
সংগৃহীত
কয়েক শ কোটি ডলার ব্যয়ে নীল নদে বাঁধ নির্মাণ করেছে ইথিওপিয়া। আগামী সেপ্টেম্বরে বাঁধটি উদ্বোধন করা হবে। গত বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে এ তথ্য জানিয়েছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ।
ইথিওপিয়া এই বাঁধের নাম দিয়েছে গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ ড্যাম বা সংক্ষেপে জিইআরডি। শুরু থেকে এই বাঁধ নির্মাণের আপত্তি ও সমালোচনা করে এসেছে নীল নদের ভাটির দুই দেশ মিসর ও সুদান।
দেশ দুটিকে বাঁধ নিয়ে আপত্তি না জানিয়ে একে যৌথ সুযোগ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে আবি আহমেদ পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘ভাটিতে থাকা দুই প্রতিবেশী দেশ মিসর ও সুদানের জন্য আমাদের স্পষ্ট বার্তা হলো—এই বাঁধ হুমকি নয় বরং সবার জন্য একটি সুযোগ। এখান যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ও যে উন্নয়ন ঘটবে সেটা শুধু ইথিওপিয়ারই অগ্রগতি বয়ে আনবে না।’
মিসরে এমনিতেই পানির তীব্র সংকট চলছে। দেশটির যে পানির প্রয়োজন তার ৯৭ শতাংশ আসে নীল নদ থেকে। এর মধ্যে উজানে বাঁধ নির্মাণকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে দেশটি।
তবে মিসর ও সুদানের উদ্বেগের জায়গা হলো এই বাঁধের কারণে তারা নীল নদ থেকে প্রয়োজনীয় পানির প্রবাহ পাবে না। এই নদের পানি তাদের দেশের জীবন ও জীবিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বাঁধের কারণে তা হুমকির মুখে পড়বে। এই বাঁধটি নিয়ে ইথিওপিয়ার সঙ্গে মিসর ও সুদানের একটি যৌথ সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মিসরে এমনিতেই পানির তীব্র সংকট চলছে। দেশটির যে পানির প্রয়োজন তার ৯৭ শতাংশ আসে নীল নদ থেকে। এর মধ্যে উজানে বাঁধ নির্মাণকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে দেশটি।
চলতি বছর বিশ্বব্যাংকের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ইথিওপিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন। দেশটির সরকার বলছে, এই বাঁধ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইথিওপিয়ার উত্তর–পশ্চিমে নীল নদের ওপর ২০১১ সালে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মিসর সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে এই বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। একে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাঁধটি প্রায় এক কিলোমিটার প্রশস্ত। উচ্চতা ৪৭৫ ফুট।
বাঁধটির সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ৭ হাজার ৪০০ কোটি কিউবিক মিটার। এখান থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ইথিওপিয়ার বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সক্ষমতা তার দ্বিগুণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এই বাঁধ থেকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো এই বাঁধ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে দেশটি।
পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। আফ্রিকার দ্বিতীয় ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ইথিওপিয়া। দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও সবার ঘরে বিদ্যুৎ নেই। চলতি বছর বিশ্বব্যাংকের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ইথিওপিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন। দেশটির সরকার বলছে, এই বাঁধ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তবে বাঁধটি নিয়ে আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহেই বৈঠক করেছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও সুদানের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান জেনারেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। বৈঠকে তাঁরা ‘নীল নদ অববাহিকায় একতরফা যেকোনো উদ্যোগের বিরুদ্ধে তাদের জোরালো অবস্থান’ তুলে ধরেন। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সূত্র: প্রথম আলো