
সমন্বিত পদ্ধতিতে একই জমিতে চার ফসলের আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার কোলা গ্রামের কৃষক স্বপন আলী। সমন্বিত কৃষি পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটাতে গত দু’বছরে এক জমিতেই দুই ফসল, পরের বছর তিন ফসল আবাদ করে লাভবান হওয়ায় এবছর তিনি চার ফসলের আবাদ করেন। তার জমিতে এখন হলুদ, মরিচ, আদা, ওল, কচুর গাছ একই সঙ্গে বেড়ে উঠছে। এই ফসল থেকে লাভের আশা করছেন কৃষক স্বপন আলী।
কোলা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক স্বপন আলী ১৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে দু’বছর আগে একই জমিতে আদার সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে মরিচের আবাদ করেছিলেন। এক সঙ্গে দুই আবাদে তিনি লাভবান হওয়ায় পরের বছর ৩৩ শতাংশ জমিতে দুই ফসলের সঙ্গে যোগ করেন ওলকচু। এখানেও তিনি লাভবান হন। এ বছর ৭০ শতাংশ জমিতে তিন ফসলের মধ্যে মুখি কচু যোগ করে চার ফসল আবাদ করেছেন। তার জমিতে এখন আদা, মরিচ, ওলকচু ও মুখি কচুর গাছ একই সঙ্গে বেড়ে উঠছে।
কৃষক স্বপন আলী বলেন, একই খরচ ও সময়ে চার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এক সঙ্গে চার ফসল করার সুবিধা হলো, এর মধ্যে কোনো ফসলে লোকসান হলে অন্য ফসল থেকে তা পুষিয়ে নেয়া যায়। উৎপাদনও ভালো পাওয়া যায়। ফলে লোকসানের কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে হলুদ উঠবে, এরপর ওলকচু, তারপর মুখি কচু শেষে থাকবে মরিচ। বর্তমানে তিনি মরিচ, ওল কচু ও মুখি কচু তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করছেন। এগুলোর দাম ভালো হওয়ায় জমি থেকে প্রতি সপ্তাহে টাকা আসতে শুরু করেছে। এবারো ভালো লাভবান হবো। এ বছর তিনি খরচ বাদে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করবেন বলেও জানান।
তার এই ফসল দেখতে জমিতে আসেন অনেকে। একই জমিতে যে একই সঙ্গে চার ফসল ফলানো যায়, তার বাস্তব চিত্র এলাকার চাষিদের মাঝে সাড়া ফেলেছে।
ষোলমারি গ্রামের কৃষক উজির মালিথা এমন করে একই জমিতে সাথী ফসলের চাষ করার জন্য পরামর্শ নিতে এসেছেন কৃষক স্বপন আলীর কাছে।
তিনি জানান, এক সঙ্গে একাধিক ফসল ফলাতে পারলে স্বল্প সময় ও অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়া যাবে। আগামী মৌসুমে আমিও সমন্বিত পদ্ধতিতে একাধিক ফসলের আবাদ শুরু করব।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, কৃষক স্বপন আলীর মতো এভাবে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করলে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি থেকে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। মেহেরপুর জেলার মাটি অত্যন্ত উর্বর। এ মাটিতে সব ধরনের আবাদ করা যায়। এছাড়া এ জেলার কৃষকরা ভালো ফসল ফলাতে অনেক আগ্রহী ও যত্নবান। কৃষকদের আমরা সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছি। এক সঙ্গে চার ফসল আবাদ করলে রোগবালাই কম হয়। আরো সুবিধা হলো একই খরচে চারটি ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে। তাছাড়া একটাতে লোকসান হলে অন্যটি থেকে পুষিয়ে নেওয়া যায়। ফলে চাষির লোকসান হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, জেলায় এ বছর হলুদের আবাদ হয়েছে ২৭৫ হেক্টর জমিতে। এতে ৬ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন হলুদ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া কাচা মরিচের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৯৬৫ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে মোটা টাকা আয় করা সম্ভব।
দৈনিক বগুড়া