রোববার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্বাস্থ টিপস

কালো চায়ের স্বাস্থ্যগুণ

কালো চায়ের স্বাস্থ্যগুণ

সংগৃহীত

চা মানেই যেন বাঙালির আত্মার আত্মীয়। সকালের শুরু হোক বা ক্লান্ত বিকেল, এক কাপ চা যেন নতুন করে জেগে ওঠার ডাক দেয়। নানা ধরণের চায়ের ভিড়ে কালো চায়ের আলাদা কদর রয়েছে। শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যগুণেও কালো চা অনন্য।

সম্প্রতি রিয়েল সিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও মামাস্তে নিউট্রিশন-এর প্রতিষ্ঠাতা জেমি অ্যাডামস এবং নিউ ইয়র্কভিত্তিক পুষ্টি পরামর্শক ও সামিনা কাল্লু নিউট্রিশন -এর প্রতিষ্ঠাতা সামিনা কাল্লু কালো চায়ের ছয়টি স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে নানান মত দিয়েছেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

কালো চায়ের পাতা প্রক্রিয়াজাত করার সময় যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি হয়, তা শরীরের কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র‍্যাডিক্যাল কমিয়ে শরীরে প্রদাহ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

সামিনা কাল্লু জানান, “চা পাতার অক্সিডাইজড প্রক্রিয়ার ফলেই এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সৃষ্টি হয়।”

২০২৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব খাবারে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। ফ্ল্যাভোনয়েড হলো একধরনের প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ, যা বিভিন্ন ফল, সবজি, চা, এবং অন্যান্য উদ্ভিজ্জ খাবারে পাওয়া যায় যেমন কালো চা। এই চা নিয়মিত খেলে ক্যানসারসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি ৬ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

মনোযোগ ও মানসিক সতর্কতা বাড়ায়

প্রতিদিন সকাল শুরু করতে অনেকেই এক কাপ কালো চায়ের খোঁজ করেন। এতে থাকা ক্যাফেইন ও এল-থিয়ানিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড মনোযোগ ও মানসিক স্পষ্টতা বাড়াতে সহায়ক।

জেমি অ্যাডামস বলেন, “কালো চায়ের এই দুই উপাদান একসঙ্গে কাজ করে মানসিক কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং মনোসংযোগ উন্নত করে।”

সাম্প্রতিক গবেষণাও এ কথা সমর্থন করে যে, এল-থিয়ানিন ক্যাফেইনের সাথে একত্রে কাজ করে মানসিক চাপ কমায় এবং স্পষ্ট চিন্তাভাবনায় সহায়তা করে।

হৃদ্‌যন্ত্রের যত্নে সহায়ক

সামিনা কাল্লুর মতে, “দিনে মাত্র দুই কাপ কালো চা খেলেই শরীরে ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিগ্রাম ফ্ল্যাভান-থ্রি-অলস পাওয়া যায়, যা হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। ফ্ল্যাভান-থ্রি-অলস হলো এক ধরনের উদ্ভিজ্জ যৌগ বা পলিফেনল, যা সাধারণত চা, আপেল, বেরি, কোকো এবং অন্যান্য উদ্ভিজ্জ খাবারে পাওয়া যায়।

কালো চায়ের পলিফেনল উপাদান কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তচাপও সঠিক মাত্রায় রাখে। জেমি অ্যাডামস বলেন, “বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কালো চা নিয়মিত খেলে সিসটোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।“

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আছে কিংবা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য কালো চা হতে পারে একটি প্রাকৃতিক সহায়ক।

জেমি অ্যাডামস বলেন, “কালো চায়ের নিয়মিত গ্রহণ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।”

সামিনা কাল্লু আরও জানান, “গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে, কালো চা খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়।“

পরিপাকতন্ত্রের যত্ন নেয়

২০২৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কালো চা পান করলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে এবং পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে।

স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের ফলেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়। এমনকি ভালো ঘুম ও হরমোনের ভারসাম্যও রক্ষা পায়। কাজেই, নিয়মিত কালো চা পান করা মানেই শুধু হজমশক্তিই বাড়ানো নয়, বরং সামগ্রিক সুস্থতায় একধাপ এগিয়ে যাওয়া।

শরীরকে হাইড্রেট রাখে

বিভ্রান্তি থাকলেও বাস্তবতা হলো মাঝারি পরিমাণে কালো চা পান করলে তা শরীরের পানির চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।

সামিনা কাল্লু বলেন, “ক্যাফেইনযুক্ত হলেও চা শরীরকে ডিহাইড্রেট করে না, বরং পানি যোগ করে। দিনে আট কাপ পর্যন্ত চা পান করলে হাইড্রেশনের কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।”

তবে অতিরিক্ত কালো চা পান করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। কারণ, খুব বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করলে অনিদ্রা বা হৃদ্‌কম্পনের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

জেমি অ্যাডামস জানান, “প্রতি কাপ কালো চায়ে প্রায় ৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে এবং দিনে ৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণ নিরাপদ।“

তবে একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আর তা হলো চায়ে চিনি মেশালে এর উপকারিতা অনেকটাই হ্রাস পায়। কারণ, চিনি শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে ও পানি শোষণ করে নেয়। তাই চা খাওয়ার সময় যতটা সম্ভব চিনি পরিহার করাই ভালো।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ: