শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়া-ইউক্রেনের আঙুর চাষ হচ্ছে কুড়িগ্রামে

রাশিয়া-ইউক্রেনের আঙুর চাষ হচ্ছে কুড়িগ্রামে

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি জাতের লাল রঙের আঙুরের চাষ করে লাভবান হওয়ার আশা করছেন কৃষি উদ্যোক্তা হাসেম আলী। দুই বিঘা জমিতে টানা দেড় বছর পরিশ্রম করে বিদেশি জাতের আঙুরের চাষাবাদ করে ব্যাপক প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। স্থানীয় বাজারে তার চাষ করা আঙুরের চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় অধিক লাভের আশা করছেন হাসেম আলী।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা আজোয়াটারী এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা হাসেম আলী। অনেক স্বপ্ন নিয়ে দুই বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি জাতের আঙুরের চাষাবাদ করেন। টানা দুই বছর আঙ্গুরের পরিচর্যা করে সফলতাও পেয়েছেন তিনি। এখন তার বাগানে ২০০ থেকে ২৫০টি আঙ্গুরের গাছ রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৪০টি আঙুর গাছে ফলন আশায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তার আঙুরের বাগান দেখতে মানুষজন ছুটে আসেন।

dhakapost

হাসেম আলী বলেন, কীভাবে আঙুরের চাষাবাদ করে সেটি ইউটিউবে দেখে আমার এক সহযোদ্ধা ব্যাংক কর্মকর্তা রুহুল আমিন আমাকে সহযোগিতা করেন। তার মাধ্যমেই রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাইকুনর, গ্রীনলং, একেলো, এনজেলিকাসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির উন্নত জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ করে দুই বছর আগে দুই বিঘা জমিতে বড় বড় টবের মাধ্যমে চাষাবাদ করেছি। তবে আঙুরের বাগান দেওয়ায় এলাকার মানুষজন হাসি-তামাশা করতো। অনেকে বলতেন কোনোভাবেই এই মাটিতে আঙুরের চাষ হবে না। তবে কখনো হতাশ হইনি আমি।

তিনি আরও বলেন, গত বছর কয়েকটি গাছে ফলন আশায় আমার কিছুটা বিশ্বাস তৈরি হয় যে, আমার স্বপ্ন পুরণ হতে চলছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে এ বছর প্রায় ৪০টি গাছে থোকায় থোকায় আঙুর ধরায় আমার মন ভরে গেছে। আমিও কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এভাবে গাছে গাছে ফলন আসবে। সব বাধা পেরিয়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে দেড় মণ আঙুর বিক্রি করতে পেরেছি। কয়েকদিনের মধ্যে আরও দেড় মণ আঙুর বিক্রি করতে পারবো। এ পর্যন্ত আঙুর চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা।

dhakapost

তিনি বলেন, দেড় মণ আঙুর ও বিভিন্ন জাতের আঙুরের চারা বিক্রি করে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ টাকা এসেছে। প্রতিদিন শত শত আঙুরের চারা ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পিস বিক্রি করছি। এছাড়া স্থানীয়রাসহ যারা আমার বাগানের আঙুর দেখতে এসেছেন তারাও আঙুর খেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন। আগামী বছর সবগুলো গাছে আঙুর এলে তা ফুলবাড়ী উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, এই কৃষি উদ্যোক্তা হাসেম আলী আবাদি জমিতে আঙুরের চাষাবাদ করে ফুলবাড়ীসহ কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। আবাদি জমি হলেও বেলে-দোঁয়াশ মাটি হওয়ায় আঙুরের ফলন ও খেতে সুস্বাদু হয়েছে। প্রথমবারের মতো ফুলবাড়ী উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ করায় অনেকেই এক নজর দেখার জন্য ছুটছেন ওই  উদ্যোক্তার পাশে। অনেকেই তার কাছে বিভিন্ন জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ করে আঙুরের বাগান করছেন।

dhakapost

কৃষি উদ্যোক্তা হাসেম আলীসহ যে সকল চাষি আঙুরের চাষ করেছেন তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন থেকে বেকার তরুণ-তরুণীরা চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই উদ্যোক্তা হলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও সচ্ছলতা ফিরে আসবে।

দৈনিক বগুড়া