শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেঁচো সারে ভাগ্য বদলেছেন রাজবাড়ির অর্ধশত নারী

কেঁচো সারে ভাগ্য বদলেছেন রাজবাড়ির অর্ধশত নারী

লিলি বেগমের সংসারে অভাব অনটন ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। সংসারের চাকা ঘোরাতে কৃষক স্বামীর অল্প আয়ের পাশাপাশি নিজেই উপার্জনে নামেন। ৭ বছর আগে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন লিলি বেগম। বিশেষ প্রজাতির কেঁচোর সঙ্গে গোবর মিশিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের মাধ্যমে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন লিলি বেগম।

শুধু লিলি বেগম নয়। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের স্বরুপার চক গ্রামের ৫০ জন গ্রামীণ নারী বদলে ফেলেছেন নিজেদের জীবন। ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে তারা হয়েছেন স্বাবলম্বী।

স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তায় সকলে মিলে সমবায় সমিতি গঠন করে পরিবেশবান্ধব এ সার উৎপাদন করে ৫০টি পরিবারের ভাগ্য বদলেছে এই ৫০ জন নারী। শুধু পরিবারের ভাগ্যই বদলায়নি তারা বদলে দিয়েছেন গ্রামের নাম ও অর্থনীতির চাকা। স্বরুপার চক এখন সবার কাছে পরিচিত ভার্মি গ্রাম নামে।

লিলি বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী কৃষি কাজ করেন। তার স্বল্প আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। তাই ৭ বছর আগে কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের দেওয়া একটি রিং দিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। বর্তমানে আমি আটটি রিংয়ে সার উৎপাদন করছি। যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ ও সংসার ভালোই চলছে।

উত্তর স্বরুপার চক কৃষি উৎপাদনমুখী আই পি এম ক্লাব সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আলেয়া বেগম জানান, সমিতিতে গ্রামের নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ১২০ জন সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে ৫০ জন নারী বর্তমানে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। অন্যরাও সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে লাভ হচ্ছে ভালোই। এখন সংসারে নিজের উপার্জিত টাকা খরচ করে সম্মানিত বোধ করছি। সেই সঙ্গে ছেলে মেয়েদের প্রয়োজনে তাদেরও কিছু দিতে পারছি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিউটি আক্তার বলেন, গ্রামের নারীদের সমিতির মাধ্যমে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় স্থানীয় কৃষি অফিস। তারাই রিং ও কেঁচো সরবরাহ করে। বর্তমানে সমিতির ৫০ জন সদস্য নিজ বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করছেন। সবাই লাভবান হচ্ছেন।

নিজে কিছু করবেন ভেবে বাড়িতে গরু-ছাগল পালনের চেষ্টা করছিলেন খোদেজা বেগম। এর মধ্যে তিনি জেনেছেন, উত্তর স্বরুপার চক কৃষি উৎপাদনমুখী আই পি এম ক্লাব সমবায় সমিতির সদস্যদের ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেয় কৃষি অফিস। এরপর তিনি সমিতির সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়ে কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নেন।

খোদেজা বলেন, প্রশিক্ষণ নিয়ে সার উৎপাদন শুরু করি। এখন এ থেকে ভালোই আয় হচ্ছে। এক সময় গরুর গোবর ফেলে দেওয়া হতো। সেই ফেলে দেওয়া গোবরই এখন অর্থ উপার্জনের মাধ্যম।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিসার খোকন উজ্জামান বলেন, সার উৎপাদনের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি অন্যদেরকেও উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করছেন ভার্মি গ্রামের নারীরা। এই গ্রাম থেকে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ২০ টন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করা হয়। প্রতি কেজি সার উৎপাদনে তাদের খরচ ৫ থেকে ৬ টাকা। বিক্রি করেন ১২ থেকে ১৫ টাকা। তাদের উৎপাদিত সার রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে নিয়ে যায় লোকজন। উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করে কৃষি অফিস।

তিনি আরও বলেন, এ সার উৎপাদনে তেমন খরচ নেই। বাড়িতে পালিত গরুর গোবর অথবা সামান্য দামে গোবর কিনেই এ সার উৎপাদন করা যায়। ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটি উর্বর হয়। বিষমুক্ত শাক সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে কেঁচো সার খুবই কার্যকরী। একজন কৃষক এ সার একবার ব্যবহার করলে তিনি নিজ তাগিদেই এ সারের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চিরতরে বন্ধ হবে: রেলমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে বগুড়ায় যমুনার পাড়ে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিত
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
বো*মের মতো সিলিন্ডার বি*স্ফোরণ, করণীয় কী
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
স্মার্টফোন থেকে ছবি মুছে গেলে উদ্ধার করবেন যেভাবে
বৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলা
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই