শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে স্টার্টআপ, ১২০০ কোটি টাকার তহবিল

৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে স্টার্টআপ, ১২০০ কোটি টাকার তহবিল

সংগৃহীত

অনেক আলোচনার পর দেশের স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর তহবিল জোগানের পথ কিছুটা সহজ করা হলো। এ খাতের অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোর মুনাফার অর্থ দিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা তহবিল গঠন করা হয়েছিল। এখন সেই তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো। আগে সর্বোচ্চ ঋণ পেত ১ কোটি টাকা। 

এ ছাড়া ২১ বছরের বেশি বয়সের উদ্যোক্তারা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ঋণ পেতে ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম বা ঋণমান ব্যবস্থা পরিপালনের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ফলে তহবিল পাওয়াটা সহজ হবে। স্টার্টআপ খাতে অর্থায়ন সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে। এই নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়েছেন এ খাতের একাধিক উদ্যোক্তা। 

২১ বছরের বেশি বয়সী উদ্যোক্তারা ৪ শতাংশ সুদে তহবিল পাবেন। গতকাল এ-সংক্রান্ত নীতিমালা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

স্টার্টআপ খাতের জন্য ২০২১ সালের ২৯ মার্চ দুই ধরনের তহবিল গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল। দ্বিতীয়টি, ৫২টি তফসিলি ব্যাংকের মুনাফার ১ শতাংশ অর্থে গঠিত ব্যাংকগুলোর নিজস্ব স্টার্টআপ তহবিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তফসিলি ব্যাংকের মুনাফার অর্থ দিয়ে তৈরি তহবিলের মোট আকার দাঁড়ায় ৫০৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। দুটি তহবিল মিলিয়ে মোট অর্থের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার বেশি। এরপর তিন বছরে তহবিলে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি জমা হয়। তবে গত বছর পর্যন্ত স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয় ৩৫ কোটি টাকা।

স্টার্টআপ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাবে দেশের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম বাড়াতে পারছে না। অথচ এ জন্য আলাদা তহবিল থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত ঋণ নিতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। কারণ, অর্থায়ন পাওয়ার উপযোগী নীতিমালা ছিল না। এ জন্য গতকাল এ-সংক্রান্ত নীতিমালা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

কারা স্টার্টআপ ও তহবিল পাওয়ার যোগ্য

স্টার্টআপ বলতে এক বা একাধিক উদ্যোক্তার উদ্যোগে গঠিত এমন প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায়িক বা শিল্প উদ্যোগ বা দেশি-বিদেশি যৌথ উদ্যোগকে বোঝাবে, যা সম্ভাবনাময়, বিস্তৃতযোগ্য এবং নতুন ও উদ্ভাবনী কোনো পণ্য উৎপাদন বা সেবায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া নতুন ও বিদ্যমান পণ্য/সেবা/প্রক্রিয়া/প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও অগ্রগতিও স্টার্টআপ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে আগের কোনো ব্যবসা পুনর্গঠন বা বিভাজন করে
গঠিত কোনো উদ্যোগ স্টার্টআপ হিসেবে বিবেচিত হবে না। 

যেসব স্টার্টআপ বাংলাদেশে নিবন্ধিত, তারা এই তহবিল থেকে বিনিয়োগ-সুবিধা নিতে পারবে। স্টার্টআপ হিসেবে যাদের মেয়াদ ১২ বছর বা তার কম, এমন প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল থেকে অর্থসহায়তা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো শিল্প উদ্যোগের সৃজনশীল উদ্যোগ স্টার্টআপ হিসেবে অর্থায়ন পাবে না। তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। উদ্যোক্তাদের কেউ খেলাপি হলে তারা বা তাদের প্রতিষ্ঠান ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবে না। দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংস্থা আয়োজিত স্টার্টআপ বাছাই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মনোনীত বা পুরস্কৃত উদ্যোক্তারা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। 

দুটি তহবিল, সুদ কত 

স্টার্টআপ উদ্যোগের অনুকূলে ঋণ বা বিনিয়োগের পাশাপাশি ইক্যুইটি-সুবিধা দেওয়ার সুযোগও রাখা হয়েছে নীতিমালায়। এ জন্য প্রতিটি ব্যাংকের নিট মুনাফার ১ শতাংশ অর্থ দিয়ে ‘স্টার্টআপ ফান্ড’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। ‘স্টার্টআপ ফান্ড’ থেকে স্টার্টআপ উদ্যোগগুলোয় শুধু ইক্যুইটি বা মূলধন বিনিয়োগ সুবিধা দিতে পারবে। ব্যাংক তাদের নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে এ সুবিধা দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত ৫০০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে পুনঃ অর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করে ব্যাংকঋণ বিতরণ করা যাবে বলেও নীতিমালায় বলা হয়। এই তহবিল ছাড়া স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে নতুন করে কোনো ঋণ বা বিনিয়োগ বিতরণ করা যাবে না। তবে আগের অনুমোদন করা ঋণ বা বিনিয়োগের অর্থছাড় করা যাবে।

অর্থায়ন পদ্ধতি, সীমা কত

স্টার্টআপ তহবিল থেকে শুধু মূলধন বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া যাবে। পাশাপাশি স্টার্টআপগুলোর অর্থায়ন সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠন করবে। এই কোম্পানিতে ব্যাংকগুলো তাদের স্টার্টআপ তহবিলে থাকা অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে জমা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ এই তহবিলের প্রশাসনিক কার্যক্রম করবে। 

কারা কত ঋণ পাবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, দুই বছরের কম বয়সী উদ্যোগে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যাবে। ২ থেকে ৬ বছর বয়সী উদ্যোগে ৫ কোটি টাকা ও ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী উদ্যোগে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যাবে। 

এ ছাড়া মূলধন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং গ্রাহক চাহিদা পূরণে সক্ষম ও কার্যকর উদ্যোগে প্রাথমিক পর্যায়ে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন জোগান দেওয়া যাবে। প্রবৃদ্ধি পর্যায়ে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত গ্রাহক এবং আয় করছে এমন উদ্যোগে ৫ কোটি টাকা মূলধন বিনিয়োগ করা যাবে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও বিস্তৃতিযোগ্য পর্যায়ে আছে, এমন উদ্যোগ প্রাথমিক অর্থায়ন গ্রহণের পর পণ্য বা সেবা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেলে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন বিনিয়োগ করা যাবে। মূলধন বিনিয়োগ নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে চলবে, তা-ও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ: