
সংগৃহীত
ব্যস্ত নাগরিক জীবনে কাজ শেষে ঘরে ফিরতেই শরীর যেন ক্লান্তিতে অচল হয়ে পড়ে। সময় গুনতে থাকি, কখন বিছানায় একটু গা এলিয়ে ঘুমাতে যাব। সারা রাত গাঢ় ঘুমের পর চাঙা হয়ে উঠি পরদিন। রাতের এই গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম কেবল শারীরিক সুস্থতার জন্যই নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত জরুরি। ভালো ঘুম শরীরকে ভেতর থেকে সারায়, মনকে শান্ত করে পরবর্তী দিনের জন্য তৈরি করে। কিন্তু আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস আমাদের ঘুমকে ব্যাহত করছে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা জরুরি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশটির এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হন। অনেকেই ঘুমাতে সমস্যা অনুভব করেন, কেউ আবার মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গিয়ে পুনরায় ঘুমাতে পারেন না। এই সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে যা, তাই হলো স্লিপ হাইজিন বা ঘুমের সঠিক অভ্যাস।
যেভাবে স্লিপ হাইজিন বজায় রাখবেন
স্লিপ হাইজিন হলো এমন কিছু দৈনন্দিন নিয়ম ও পরিবেশগত প্রস্তুতি, যা মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে শরীর পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য সময় ঠিকঠাক করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো, মানসিক শান্তি ও মস্তিষ্কের পুনর্গঠনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। যেভাবে এটা নিশ্চিত করবেন—
১. আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন
একটি নিরিবিলি ও ঠান্ডা কক্ষ আপনাকে ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করবে। ঘরের আলো ও শব্দ নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রয়োজনে ভারী পর্দা, প্রাকৃতিক শব্দ ব্যবহার করতে পারেন। শীতল তাপমাত্রা শরীরকে আরাম দেয়, ফলে ঘুমও আসে দ্রুত। ঘরের তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে ঘুম ভালো হয়। যে বিছানায় ঘুমাবেন, তাতে অন্য কাজ করা বা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। ভালো ঘুমের জন্য শোয়ার ঘরে টিভি না রাখাই শ্রেয়।
২. ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচি বজায় রাখুন
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা জরুরি। এটি আমাদের দেহঘড়িকে স্থির রাখে। অনেকে ভাবেন সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেবেন। এতে সপ্তাহের শেষে ঘুমের ঘাটতি পূরণ হলেও সপ্তাহজুড়ে ক্লান্তি থেকেই যায়। তাই প্রতিদিন নিয়মমাফিক ঘুমই বেশি কার্যকর।
৩. খাদ্যাভ্যাস ও পানীয় নিয়ন্ত্রণ
দুপুরের পর সব ধরনের ক্যাফেইন যেমন চা, কফি, কোমল পানীয় থেকে বিরত থাকুন। চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব নিকোটিন এড়িয়ে চলতে। ভালো ঘুমের জন্য রাতের খাবার শোয়ার তিন ঘণ্টা আগে সেরে ফেলুন।
৪. শোয়ার আগে একটি আরামদায়ক রুটিন গড়ে তুলুন
ভালো ঘুমের জন্য একটি রুটিন থাকা দরকারি, যা শোয়ার আগে অনুশীলন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কিছু আরামদায়ক শান্তিপূর্ণ কাজ করা যেতে পারে। হালকা আলোতে প্রিয় বই পড়তে পারেন। ঘুমানোর আগে উষ্ণ পানিতে গোসল সেরে নিন। দেখবেন আরামবোধ হবে। ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে ধীরে ধীরে নিশ্বাস নেওয়া, স্ট্রেচিং বা মেডিটেশনও করে নিতে পারেন। মনে দুশ্চিন্তা বা অস্থিরতা জাগাতে পারে, এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। মোবাইল বা কম্পিউটার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখুন।
৫. ক্লান্তি কাটাতে পাওয়ার ন্যাপ নিতে পারেন
দীর্ঘ সময়ের জন্য দিনের বেলায় ঘুমালে অনেকের রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হয়। সে ক্ষেত্রে দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের ছোট ‘পাওয়ার ন্যাপ’ গ্রহণ করা যেতে পারে। রাতের ঘুমকে পরিপূর্ণ করতে দিনে যত কম ঘুমাবেন, ততই ভালো।ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে ধীরে ধীরে নিশ্বাস নেওয়া, স্ট্রেচিং বা মেডিটেশনও করে নিতে পারেন
৬. সঙ্গীর সাহায্য নিন
যেকোনো ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে পাশে কাউকে পেলে তা আরও সহজ হয়। সঙ্গীর সঙ্গে একসঙ্গে ঘুমের সময় ঠিক করুন যেন রুটিন মেনে চলা অনেকটাই সহজ হয়ে পড়ে। ঘুমের অভ্যাস ঠিক করে আপনি চাইলেই আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারেন। প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্ত—যেমন রাতের খাবার সময়মতো খাওয়া, ঘুমের আগে স্ক্রিন এড়িয়ে চলা, শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা—এই অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরেই আপনার ঘুমের মানকে বাড়িয়ে তুলবে। আপনার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করবে।
তাই সিদ্ধান্ত নিন আজকে থেকেই। কারণ, এক রাতের আরামদায়ক, নিরবচ্ছিন্ন ঘুম আপনাকে এনে দিতে পারে নতুন উদ্যমে একটি সকাল শুরু করার প্রেরণা।
সূত্র: প্রথম আলো