রোববার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঘরের যেসব সামগ্রীতে ধুলা জমে বেশি

ঘরের যেসব সামগ্রীতে ধুলা জমে বেশি

সংগৃহীত

ধুলা মানে শুধু অস্বস্তি নয়, বরং স্বাস্থ্যঝুঁকিও। যতই ঘর ঝাড়া মোছা হোক না কেন, ধুলার হাত থেকে নিস্তার নেই।

কারণ, ধুলা আসলে একরকম অদৃশ্য শত্রু। যেটা গঠিত হয় মৃত ত্বকের কোষ, কাপড়ের ছেঁড়া তন্তু, চুল, পোষা প্রাণীর লোম, ধুলিকণা, ধুলাবালির অণু ও অন্যান্য ক্ষুদ্র বস্তুকণার মিশ্রণে।

গবেষণা বলছে, একজন মানুষ বছরে গড়ে এক পাউন্ডেরও বেশি মৃত চামড়ার কোষ ঝরায়, যা শেষ পর্যন্ত ধুলাতেই পরিণত হয়।

তবে সমস্যা শুধু মেঝে বা জানালার কার্নিশে নয় ঘরের কিছু সামগ্রীতেও জমে ধুলা। আর ঘরের এই সামগ্রীগুলোই আসলে ধুরা জমার ‘হটস্পট’।

পর্দা ও সাজসজ্জার কাপড়

মার্কিন অন্দরসজ্জা বিশেষজ্ঞ এরিকা লি প্রথমেই- ঘরের জানালায় ঝুলে থাকা ভারী পর্দাগুলোর দিকে নজর দিতে পরামর্শ দেন।

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “দেখতে যতই আকর্ষণীয় হোক, পর্দা ধুলার সবচেয়ে বড় আস্তানা। কারণ, বাতাস চলাচলের সময় ধুলিকণা এসে আটকে যায় এই কাপড়গুলোতে। বিশেষ করে মখমলের মতো ভারী কাপড়ে পোষা প্রাণীর লোম, ধুলাবালি, এমনকি অ্যালার্জেনও আটকে থাকে বেশি।”

পর্দা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে তা হতে পারে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি বা ত্বকের জ্বালাভাবের কারণ।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, অ্যালার্জি থাকলে প্রতি মাসে অন্তত একবার পর্দা ধোয়া উচিত। সাধারণ অবস্থায়ও অন্তত দুই মাসে একবার পরিষ্কার করা দরকার।

কৃত্রিম গাছপালা বা ‘ফেইক প্ল্যান্ট’

কৃত্রিম গাছের পেছনে আগ্রহের কারণ হল এতে কোনো যত্ন করা লাগে না। তবে বাস্তবে এগুলো ধুলা জমার দারুণ ক্ষেত্র তৈরি করে।

কারণ, এগুলো পানি দিয়ে ধোয়ার সুযোগ নেই। ফলে দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে ধুলা ও ময়লা স্তরে স্তরে জমে যায়।

প্রতিমাসে একবার শুকনা মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে কৃত্রিম পাতাগুলো মুছে নেওয়া উচিত। চাইলে স্মার্টফোনে রিমাইন্ডার সেট করে রাখা যায়, যেন ভুল না হয়। পরিষ্কারে ভুল হলে ময়লার আস্তরণ শ্বাস কষ্টের কারণও হতে পারে।

থ্রো পিলো বা সাজসজ্জার বালিশ

বিছানার চাদর বা বালিশের কাভার নিয়মিত ধোয়া হয়। তবে সোফার ওপর থাকা থ্রো পিলো বা সাজসজ্জার বালিশগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।

লি বলেন, “যদিও এগুলোর ওপর তেমন সময় কাটানো হয় না, তবুও এগুলো ধুলা জমার ঝুঁকি বহন করে।”

প্রতি মাসে অন্তত একবার এগুলো ‘ভ্যাকুয়াম’ করা, ধুলামুক্ত করা ও প্রয়োজনে কাভার ধুয়ে ফেলা উচিত। এতে ধুলা, জীবাণু ও অ্যালার্জেন কমবে এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে বালিশও।

বই

বই শুধু জ্ঞান বা বিনোদনের উৎস নয়। এগুলোও ধুলা জমার স্পর্শকাতর স্থান। কাগজ, কাপড় ও জৈব উপাদানে তৈরি বইয়ে সহজেই ধুলা জমে এবং সময়ের সঙ্গে সেগুলোতে দাগ পড়ে যেতে পারে।

এমনকি স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বইয়ে ছত্রাক বা ফাঙ্গাসও জন্ম নিতে পারে।

বইয়ের তাক বা শেলফ মাসে অন্তত একবার পরিষ্কার করতে হবে এবং বইগুলো আলতো করে ব্রাশ বা মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে।

বই যেখানে রাখা হয়, সেই স্থানটিও যেন শুকনা ও বাতাস চলাচলযোগ্য থাকে, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

ল্যাম্পশেইড

বিশেষ করে ভাঁজযুক্ত বা ‘প্লিটেড’ ল্যাম্পশেইড ধুলা জমার আদর্শ জায়গা। কাপড় বা কাগজের তৈরি শেইডগুলো খুব সহজেই ধুলা শোষণ করে। আর এই ধুলা শুধু দৃষ্টিকটু নয়, বরং ঘরের বাতাসকেও দূষিত করে।

ল্যাম্পশেইড পরিষ্কার করতে ছোট ব্রাশ বা রং করার ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে করে ভাঁজের ফাঁকেও ভালোভাবে ধুলা তোলা যায়। নিয়মিত পরিষ্কারের অভ্যাসে বাতি ও শেইড দুটাই থাকবে নতুনের মতো।

ওয়াল হ্যাংগিং বা ট্যাপেস্ট্রি

বাংলাদেশে এখন দেয়ালের সাজসজ্জায় ট্যাপেস্ট্রির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে অনেকেই জানেন না যে এগুলো ধুলা জমার অন্যতম মাধ্যম।

কাপড় বা সুতিতে তৈরি এই ওয়াল হ্যাংগিংগুলোর ভাঁজ ও সূক্ষ্ম জায়গাগুলোতে ধুলা জমে, যা সহজে চোখে পড়ে না।

প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার শুকনা কাপড় বা ব্রাশ দিয়ে এগুলো পরিষ্কার করা উচিত। ভেজা কাপড় ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এতে স্যাঁতসেঁতে-ভাব থেকে ছত্রাক জন্ম নিতে পারে।

বেত ও চটের উইকার বাস্কেট

বেত ও চটের তৈরি উইকার বাস্কেটগুলো দেখতে যেমন নান্দনিক তেমনি কাজে লাগে নানান জিনিস রাখার জন্য। তবে এর বুননের ফাঁকে ফাঁকে ধুলা আটকে থাকা খুবই সাধারণ বিষয়। আর অনেক সময়ই এটি উপেক্ষা করা হয়, যা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।

মাসে একবার মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে বাস্কেটগুলো ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে ছোট ব্রাশ দিয়ে খুঁটিনাটি জায়গাও পরিষ্কার করতে হবে।

ধুলা শুধু গৃহসজ্জার শত্রু নয়, এটি অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের সমস্যা এমনকি চোখে জ্বালারও কারণ হতে পারে।

তাই ঘর পরিষ্কার করার সময় শুধু মেঝে বা জানালার পাশে মনোযোগ না দিয়ে ছোট ছোট সামগ্রীগুলোতেও নজর দেওয়া জরুরি।

সূত্র: bdnews24

সর্বশেষ: