বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মহাস্থানহাটে মাসে আলু রপ্তানী হয় গড়ে ২২ কোটি টাকা

মহাস্থানহাটে মাসে আলু রপ্তানী হয় গড়ে ২২ কোটি টাকা

বগুড়া ও জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলায় আলু চাষের জন্য উপযোগী। ভালো দাম আর ফলনের আশায় প্রতি মৌসুমে এই জেলার কৃষকরা বিভিন্ন জাতের আলু উৎপাদন করে থাকে। বর্তমানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা আলু চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বগুড়ার মহাস্থান সবজির হাট থেকে প্রতি মাসে বগুড়ার বাহিরে যাচ্ছে ৭২ লাখ টাকার আলু। এ জেলার চাহিদাপূরণ করে প্রতি মাসে ৩৯০ টন আলু বাজারজাত করা হয় রাজধানী ঢাকাসহ, সিলেটের বিভিন্ন জেলায়।সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাস্থান সবজির হাটে আলু ধোয়ার কাজ করছেন শ্রমিকেরা। এসব আলু বস্তায় প্যাকেট জাত করে হাট থেকে প্রতিদিন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার আলু যাচ্ছে বগুড়ার বাইরে। আলু ধোয়া থেকে শুরু করে ট্রাকে বোঝায় করার জন্য প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক কাজ করেন প্রতিনিয়ত।

চলতি মৌসুমে যমুনা চরের পাশাপাশি জেলার সব এলাকায় ক্যারেট, সেভেন,ডায়মন্ড,কাটিলাল, অ্যাসটেরিক, লালপাকড়ি, ফাঁটাপাকড়ি, গ্রানুলা ও হাইব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষে লাভবান বেশি হচ্ছে কৃষকেরা।মহাস্থান সবজির হাটের নারী শ্রমিক সালেহা বেগম উত্তর অঞ্চলের খবরকে জানান, “দশ বছর আগে স্বামী মারা যায়। তখন থেকে সবজির হাটে আলু ধোয়াসহ পানি পৌছে দেয়ার কাজ করেন। দিনে দুই‘শ থেকে আড়াই‘শ টাকা মজুরি করে সংসার চলে সালেহা বেগমের।”আরেক শ্রমিক আজমল প্রামাণিক বলেন, “রাত ৩টার পর থেকে শুরু হয়ে পরের দিন বিকাল পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এখানে প্রায় দুই‘শ থেকে আড়াই‘শ শ্রমিক শুধু আলু ধোয়া থেকে ট্রাকে উঠানোর কাজ করে।”

কাহালু উপজেলার মালঞ্চা ইউনিয়নের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ধান কাটার পর আগাম জাতের আলু চাষ করা হয় এ এলাকায়। নতুন আলু ৮০/৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সেই আলু খোলা বাজারে ১৫ টাকা এবং পাইকারি বাজারে ২০ থেকে ২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকায় চাষিরা এবার আলুর ভালো দাম পাবে।শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, আমন কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর ওই জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া এখনও অনুকূলে আছে। এমন অবস্থা থাকলে আলুর বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। আর ফলন ভালো হলে এবং ন্যায্য মূল্য পেলে ভালো লাভ করা যাবে।মহাস্থান সবজি হাটের আলুর আড়ৎদার বটু মিয়া জানান, প্রতি গাড়িতে ৩৫০ মণ হারে প্রতিদিন ৩০টি ট্রাকে ১০ হাজার ৫‘শ মণ আলু যাচ্ছে বগুড়ার বাহিরে।

মণ প্রতি ৭০০ টাকা হিসেবে প্রতি ট্রাকে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার আলু সরবরাহ করা হয়। মাসে গড়ে সাড়ে ২২ কোটি টাকার আলু রপ্তানী করা সারাদেশে। গত বছর আকারভেদে প্রতি মণ ৭৫০-৮০০টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর ৬৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্তি উপ-পরিচালক মোঃ এনামুল হক জানান, “গত বছর জেলায় ৫৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। আলুর উৎপাদন ছিল ১১ লাখ ৮৬ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৫৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু অনেক কৃষক সরিষা চাষ করায় এবার আলু চাষ হয়েছে ৫৭ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ৮৭ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন।”

দৈনিক বগুড়া