• বুধবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১২ ১৪৩০

  • || ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে মরু অঞ্চলের ফল সাম্মাম

দৈনিক বগুড়া

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২৩  

সাম্মাম ফলটি মূলত সৌদি আরবের একটি সুস্বাদু ফল। আর সৌদি আরবের মরুভূমি অঞ্চলে উক্ত ফলটি প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে। এই সাম্মাম নামের অর্থ হলো, খরবুজ, খরমুজ। সাম্মাম ফল দেখতে দেশীয় বাঙ্গির মতো। সাম্মাম সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটি হলুদ মসৃণ খোসা আর অন্যটির খোসার অংশ খসখসে।

তবে হলুদ রঙের এ ফলটি এদেশে নতুন, খেতে খুবই সুস্বাদু এবং রসালো। তাইতো এ ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বগুড়ায়। চাষে সফলতাও পেয়েছেন এ জেলার চাষীরা। তবে নতুনজাতের পুষ্টিসমৃদ্ধ এ ফল কৃষক পর্যায়ে যতটা ছড়িয়ে যাবে, ভোক্তা পর্যায়ে ততটায় দাম কমে যাবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পুষ্টিবিদদের মতে, এ ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম। মূলত আপনি যদি নিয়মিত এই ফলটি খেয়ে থাকেন। তাহলে উক্ত ফলটি আপনার শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করবে। সেই সাথে আপনার শরীরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সহায়তা করবে। যার কারণে বর্তমান সময়ে এই ফলটির চাহিদা ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জানা যায়, বগুড়া সদর উপজেলার মহিষবাথান গ্রামে সাম্মাম ফলের চাষ করেছেন সামিউল ইসলাম নামের এক যুবক। সামিউলের বাড়ি নওগাঁ জেলায়। তিনি চাকরির সুবাদে বগুড়ায় থেকে যান। ব্যাচেলর অব এগ্রিকালচার বিষয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করে একটি বীজ কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর কাজের অভিজ্ঞতায় আরো কয়েকটি কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন কাটিয়ে নিজেই কিছু করার চিন্তা করেন। তবে ২০২০ সালের শুরুতে করোনা ভাইরাসের কারণে ধাক্কা খান। ২০২১ সালে করোনা ভাইরাসের প্রভাব কিছুটা কমে গেলে তিনি নতুন করে শুরু করেন।

তার কর্মজীবনের কিছু মানুষের সহযোগিতা নিয়ে বগুড়া সদর উপজেলার বাঘোপাড়া মহিষবাথান সড়কের পাশে অল্প কিছু জমি লিজ নিয়ে মরিচ, পেঁপে, টমেটো, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করেন। নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম দেন অ্যাগ্রো ওয়ান গ্লোবাল লিমিটেড। বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদন ও বিপণনের মাঝে নতুনজাতের ফল সাম্মামের সন্ধান পান। তিনি বিভিন্ন উপায়ে সাম্মামের বীজ সংগ্রহ করে খামার গড়ে তোলেন। তার বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে সাম্মাম ফলের সারি। এ ফল বগুড়া শহরের কাঁঠালতলা এলাকায় বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা কেজি দরে।

সামিউলের মতো নতুনজাতের এ ফল চাষ করেছেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মধ্যকাতুলী গ্রামের রাশেদুল মোর্শেদ। চলতি বছর অল্প জমিতে সাম্মাম চাষ করে তিনিও সফলতা পেয়েছেন। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফল বিক্রি শুরু করে তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো ফল বিক্রি করেছেন। আরো ফল বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি পাইকারিভাবে গড়ে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন সাম্মাম।

সাম্মাম চাষী ও অ্যাগ্রো ওয়ান গ্লোবাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিউল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে সাম্মামের চারা লাগবে ৩ হাজার ৫০০টি। চাষের পর চারা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে সাম্মাম ফল পাওয়া যাবে। প্রতিটি গাছে একটি বা দুটি করে ফলন পাওয়া যায়। সাম্মাম ফলটি একরকম তরমুজ বা পেঁপের মতো করে খেতে হয়। বলতে গেলে তরমুজের মতো এ ফলটি। খেতে সুস্বাদু। মাটি ভালো হলে প্রতিটি সাম্মামের ওজন হবে দেড় থেকে দুই কেজি। এক বিঘা জমিতে সাম্মাম চাষে খরচ হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হবে।

বগুড়া সদর উপজেলার মহিষবাথান গ্রামের চাষী নুরুল ইসলাম জানান, বাগানে সাম্মাম ফল দেখে চাষের কৌশল তিনি জেনেছেন। বিদেশী জাতের এ ফল তিনিও চাষ করেছেন। এ ফল এর আগে দেখেননি। আশপাশের কৃষক প্রায়ই এসে সাম্মাম ফল দেখে চাষের নিয়ম জেনে যাচ্ছেন।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. এনামুল হক বলেন, তবে দেশি ফলের চেয়ে সাম্মামের দাম একটু বেশি, উৎপাদন খরচ কম। মাচায় চাষ করতে হয় সাম্মাম। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম। জেলার ‘কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তা মরু অঞ্চলের সাম্মাম ফল চাষ শুরু করেছেন। তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’

দৈনিক বগুড়া
দৈনিক বগুড়া