
গোপন বিয়ে অসামাজিক, অমানবিক, অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ ও লজ্জাজনক কাজ। এজন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ইসলাম পছন্দ করে না।ইসলামের নির্দেশনা হলো, বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে। (মুসনাদে আহমাদ ৪/৫)
হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) - এক সাহাবির বিয়ের খবর শুনে নির্দেশ দেন, `বিয়ের ঘোষণা প্রদান করো এবং মসজিদে তা সম্পাদন কর। আর এর জন্য দফ (এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র) বাজাও। ` (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৯)
নিন্দনীয় হলেও যদি গোপনে বিয়ে করেই ফেলেছেন, এখন এই বন্ধন রক্ষা করতে হবে। মনে রাখবেন, এটি কোনো ছেলেখেলা নয়। বরং এটি হলো, আল্লাহ তাআলাপ্রদত্ত ও নির্দেশিত নারী-পুরুষের সারাজীবনের একটি চিরস্থায়ী পূত-পবিত্র বন্ধন।
পিতা-মাতা বা আত্নীয়-স্বজন এ ধরনের পালিয়ে বিয়ে মেনে নিতে পারেন না। অনেক ঝামেলার পর দেখা যায় তারা তালাকের সিদ্ধান্ত নেন। ছেলেকে বলা হয় তালাক দেওয়ার জন্য। কিন্তু ইসলামে তালাকের সুযোগ রাখা হয়েছে খুবই অপছন্দনীয়ভাবে।
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক যখন তিক্ত পর্যায়ে চলে যায় এবং সমাধানের কোনো পথ থাকে না, তখনই তালাক দেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও ইসলামে তালাক একটি জঘন্যতম বৈধ কাজ।
রাসুলুল্লাহ (সা:)- তা চরমভাবে ঘৃণা করতেন। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল হলো তালাক। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৭)
এজন্য প্রয়োজন (যা শরিয়তে ওজর বলে গণ্য) ছাড়া স্বামীর জন্য তালাক দেওয়া জায়েজ নয়, স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া বৈধ নয়। যেহেতু তালাক স্বামীর অধিকার, তাই বিশেষত স্বামী এক্ষেত্রে নিছক মা-বাবার চাপ বা বলপ্রয়োগের কারণেও তা প্রয়োগ করতে পারবে না।
কারণ সৃষ্টির আনুগত্যের সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (সা:) বলেন, অসৎকাজে আনুগত্য নয়; আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭১৪৫)
সুতরাং আপনি এখন যা করবেন তা হলো, অস্বীকার করে অন্যায়ের পর অন্যায় আর নয়; বরং মা-বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন। আপনি তাদের সঙ্গে অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ করেছেন, তা তাদের কাছে স্বীকার করে নিন।
পাশাপাশি এটাও বুঝিয়ে বলুন যে আপনি তাদের সঙ্গে যে অন্যায় আচরণ করেছেন, এর শাস্তি আপনি পেতে পারেন; আপনার স্ত্রী নয়। এর প্রতিকার হিসাবে তালাকের মতো দূর্ঘটনা ঘটলে তা হবে আরেকটি অন্যায়।
পক্ষান্তরে তালাকের কারণ যদি যৌক্তিক না হয়, কেবল বউয়ের প্রতি ঈর্ষাবশত এটি হয়, তাহলে তালাক দেওয়া আপনার জন্য জায়েজ হবে না।
পরিশশেষে আপনাকে ধৈর্য্য ধরার ও মা-বাবার সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই অসদাচারণ না করার পরামর্শ দিচ্ছি। আপনার স্ত্রীকে তাদের সঙ্গে এমন ভালো ব্যবহার দেখাতে বলুন, যাতে তাদের মন নরম হয়। আর অবশ্যই আল্লাহর কাছে দোয়া অব্যাহত রাখুন। তিনিই প্রকৃত সমাধানদাতা।
দৈনিক বগুড়া