বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জিকিরের পর ক্ষমা চাইলেই কি আল্লাহ মাফ করবেন?

জিকিরের পর ক্ষমা চাইলেই কি আল্লাহ মাফ করবেন?

মুমিন বান্দা কথা ও কাজে আল্লাহর জিকির করে। মসজিদে বসে তাসবিহ হাতে শুধু ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করার নামই জিকির নয়, বরং দুনিয়ার প্রতিটি কাজ শুরু আগে সুন্নাহ পদ্ধতিতে করাই আল্লাহর জিকির। কিন্তু জিকিরের পর ক্ষমা চাইলেই কি আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন? এ ব্যাপারে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন?

জিকিরে আল্লাহর নেয়ামত লাভ হয়। দুনিয়ার সব অনিষ্টতা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। জিকিরের পর ক্ষমা চাইলে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহর জিকির বা তাকে স্মরণ করা- তারই নির্দেশ। যে আল্লাহকে স্মরণ করে আল্লাহও তাকে স্মরণ করেন। আল্লাহ তাআলা বিষয়টি কোরআনের একাধিক আয়াতে এভাবে ঘোষণা দেন-
فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ اَذۡکُرۡکُمۡ
‘অতঃপর তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদের স্মরণ করবো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)
وَ قَالَ رَبُّکُمُ ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِیۡ سَیَدۡخُلُوۡنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیۡنَ
‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা গাফের : আয়াত ৬০)

মানুষ সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতে পারবে। জিকিরের প্রতি মনোযোগী করতে আল্লাহ তাআলা জিকিরের পদ্ধতি উল্লেখ করে ঘোষণা দেন-
الَّذِیۡنَ یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِهِمۡ وَ یَتَفَکَّرُوۡنَ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هٰذَا بَاطِلًا ۚ سُبۡحٰنَکَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এ সব (মানুষসহ সমগ্র সৃষ্টি) নিরর্থক সৃষ্টি করণি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯১)

জিকিরের পর ক্ষমা প্রার্থনা
হাদিসে পাকেও জিকিরের পর যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পেতে এবং কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণের কথা উল্লেখ করেছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বায়হাকি’র এক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিকির ও জিকিরের প্রাপ্তি সম্পর্কিত একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তাহলো-
একদিন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক আরব বেদুইন এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে কোনো একটি ভালো কাজ শিক্ষা দিন-
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তার হাত ধরলেন। আর তাকে এ শব্দগুলো শেখালেন
> سُبْحَانَ الله : সুবহানাল্লাহ
> اَلْحَمْدُ للهِ : আলহামদুলিল্লাহ
> لَا اِلَهَ اِلَّا الله : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
> اَللهُ اَكْبَر : আল্লাহু আকবার।
লোকটির হাত ধরে নবিজি বললেন- এ শব্দগুলো বেশি বেশি পড়বে। লোকটি (নবিজির) এ কথা শুনে চলে গেলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর লোকটি আবারও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে ফিরে আসে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে বললেন- লোকটি কি যেন চিন্তা করছে।
লোকটি ফিরে এসে নবিজির সামনে বসে বললেন-
‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ আপনি যে বাক্যগুলো আমাকে শেখালেন, এ বাক্যগুলো তো আল্লাহর জন্য আর এতে আমার জন্য কী রয়েছে? এগুলো পড়লে আমি কী পাবো?
এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন-
তুমি যখন বলবে, ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ তখন প্রতিটি শব্দের উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি সত্য বলেছ।

তখন জিকিরকারী আল্লাহর কাছে নিজের (কাঙিক্ষত) চাহিদাগুলো (ধারাবাহিকভাবে) তুলে ধরবে-
১. বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ) আল্লাহুম্মাগফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
২. বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْزُقْنِىْ) ‘আল্লাহুম্মার জুক্বনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রিজিক দান করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমাকে ইতিমধ্যে রিজিক দান করেছি।’
৩. বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْحَمْنِىْ) আল্লাহুম্মার হামনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে অনুগ্রহ করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, ইতিমধ্যে তোমার প্রতি রহম করেছি।

জিকিরের পরে বান্দা এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অচিরেই তা দান করবেন বলেই আরব বেদুইনকে ঘোষণা দিয়েছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি জিকির করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার প্রতিটি কাজেই জিকিরের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

দৈনিক বগুড়া