মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২

লবণ খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করছেন চিকিৎসক

লবণ খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করছেন চিকিৎসক

সংগৃহীত

রান্নাঘর থেকে খাবার টেবিল―লবণ ছাড়া আমাদের খাবার কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু এই চেনা উপাদানটাই যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন তা ধীরে ধীরে শরীরের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে পারেন না যে প্রতিদিনের খাবারেই তারা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি লবণ খেয়ে ফেলছেন, যা ভবিষ্যতে মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

চিকিৎসকদের মতে, সাধারণ লবণের ভেতরে থাকা সোডিয়ামই মূল সমস্যা। বেশি সোডিয়াম শরীরের পানির স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। ফলে শরীর অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর প্রভাবে—

- রক্তচাপ দ্রুত বৃদ্ধি পায়

- হৃৎপিণ্ডকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়

- রক্তনালি শক্ত ও সরু হয়ে যায়

- হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়

- কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা একসময় কিডনি বিকলের কারণ হতে পারে

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাড়তি লবণের ক্ষতি একদিনে বোঝা যায় না। নিয়মিত বেশি লবণ খাওয়ার অভ্যাস ধীরে ধীরে শরীরকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়।

বাড়তি লবণের স্বাস্থ্যকর বিকল্প অভ্যাস

স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর অভ্যাসের কথা বলেন—

লো–সোডিয়াম লবণ ব্যবহার: সাধারণ লবণের বদলে কম সোডিয়ামযুক্ত লবণ ব্যবহার করলে স্বাদ খুব একটা বদলায় না, কিন্তু সোডিয়াম গ্রহণ অনেকটাই কমে। এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে রান্না: তাজা শাকসবজি, ফল, মাছ ও মাংসে স্বাভাবিকভাবেই সোডিয়াম কম থাকে। রান্নায় লেবুর রস, ভিনেগার, আদা, রসুন, গোলমরিচ বা বিভিন্ন ভেষজ মসলা ব্যবহার করলে লবণের প্রয়োজন কমে যায়।

টেবিলে লবণ না রাখা: খাবারের টেবিলে লবণের পাত্র থাকলে অজান্তেই বেশি লবণ যোগ করা হয়। এই অভ্যাস বাদ দিলে দৈনিক লবণ গ্রহণ স্বাভাবিকভাবেই কমে আসে।

ড্যাশ ডায়েট অনুসরণ: হার্টের জন্য উপকারী এই ডায়েটে ফল, সবজি, লিন প্রোটিন, হোল গ্রেইন ও লো–ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে প্রক্রিয়াজাত খাবার কম থাকায় সোডিয়াম গ্রহণও কম হয়।

প্যাকেটজাত খাবার এড়ানো: চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, সস, আচার ও প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো লবণ থাকে খুব বেশি। খাবারের লেবেল দেখে সোডিয়ামের পরিমাণ যাচাই করা ভালো অভ্যাস।

কতটুকু লবণ নিরাপদ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন সুস্থ মানুষের দিনে সর্বোচ্চ ২,৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম (প্রায় ১ চা চামচ লবণ) গ্রহণ করা নিরাপদ। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্‌রোগ আছে, তাঁদের জন্য এই সীমা আরও কম—১,৫০০ মিলিগ্রাম। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষই এই সীমার দ্বিগুণ বা তারও বেশি লবণ খেয়ে ফেলেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

স্বাদ বাড়াতে লবণের দরকার আছে ঠিকই, কিন্তু অতিরিক্ত লবণই নীরব শত্রু। এখনই যদি ছোট পরিবর্তন আনা যায় - কম লবণ ব্যবহার, স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়া ও সচেতনভাবে রান্না করা—তাহলে হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। কম লবণ মানেই দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ, নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবন।

সূত্র: কালবেলা