শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে ঐতিহাসিক মা ভবানীর মন্দিরে মাঘী পূর্ণিমা উৎসব

শেরপুরে ঐতিহাসিক মা ভবানীর মন্দিরে মাঘী পূর্ণিমা উৎসব

শেরপুরে মাঘী পূর্ণিমা উৎসব উপলক্ষে ঐতিহাসিক মা ভবানীর মন্দির প্রাঙণে সনাতন ধর্মাবলম্বী হাজার হাজার পূণ্যার্থীদের ঢল নেমেছিল । অতীত জীবনের পাপ মোচনসহ পূন্যলাভের আশায় শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) উপমহাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৫১টি পীঠস্থানের অন্যতম ঐতিহাসিক ওই মন্দিরস্থলে বসেছিল দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা পূণ্যার্থীদের মিলনমেলা। 

দিনটি ঘিরে সকাল থেকেই হাজার হাজার নারী পুরুষ পূণ্য লাভের আশায় মন্দিরস্থলে সমবেত হন এবং শাঁখা পুকুরে পূন্যস্নান করতে থাকেন। সেইসঙ্গে রাত অবদি চলে ঐতিহাসিক এই মন্দিরে রক্ষিত প্রতিমা দর্শন, পূজাঅর্চনা, ভোগদান, অর্ঘদান, মাতৃদর্শন। এসময় মন্দিরের পক্ষ থেকে ভক্তদের মাঝে সার্বক্ষণিক প্রসাদ বিতরণ করা হয়।  

প্রতি বছর মাঘ মাসে পূর্ণিমার চাঁদের মাঘী পূর্ণিমার পঞ্জিকা তিথি অনুযায়ী এই পূন্যস্থানে মাঘী পূর্ণিমা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ধর্মীয় শাস্ত্র্যমতে, মাঘী পূর্ণিমার দিনে এই স্থানে অংশ নিলে তার অতীত জীবনের পাপ মোচনসহ পূন্যলাভ হয়। আর সেই আশায় দেশ বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত নর-নারী ও শিশু কিশোর মন্দিরের শাঁখা পুকুরে স্নান করেন। তবে বৈশি^ক মহামারী করোনার কারণে এবার বিদেশ থেকে তথা ভারত, নেপাল, ভুটানসহ অন্যান্য দেশ থেকে পূর্ণ্যার্থী আসতে পারেনি। এরপরও স্থানীয় জেলা-উপজেলা ছাড়াও  দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধলাখ লোকের সমাগম ঘটে। 

শুক্রবার রাত থেকেই তিথি অনুযায়ি মা ভবানীর মন্দিরে মাঘী পূর্ণিমার উৎসবে যোগ দিতে পূণ্যার্থীরা আসতে থাকেন। এজন্য অসংখ্য দর্শনার্থী মন্দিরের অতিথিশালাসহ আশপাশের এলাকায় আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে রাত্রি যাপন করেন। ঐতিহাসিক মা ভবানী মন্দির পরিচালনা কমিটির আহবায়ক কমিটির সদস্য নিমাই ঘোষ জানান, ৫৮২খিস্ট্রাব্দে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরেই ধর্মীয় তিথি অনুযায়ী মাঘী পূর্ণিমা উৎসব পালন হয়ে আসছে। এই উৎসবে আসা দূর-দূরান্তের পূণ্যার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রতীমা রানী বলেন, মাঘী পূর্ণিমা উৎসবে মন্দিরের শাখা পুকুরে পূণ্যস্নান করলে অতীত জীবনের পাপ মোচন হয়। তাই মায়ের দর্শন নিতে এখানে এসেছি। মনের আশা বাসনা পুরনের জন্য স্নান শেষে মায়ের আর্শিবাদ নিয়েছি। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তমা রানী বলেন, এখানে আসলে দেহ মন পবিত্র হয়। তাই মায়ের মন্দিরে এসেছি। মন বাসনা পুরণ হবে -এমন আশা নিয়ে মায়ের মন্দিরে এসেছি বলে জানান শেরপুর শহরের শীলা ঘোষ, শাহজাদপুরের সুর্বনা দত্ত। একই কথা জানান নাটোরের কল্পনা সাহা, রাজশাহীর চৈতি রায়সহ আরো অনেকে। 

মাঘী পূর্ণিমা উৎসব কমিটির আহবায়ক দিলীপ দেব জানান, অন্যান্য বছরের মতোই সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মাঘী পূর্ণিমা উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। ধর্মীয় এই আচার অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার সুবিধার্থে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলও গঠন করা হয়েছে। তাঁরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। মহামারী করোনার কারণে বিদেশ থেকে পূর্ণ্যার্থীরা আসতে না পারলেও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রায় অর্ধলাখ লোক উৎসবে যোগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। 

দৈনিক বগুড়া