
সংগৃহীত
অদ্ভুত বিতর্কে জড়িয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। বিতর্কটা কিছুটা অনর্থকও। অবস্থা সামাল দিতে রাতারাতি রাশ টানতে চেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড’। জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে যে নির্দেশিকা জারি হয়েছে, তা নিছকই সতর্কবাণী। কাউকে কোনো খাবার খেতে বা না খেতে ফরমান জারি করা হয়নি।
বিতর্কের কেন্দ্রে শিঙাড়া ও জিলাপির মতো কিছু জনপ্রিয় খাবার। সম্প্রতি ‘অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড’ জানিয়েছে, শিঙাড়া, জিলাপি, লাড্ডু, পকোড়া বা নানা রকমের তেলেভাজা ও মিষ্টি খাবারে কতটা চিনি, কী পরিমান তেল, ক্যালোরির পরিমাণ কতটা, ট্রান্স–ফ্যাটই বা কতটা রয়েছে, তা ক্রেতাকে জানাতে হবে। বিক্রির সময় দোকানে সেই তালিকা টাঙিয়ে রাখতে হবে, যাতে ক্রেতা সচেতন হতে পারেন।
তুলকালাম বেধে গেছে ওই নির্দেশিকা ঘিরে। শুরু হয়েছে রাজনীতি। উঠে গেছে এমন কথাও যে মোদি সরকার এবার ঠিক করে দিতে চলেছে কে কোন খাবার খাবেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন ধরেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। বিদেশি বিতাড়নের নামে ভারতীয় বাংলাভাষীদের ধরপাকড় ও ‘পুশ ব্যাক’ করার বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলনে নামিয়েছেন তাঁর দলকে। ওই নির্দেশিকার পরপরই তিনি মঙ্গলবার ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লেখেন, ‘শোনা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নাকি নির্দেশ দিয়েছে শিঙাড়া, জিলাপি খাওয়া যাবে না। এটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞপ্তি নয়। এই বিজ্ঞপ্তি কার্যকরও করা হবে না। শিঙাড়া, জিলাপি খেতে মানুষ ভালবাসে। মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়।’
নির্দেশিকাটি আসলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তবের লেখা একটি চিঠি। সেটি অনেকটা সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য নিয়ে সতর্কীকরণের মতো এক বার্তা। তাতে এটুকুই বোঝানো হয়েছে, স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিসের ক্যানটিন, ক্যাফেটেরিয়া বা বিভিন্ন খাবারের দোকানে শিঙাড়া ও জিলাপির মতো মুখরোচক নানা খাবার ও স্ন্যাক্সে কতটা তেল, ঘি, ক্যালোরি, ট্রান্স–ফ্যাট রয়েছে তা জানাতে হবে। স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি করা এর উদ্দেশ্য হলেও রাজনীতির রঙে তা অন্য ধরনের বিতর্ক তুলে দেয়। যার ফলে রাতেই সরকার ও বিজেপির পক্ষে ব্যাখ্যা জারি করে বলা হয়, এটি কোনো ফতোয়া নয়, এটা নিছক একটি সতর্কীকরণ বার্তা, যা মানুষকে সচেতন করার জন্য জারি করা হয়েছে। বিজেপির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রধান অমিত মালব্যও ‘এক্স’ হ্যান্ডলে জানান, শিঙাড়া ও জিলাপি খাওয়া যাবে না—এমন কোনো নির্দেশিকা কেউ জারি করেনি।
মাত্র চার মাস আগে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীকে ১০ শতাংশ তেল কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মাসিক রেডিও অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’–এ তিনি বলেছিলেন, মাত্র ১০ শতাংশ তেল কম খেলে স্বাস্থ্য ভালো হবে। মেদ কমবে। মোটা হওয়ার ধাত বেড়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, এর ফলে নানারকম সমস্যা বাড়ছে। অসুখবিসুখ হামাগুড়ি দিচ্ছে। প্রতি আটজন মানুষের মধ্যে একজন ওবেসিটি বা স্থূলতাজনিত সমস্যায় পড়ছেন। ১০ শতাংশ তেল কম খাওয়া অভ্যাস করলে দেশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যাবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের ৪৫ কোটি মানুষ অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতার শিকার হবেন।
কেন্দ্রীয় নির্দেশিকাটি প্রধানমন্ত্রীর ওই চিন্তারই ফল। মহারাষ্ট্রের নাগপুরের কার্ডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার সভাপতি অমর আমালে এই উদ্যোগ ‘জরুরি’ জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, এটা সিগারেট নিয়ে সতর্কীকরণের মতোই। খাবারে তেল, চিনি ও ফ্যাটের পরিমাণ জানা জরুরি। এগুলোই আজকের তামাক। নাগপুরের ‘এইমস’ ইতিমধ্যে তাদের ক্যাম্পাসের ক্যানটিনে এই সতর্কবাণী চালু করতে চলেছে বলে জানিয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো