সংগৃহীত
কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। যদিও এখনো শৈত্যপ্রবাহ বইছে না, তারপরও হিমেল হাওয়ার দাপটে জনজীবন নাকাল হয়ে পড়েছে। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া শিশিরে ভিজে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও ক্ষেতখামার।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশার ঘনত্ব এবং ঠান্ডা বাতাসে বিশেষ করে চরাঞ্চলগুলিতে শীতের অনুভূতি কয়েকগুণ বেশি।
চরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি
১৬টি নদনদীর তীরবর্তী কুড়িগ্রাম জেলার বিস্তীর্ণ সাড়ে ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় রয়েছে ৪৬৯টি চর। এসব চরে বসবাস করে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ। অধিকাংশ চরই শীতপ্রবণ হওয়ায় শীতের দাপটে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র দই খাওয়ার চর, রাউলিয়া, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চরগুজিমারি, দাগারকুটি, চিলমারীর কড়াই বরিশাল, অষ্টমীর চর, রৌমারীর সুখের বাতি এবং রাজারহাটের চর বিদ্যানন্দসহ অনেক চরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা এখন কয়েকগুণ বেশি অনুভূত হচ্ছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালীর আলগা চরের মেম্বার হোসেন আলী জানান, তার চরে প্রায় ৩ হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে বৃদ্ধ ও শিশুসহ প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন।
বয়স্ক, শিশু এবং দিনমজুর শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে। প্রতিদিনের শ্রমে যাদের সংসার চলে, সেই দিনমজুররা শীতের কারণে কাজ করতে পারছেন না। ফলে তাদের জীবনযুদ্ধে দেখা দিয়েছে নতুন সংকট।
গোয়াইলপুরী চরের ৬৮ বছরের কালু মিয়া জানান, আমরা গরিব মানুষ। ঘরে পরার মতো মোটা কাপড় নাই। রাতে ঘুমাইতে গেলেই ঠান্ডায় শরীর জমে যায়।
একই চরের গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম (৫৬) বলেন, ‘শীতের কাপড়ও পাই না। কেউ খোঁজও নেয় না আমাদের।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, ‘আগামী সাত দিন কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির আশপাশে উঠানামা করতে পারে। ফলে শীতের অনুভূতি আরও বাড়বে।’
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, জেলায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ ২৯ হাজার। এর মধ্যে ৭০ দশমিক ৮ শতাংশই দরিদ্র। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বড় অংশই চরে বাস করে। দুর্গম হওয়ায় এসব চরের খবর অনেকেই রাখেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি। শীতার্ত মানুষের পাশে জেলা প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এদিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ জানান, শীত নিবারণের জন্য ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলায় ৯ উপজেলায় শীতবস্ত্র ক্রয় ও বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ৮০ হাজার কম্বল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, চরাঞ্চলে শীতার্ত মানুষের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের বিশেষ নজর রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন শীতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানোর জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রামের অসহায় চরবাসীর দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। সময়মতো প্রয়োজনীয় সহায়তা না পৌঁছালে তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।



















