হিমোফিলিয়া একটি বিরল, জিনের দশা। যা রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না। আর এর ফলে প্রচুর রক্তপাত হয়। এমনকি সামান্য আঘাতেও এবং কখনো কোনো আঘাত ছাড়াই ভিতরে রক্তপাত হতে পারে। একে ব্লিডার’স ডিজিজও বলা হয়। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক হিমোফিলিয়া রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে-
হিমোফিলিয়া প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কী কী?
হিমোফিলিয়া স্বাভাবিকভাবে রক্ত তঞ্চনে বাধা দেয়। আঘাত লাগার পর অন্যান্যদের তুলনায় হিমোফিলিয়া রোগীদের দীর্ঘক্ষণ রক্তপাত হতে পারে। যদি তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা না করা হয় তাহলে অত্যধিক রক্তপাতের কারণে অনেক সময় রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
বাইরের রক্তপাতের লক্ষণ
>> মুখে রক্তপাত।
>> সামান্য কেটে গেলেও প্রচুর রক্তপাত।
>> নাক দিয়ে রক্তপাত।
ভিতরের রক্তপাতের লক্ষণ
>> প্রস্রাব ও মলের সঙ্গে রক্ত।
>> শরীরের বড় পেশীর থেকে রক্তপাতের কারণে দীর্ঘ কালশিটে দাগ।
>> কোনো আঘাত ছাড়াই জোড় বা গাঁট থেকে রক্তপাত।
>> সামান্য ধাক্কাতে মস্তিষ্কে রক্তপাত অথবা গুরুতর আঘাত।
কী কারণে হিমোফিলিয়া হয়?
এটা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জিনগত রোগব্যাধি এবং জিন এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীর কীভাবে ব্লাড ক্লটিং ফ্যাক্টার VIII, IX অথবা XI বানাবে সেটা জিনই ঠিক করে দেয়। এক্স ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা উল্লিখিত ফ্যাক্টারের জন্য জিনকে দায়ী করা হয়।
বাবা ও মায়ের থেকে যে কেউ এক্স ক্রোমোজোম পায়। পুরুষদের ক্রোমোজোমের প্যাটার্ন হলো এক্সওয়াই এবং নারীদের হলো এক্সএক্স। সাধারণত ছেলেরা মায়ের থেকে এক্স ক্রোমোজোম এবং বাবার থেকে ওয়াই ক্রোমোজোম পায়। অন্যদিকে মেয়েরা বাবা ও মা উভয়ের কাছ থেকেই এক্স ক্রোমোজোম পায়। অতএব নারীদের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া একটা এক্স ক্রোমোজোম যদি প্রভাবিত হয় ও অপরটা স্বাভাবিক থাকে, তাহলে তিনি ক্যারিয়ার বা বাহক হয়ে যান। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত এক্স ক্রোমোজোমের জন্য রক্ত জমাট বাঁধার ফ্যাক্টার যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদিত হয় না এবং এর পরিণতি হিমোফিলিয়া।
হিমোফিলিয়া দুই ধরনের হয়- হিমোফিলিয়া এ, হিমোফিলিয়া বি।
১। হিমোফিলিয়া এ
>> এর বৈশিষ্ট্য হলো অ্যান্টিহিমোফিলিক গ্লোবুলিনের অভাব।
>> হিমোফিলিয়ার সমস্যায় প্রায় চার-পাঁচটি এই ধরনের অন্তর্গত।
>> এটি বেশি গুরুতর।
>> এ কারণে একটা ছোট ক্ষত থেকেও দীর্ঘক্ষণ ধরে রক্তপাত হতে পারে।
২। হিমোফিলিয়া বি
>> এটা ক্রিসমাস অসুখ নামেও পরিচিত।
>> প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন কম্পোনেন্ট দোষে হয়।
চিকিৎসা
হিমোফিলিয়ার স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নাই। শিরাপথে ইনজেকশনের মাধ্যমে সেই ফ্যাক্টার শরীরে প্রবেশ করানোই মূল চিকিৎসা। রক্তক্ষরণের কারণে অস্থিসন্ধিতে সমস্যা দেখা দিলে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে এবং সাবধানতার সঙ্গে জীবনযাপন করলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
হিমোফিলিয়া রোগীদের বিশেষ কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হয়। শরীরে আঘাত লাগতে পারে এ রকম কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ না করা, মাংসে ইনজেকশন না নেয়া, যেকোনো ধরনের অস্ত্রোপচারের পর রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া, ব্যথানাশক ওষুধ বা রক্ত তরল করে এ রকম ওষুধ না খাওয়া ইত্যাদি।
হিমোফিলিয়ার চিকিৎসা ও ওষুধ বাংলাদেশে সম্ভব হলেও খুব একটা সুলভ নয়। সচেতন হলে এই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায়। তাই হিমোফিলিয়া সম্পর্কে সবার সচেতন থাকা একান্ত জরুরি।
হিমোফিলিয়ার ওয়ার্ল্ড ফেডারেশান, রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ১৭ই এপ্রিলকে 'ওয়ার্ল্ড হিমোফিলিয়া ডে' হিসেবে পালন করে। শিক্ষা, কাউন্সিলিং ও সচেতনতাই হলো মূল লক্ষ্য, যা রোগে ভোগা মানুষদের আরো বেশিদিন সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করে।
দৈনিক বগুড়া