায়ের হাতে কিছু টাকা দিয়ে গেছে। যাবার সময় তাদের নাম ঠিকানা আর ফোন নাম্বার একটা কাগজে লিখে দিয়ে গেছে যেন কখনও কোনো সমস্যায় পড়লে তাদেরকে বলে। জানিনা এসব শুনতে শুনতে কখন যেন চোখের কোনে পানি জমে গেছে। আমিও ওই লোকের নাম ঠিকানা আর নাম্বার নিয়ে নিলাম ওর থেকে।

ঠিকানা থেকে জানতে পারলাম একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র নাম কার্তিক ঘোষ নিরব, এরপর ওখান থেকে আমি আমার গন্তব্যের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। ঢাকায় এসে কর্মব্যাস্ত জীবনে প্রবেশ করে ভুলেই গেছিলাম সে কথা প্রায় এক মাস পর এমনি এক পিচ্চিকে দেখে, মনের অজান্তেই একটা প্রশ্ন দোলা দিতে লাগলো ভিতরে। কে সেই নিরব??

ঠিকানাটা আমার ব্যাগেই ছিলো নাম দিয়ে সার্চ করতে করতে ফেসবুকে খুজে পেলাম তার আইডি। সেখান থেকে জানতে পারলাম তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক। নিজের অজান্তেই কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম কারণ আজকাল ছাত্রলীগের যে অবস্থা এর মাঝেও যেন এক নক্ষত্রকে দেখতে পেলাম। একটু পজেটিভ ধারণা আসতে লাগলো মনে।

অনেককেই বলতে দেখেছি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়ে চলে, কিন্তু সেই আদর্শ ভঙ্গ করে অনেকেই অনেক অনৈতিক কাজ করতে দেখেছি। কিন্তু সেদিন আসলে আমি খুব কাছ থেকে দেখতে পেলাম এমন একজন বঙ্গবন্ধুর সৈনিককে যে শুধু কথায় নয় সত্যিকার অর্থেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ এমনটাই তো হওয়া উচিত। অনেকেই ভাবতে পারেন এতো ছোট একটা বিষয় নিয়ে এতো বড় করে লেখার কি আছে? আসলে গুটি কয়েক ছাত্রলীগ নেতার বা কর্মীর খারাপ কাজের জন্য পুরো একটা সংগঠন খারাপ হবে এটা মানতে নারাজ যার উদাহরণ এই কার্তিক ঘোষ নিরব। এসব বলার কারন হচ্ছে আমরা খারাপকে খারাপ বলি ঠিকি কিন্তু ভালো কে ভালো বলতে আমরা শিখিনি। তাকে নিয়ে লেখার কারন ঠিক নিজেও জানিনা কিন্তু একজন মানবিক মানুষকে নিয়ে একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়াই যায়। ভালো কে ভালো বলাটা আমাদের শেখা উচিত।

আগামীর বাংলাদেশ এগিয়ে যাক আপনাদের হাত ধরেই। দোয়া করি যেন সারা জীবন নিজেকে এমন মানুষের সেবায় নিয়জিত রাখতে পারেন।

লেখা: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

 

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চিরতরে বন্ধ হবে: রেলমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে বগুড়ায় যমুনার পাড়ে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিত
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
বো*মের মতো সিলিন্ডার বি*স্ফোরণ, করণীয় কী
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
স্মার্টফোন থেকে ছবি মুছে গেলে উদ্ধার করবেন যেভাবে
বৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলা
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই