
সংগৃহীত
সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে নতুন এক পুষ্টিচর্চা ‘ফাইবারম্যাক্সিং’। বাংলাতে যার অর্থ দাঁড়ায় সর্বোচ্চ আঁশে পুষ্টিচর্চা।
মূল ভাবনা হল প্রতিটি খাবারে যতটা সম্ভব বেশি পরিমাণে ‘ফাইবার’ বা আঁশ যুক্ত করা।
যেমন- সকালের নাস্তায় দই আর ডিম খাওয়ার পাশাপাশি ফল, শস্যদানা, বাদাম কিংবা সবজি যুক্ত করে আঁশের পরিমাণ বাড়ানো।
তবে এই ধারা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই পুষ্টিবিদ ক্যাথলিন গার্সিয়া বেনসন ও এলাইজা হুইটেকার।
আঁশ কী এবং কেন জরুরি?
নারীস্বাস্থ্য, খেলোয়াড়দের পুষ্টি এবং পরিপাক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ ক্যাথলিন গার্সিয়া বেনসন বলেন, “আঁশ হল এক ধরনের কার্বোহাইড্রেইট বা শর্করা যা উদ্ভিজ্জ খাবারে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়।”
আঁশ দুই প্রকার— দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয়।
দ্রবণীয় আঁশ পানিতে মিশে জেলের মতো একটি উপাদানে রূপ নেয়, যা অন্ত্রে চর্বির সঙ্গে মিশে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।
অন্যদিকে, অদ্রবণীয় আঁশ মল ভারী করে নিয়মিত বর্জ্য নিষ্কাশনে সহায়তা করে।
‘নরিশড নিউট্রিশন অ্যান্ড ফিটনেস’-এর প্রতিষ্ঠাতা এলাইজা হুইটেকার বলেন, “দ্রবণীয় আঁশ অন্ত্রে গ্যাস্ট্রিক ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা গাঁজন হয়, যার ফলে শরীরে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হয়। এটি শুধু কোলেস্টেরল নয়, বরং হজমশক্তি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।”
তিনি আরও বলেন, “আঁশ ধীর গতিতে হজম হয় বলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে, খাবারের পর রক্তে শর্করার ওঠানামা কমে এবং দিনজুড়ে ক্ষুধার প্রকোপ কমে।”
কোন খাবারে আঁশ বেশি?
সাধারণত ফল, সবজি, শস্য, বাদাম ও বীজ-ধর্মী খাবারে আঁশ থাকে।
দ্রবণীয় আঁশ সমৃদ্ধ খাবার
ওটস, আপেল, কলা, অ্যাভোকাডো, বেরি, লেবু, মটরশুঁটি, বীজ।
অদ্রবণীয় আঁশ সমৃদ্ধ খাবার
গোটা শস্য, চালের কুঁড়া বা গমের ভূষি, বাদাম, ফুলকপি, সেলারি বা ধনেপাতা-ধর্মী এক ধরনের সবজি, খোসাসহ আলু।
যেভাবে শুরু করা যায় ‘ফাইবারম্যাক্সিং’
ক্যাথলিন গার্সিয়া বেনসন ব্যাখ্যা করেন, “ফাইবারম্যাক্সিং’ মানে দৈনন্দিন আঁশ গ্রহণের সুপারিশকৃত মাত্রা পূরণ করা বা অতিক্রম করা। এটি খাদ্য কিংবা আঁশ সাপ্লিমেন্ট দিয়েও করা যেতে পারে।”
সকালের নাস্তায় যদি থাকে দই ও ডিম, তাহলে তাতে গোটা শস্যের খাবার বেরি-ধর্মী ফল ও সবজি যোগ করে আঁশের মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে।
দুপুরের সালাদে কেবল শাকসবজি নয় বরং কুচানো বাদাম, অ্যাভোকাডো কিংবা রান্না করা গোটা শস্যও যোগ করা যেতে পারে।
‘ফাইবারম্যাক্সিং’ বা সর্বোচ্চ আঁশচর্চার সহজ কিছু উপায় হল- ফল বা সবজির খোসা ফেলে না দিয়ে খাওয়া, রসের বদলে গোটা ফল দিয়ে স্মুদি তৈরি, চিপস ধর্মী মচমচে খাবারের বদলে সবজি ও আঁশযুক্ত নাশতা বা খাবার অন্তর্ভুক্ত করা প্রতিটি নাস্তা ও খাবারকে আঁশযুক্ত করা যায়।
যদি আঁশযুক্ত খাবারে অনীহা থাকে, তবে আঁশ সাপ্লিমেন্ট নিয়েও শুরু করা যায়।
কতটুকু আঁশ দরকার?
এলাইজা হুইটেকার বলেন, “দ্য ডায়েটারি গাইডলাইন্স ফর আমেরিকানস’ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক কমপক্ষে ২৫ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করা উচিত, যা বয়স ও লিঙ্গভেদে ৩৮ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।”
অথচ অধিকাংশ মানুষই এই মাত্রা পূরণ করতে পারেন না। তবে আঁশ গ্রহণ বাড়াতে গেলে ধীরে ধীরে সেটা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “শরীর আঁশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময় নেয়। তাই ধাপে ধাপে পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। প্রথমে দিনে একটি খাবারে ‘ফাইবারম্যাক্সিং’ করে শুরু করতে হবে, পরে ধীরে ধীরে বাড়ানো ভালো।”
অতিরিক্ত আঁশের ক্ষতি?
অতিরিক্ত আঁশ খাওয়া বা হঠাৎ করে আঁশ বাড়ালে হজমে সমস্যা হতে পারে। গ্যাস্ট্রিক, পেট ব্যথা, ফোলাভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া। পর্যাপ্ত পানি না খেলে অন্ত্রে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া আঁশের বেশি উপস্থিতি কিছু ভিটামিন বা খনিজ শোষণও বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
সেক্ষেত্রে হুইটেকার পরামর্শ দেন, “আঁশ বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। কোনো ব্যক্তির ওজন যদি ১৫০ পাউন্ড হয়, তবে প্রতিদিন ৭৫ আউন্স পানি পান করতে হবে।”
সূত্র: bdnews24