রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

চিয়াংমাই, চাকাপাত জাতের আমে স্বপ্ন বুনছেন বক্কর শেখ

চিয়াংমাই, চাকাপাত জাতের আমে স্বপ্ন বুনছেন বক্কর শেখ

বাজারে যখন আম শেষের পথে, ঠিক সেই সময় বাগানে গাছে গাছে ঝুলে আছে বাহারি জাতের রসালো আম। তবে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের আলতি ব্রুজবারিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর শেখের বাগানের এই আমগুলো বাজারে সুপরিচিত নয়।

সে কারণেই এই আমগুলো নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি। চিয়াংমাই, চাকাপাত, ব্ল্যাক স্টোন, রেড পালমার, মিয়াজাকি, ব্রুনাই কিংসহ বাহারি ও অপরিচিত জাতের সব আম নিয়ে এই বাগান গড়ে তুলেছেন আবু বক্কর শেখ। দুই বছরের মধ্যেই আম বাগানি হিসেবে সফলতা পেয়েছেন তিনি।

প্রায় ৩০ বছর ধরে নার্সারি ব্যবসায় যুক্ত আবু বক্কর শেখ। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই নিজের চার বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন আমের বাগান। দুই বছর আগে লাগানো গাছগুলো থেকে ফলনও পেয়েছেন ভালো। তার প্রায় প্রতিটি গাছে আম ধরেছে ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত।

আবু বক্কর শেখ বলেন, দেশি-বিদেশি জাতের ৬০০ আমগাছ লাগিয়েছিলাম। একেকটি গাছ কিনতে হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। বাগানে সবচেয়ে বেশি আছে থাই জাতের বিভিন্ন আমগাছ। এ বছর আমার প্রতিটি গাছে ২০ কেজি থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত আম হয়েছে। এসব আম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করেছি। বিদেশি আম একটু দেরিতে পাকার কারণে ভালো দাম পাওয়া যায়।

mango

এই আম বাগানি আরও বলেন, ব্যাপক চাহিদার কারণে এই গাছগুলো থেকেই গ্রাফটিং কলমের মাধ্যমে অনেক চারা তৈরি করছি। অনেকেই চারার অর্ডার করেছেন, তাদের কাছে চারা সরবরাহও করেছি। এই আমবাগান করতে খরচ হয়েছিল তিন লাখ টাকা। এ বছর যে ফল হয়েছে, তা বিক্রি করেই আমার মূল টাকা উঠে এসেছে। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে আমবাগান গড়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে।

বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত শহিদুল শেখ বলেন, এ বছর আমাদের বাগানে বিদেশি গাছগুলোতে বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকেই বাগান থেকে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। চাহিদা থাকায় আমরা এরই মধ্যে আট হাজার গ্রাফটিংয়ের চারা তৈরি করেছি। আরও চার থেকে পাঁচ হাজার চারা তৈরি করা হবে।

বক্কর শেখের নার্সারিতে গাছ কিনতে আসা মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা শাকিল মাহমুদ বলেন, আমরা সাধারণত বাড়ির আঙিনা বা আশপাশে শখের বসে বিদেশি আম বা অন্য গাছ লাগাই। অধিকাংশ সময় এসব বিদেশি গাছে ফল হয় না। সেই ঝুঁকির কারণেই ইচ্ছা থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করা হয়নি। বক্কর ভাইয়ের বাগান দেখে মনে হচ্ছে, বিদেশি আমগাছ দিয়েও বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করা সম্ভব। তাই বাগানে এসেছি গাছ সংগ্রহ করতে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, চিয়াংমাই ও চাকাপাত থাইল্যান্ডের বিখ্যাত জাত। এই জাতগুলো দেশের কৃষি উদ্যোক্তা ও গাছপ্রেমীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। আমবাগান করতে আগ্রহী নতুন উদ্যোক্তাদের আমরা এই জাতগুলো নিয়ে বড় পরিসরে বাগান তৈরির পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ, এই জাতগুলোতে লাভ বেশি। এ ধরনের আম নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু দেরিতে হওয়ায় বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। আমরা কৃষি বিভাগ নতুন উদ্যোক্তা ও চাষিদের পোকামাকড় দমনে পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সার্বিক সহায়তা করে যাচ্ছি।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: