বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবসময় যেসব দোয়া পড়তেন বিশ্বনবি

সবসময় যেসব দোয়া পড়তেন বিশ্বনবি

বিশ্বব্যাপী এক মহাআতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। প্রতিদিন এই মহামারিতে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যু হচ্ছে। যারফলে চিন্তিত গোটা বিশ্ববাসী। তবে আমাদেরকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে বিনীত প্রার্থনা অব্যাহত রাখতে হবে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দোয়ার ওপর অনেক বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। কেননা দোয়াই হচ্ছে সব ইবাদতের মূল। আল্লাহ চান তার বান্দারা যেন তার কাছে প্রার্থনা করে এবং তিনি তাদের চাহিদা পূরণ করবেন।

আমাদের যেকোনো চাওয়া-পাওয়া পূরণ করার ক্ষমতার একক অধিপতি হচ্ছে আল্লাহ তাআলা। তাই মহামারি করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্যও মহান আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করতে হবে। আমাদের প্রার্থনা যে তিনি গ্রহণ করবেন তার প্রতিশ্রুতিও তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-
- وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِىٓ أَسْتَجِبْ لَكُمْ
‘আর তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ৬০)
- ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
‘তোমাদের রবকে ডাকে বিনয়ী হয়ে দীনভাবে এবং চুপে চুপে। অবশ্যই তিনি সীমা অতিক্রমকারীদেরকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৫৫)
- أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوٓءَ
‘কে শোনে পেরেশান ও অশান্ত হৃদয় ব্যক্তির ডাক এবং কে তার মুসীবত দূর করে।’ (সুরা নমল : আয়াত ৬২)
তাই আমাদেরকে উঠতে বসতে একথায় প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া করতে হবে। কেননা দোয়া হচ্ছে ইবাদত।

হজরত নোমান ইবনে বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- ‘দোয়া হচ্ছে ইবাদত।’ (আবু দাউদ ও তিরমিজি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন নিষ্পাপ। তারপরও তিনি সর্বদা দোয়ায় রত থাকতেন। আর তাঁর দোয়া হলো-

- হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় এই দোয়া করতেন-
اَللَّهُمَّ ءَاتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى الْءَاخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আতিনা ফিদ্দুন্‌ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাঁও ওয়াক্বিনা আজাবান্ নার।’ (বুখারি ও মুসলিম)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ ও আখেরাতে কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের আজাব থেকে আমাকে বাঁচাও।

- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণন করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-
اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’ (মুসলিম)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি।

- হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়া করতেন-
الْلَّهُم إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْز و الْكَسَلِ , وَ الْجُبْن وَالْهَرَمِ وَ الْبُخْلِ , و أَعُوْذ بِك مِن عَذَابِ الْقَبْرِ وَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَ الْمَمَاتِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল আযযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল হারামি ওয়াল বুখলি ওয়া আউযু বিকা মিন আযাবিল কাবরি ওয়া আউযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত।’ (মুসলিম)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি তোমার কাছে অক্ষমতা ও আলস্য থেকে, কাপুরুষতা, বার্ধক্য ও কার্পণ্য থেকে। আমি আশ্রয় চাচ্ছি তোমার কাছে কবরের আজাব থেকে এবং আশ্রয় চাচ্ছি তোমার কাছে জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে।

- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি দোয়া হলো-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخَطِكَ
উচ্চরণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন যাওয়ালি নিমাতিকা ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা।’ (মুসলিম)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই তোমার নিয়ামত খতম হওয়া থেকে, তোমার নিরাপত্তার পরিবর্তন, তোমার আকস্মিক আজাব ও তোমার সমস্ত অসন্তুষ্টি থেকে।’

- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ النَّارِ وَعَذَابِ النَّارِ وَمِنْ شَرِّ الْغِنَى وَ الْفَقْرِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন ফিতনাতিন নারি ওয়া আজাবিন নার, ওয়া মিন শাররিল গিনা ওয়াল ফাকর।’ (আবু দাউদ ও তিরমিজি)
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি তোমার কাছে জাহান্নামের বিপর্যয় ও আজাব থেকে এবং প্রাচুর্য ও দারিদ্র্যের অনিষ্ট থেকে।

আসুন, আমরা আমাদের ভুল-ত্রুটি থেকে ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে বিনীত ক্ষমা প্রার্থনা করি। মহামারি করোনা থেকে আত্মরক্ষায় তার দয়ার বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ তাআলাই আমাদের তার দয়ার চাদরে আবৃত করে নিতে পারেন।

দৈনিক বগুড়া