বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

পুকুর নিয়ে বিবাদ, আতঙ্কে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার

পুকুর নিয়ে বিবাদ, আতঙ্কে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার

সংগৃহীত

বগুড়ার শেরপুরে শাহবন্দেগী ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামে পুকুরকেন্দ্রিক বিরোধকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুটি পরিবারের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলার ভয়ে দুই পরিবারের নারী–পুরুষ বাড়ির ভেতর আটকে পড়েন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় ওই রাতেই পুকুরের মালিক সুবাস চন্দ্র মাহাতো দুলাল হোসেনসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে শেরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাগমারা গ্রামের ‘হাটদীঘি’ নামের ১১ একর ১৬ শতক আয়তনের পুকুরটির মালিক সুবাস চন্দ্র মাহাতো। পুকুরটির দুই পাড়ে প্রায় ৪০টি ভূমিহীন পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের পর পাড়ের বসবাসকারীদের সঙ্গে মালিক পক্ষের উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। অভিযোগ রয়েছে—পাড়ের কিছু বাসিন্দা পুকুরটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মালিক পক্ষ দিন–রাত পাহারাদার বসিয়ে রাখে।

মঙ্গলবার রাতে দুলাল হোসেনের (৪৫) নেতৃত্বে প্রায় ২৫ জন লাঠি-সোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে পুকুরপাড়ে থাকা দুই পাহারাদারের ওপর হামলা করে। এতে মো. লালন (২৪) ও জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) গুরুতর জখম হন। তারা দৌড়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। অভিযোগ করা হয়—হামলাকারীরা তাদের পিছু নিয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুটি বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং ভাঙচুর চালায়। এ সময় মানিক চন্দ্র মাহাতোর গোয়ালঘর ভাঙচুর করা হয়।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুর্গাচরণ মাহাতো ও মানিক চন্দ্র মাহাতো জানান, আহত দুজন তাদের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার পরপরই হামলাকারীরা তাদের ঘরে চড়াও হয়। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।

বাগমারা গ্রামের আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ অভিযোগ করে বলেন, গ্রামে প্রায় ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে পুকুরকেন্দ্রিক বিরোধের জেরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। গত তিন মাস ধরে পুকুরপাড়ের একটি পক্ষ তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা পুকুরপাড় দিয়ে অবাধে চলাচল করতে পারেন না। মঙ্গলবার রাতেও আহত দুই পাহারাদার দীর্ঘ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

পুকুরের মালিক সুবাস চন্দ্র মাহাতো বলেন, 'পুকুরটি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চলছিল দীর্ঘদিন। মঙ্গলবার রাতেও পাহারাদারের ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। আহত দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।' তিনি দাবি করেন—নিরীহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবারগুলো পুকুর রক্ষার পক্ষে থাকায় তাদের ওপর হামলা হয়েছে।

অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে পুকুরপাড়ের দুলাল হোসেন বলেন, 'আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। বরং সুবাস মাহাতোর লোকজনের হামলায় আমাদের তৌহিদ (১৬) ও হানিফ (২৪) গুরুতর জখম হয়েছে।'

শেরপুর থানার ওসি এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, 'ঘটনা নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

সর্বশেষ: