বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ত্বক উজ্জ্বল করে পিচ ফল

ত্বক উজ্জ্বল করে পিচ ফল

সংগৃহীত

পিচ (Prunus persica) তারিম বেসিন এবং কুনলুন পর্বতমালার উত্তর ঢালু অঞ্চলের মধ্যবর্তী উত্তরপশ্চিম চীনা অঞ্চলের একটি পাতলা গাছ, যা এখানে প্রথম চাষ করা হয়েছিল। এর জন্মস্থান উত্তর চীন হিসেবে বিবেচিত হয়। পিচ ফলটি শীতপ্রধান এলাকায় ভালো জন্মে। ইংরেজি নাম Peach, এই নামেই এ দেশেও পরিচিত হয়ে উঠেছে। 

পিচ গাছ মাঝারি আকারের বৃক্ষ, পাতা অনেকটা ডালিম পাতার মতো দেখতে। পাতার গোড়ায় অনেক ছোট ছোট পাতা থাকে। ফুলের রং লাল বা গোলাপি। ফল দেখতে ডিম্বাকার তবে মুখটা আমের মতো বাঁকানো ও সুচালো। কাঁচা ফলের রং সবুজ পাকলে হালকা হলুদের ওপর লাল আভা সৃষ্টি হয়। কাঁচা ফল শক্ত, খোসা খসখসে। কিন্তু পাকলে নরম হয়ে যায় ও টিপ দিলে সহজে ভেঙে যায়। পাকা ফলের রসালো শাঁস হালকা হলুদ ও ভেতরের দিকে লাল, শাঁসের স্বাদ টক। ফলের মধ্যে খয়েরি রঙের একটা শক্ত বিচি থাকে। 

পুষ্টি উপাদান:

পিচ মানেই নানা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এক ফল। ভিটামিন ‘এ’, বেটা-ক্যারোটিন আর ভিটামিন ‘সি’র (অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড) শক্তিশালী উৎস এটি। আরো আছে ভিটামিন ‘ই’ (আলফা-টকোফেরল), ভিটামিন ‘কে’ (ফাইলোকুইনান), থিয়ামিন, রিবোফ্ল্যাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি-৬, ফোলেট আর প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড। এসবের সঙ্গে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ম্যাংগানিজ, ফসফরাস, জিংক আর কপারের মতো খনিজও মিলবে।

পিচ ফলে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যেগুলো স্তন ক্যান্সারের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। এগুলো স্তন ক্যান্সারের কোষগুলো ছড়াতেও বাধা দেয় বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ও টেক্সাস অ্যান্ড এম-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, এ ফলের উপাদানগুলো হতে পারে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য খুবই দরকারি। এটি ক্যান্সারের কোষগুলো ছড়ানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।  এক কেজি ফল থেকে প্রায় ৪৭০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। 

পিচ ফলের উপকারিতা:

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট: পিচের ত্বক বা ভেতরের মাংসল অংশে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এদের রক্ষায় আবার ক্লোরোজেনিক এসিডও আছে এই ফলে। অক্সিজেন গ্রহণের সঙ্গে দেহে আসা বিষাক্ত উপাদানগুলো সামলে নিতে রয়েছে লুটেইন, জিয়াজানথিন আর বেটা-ক্রাইটোজানথিনের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।

হাইপোক্যালেমিয়া: দেহের স্নায়বিক আর কোষের কার্যক্রম ঠিকঠাকমতো চলতে দরকার পটাসিয়াম। পিচে এই উপাদানের কমতি নাই। কাজেই সুষ্ঠু বিপাকক্রিয়া, কার্বোহাইড্রেটের যথাযথ ব্যবহার, ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা এবং পেশির টিস্যুর দেখভালে পিচ ভূমিকা রাখে।

ক্যানসার: এই ফলের ফেনোলিক আর ক্যারোটেনয়েড উপাদান রয়েছে। এগুলো টিউমার ও ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। স্তন, ফুসফুস, কোলনসহ আরো কয়েক ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে পিচ।

ত্বক: ভিটামিন ‘সি’ থাকায় ত্বক উজ্জ্বল করে এই ফল। দেহের বিষাক্ত উপাদানগুলো বের করে দিতেও খুবই কাজের এই ভিটামিন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করে পিচের জিয়াজানথিন আর লুটেইন।

গর্ভাবস্থা: হবু মায়ের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পিচ খুবই উপকারী। শিশুর হাড়, দাঁত, ত্বক, পেশি আর রক্তবাহী শিরা-উপশিরার স্বাস্থ্যকর গঠনে ভূমিকা রাখে ভিটামিন ‘সি’। দেহকে আয়রন শুষে নিতে সহায়তা করে পিচ। আর তা গর্ভাবস্থায় খুবই জরুরি। এর পটাসিয়াম পেশির অনাকাঙ্ক্ষিত সংকোচন প্রতিরোধ করে।

স্নায়ুতন্ত্র: পিচের ম্যাগনেসিয়াম আপনার মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা প্রশমিত করতে পারে। এই খনিজ দেহের স্নায়বিক ব্যবস্থাকে স্থিত রাখে। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব কেন্দ্রীয় স্নায়বিক ব্যবস্থাকে এলোমেলো করে দেয়। পেশি ও স্নায়ুতে অস্থির অবস্থা বিরাজ করে।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

সর্বশেষ: