
আমরা এখানে সূরা বাকারার ২৩৮-২৫৪ নম্বর আয়াতসমূহের উল্লখযোগ্য শানেনুযুল (আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট) তুলে ধরছি-
حَافِظُواْ عَلَى الصَّلَوَاتِ والصَّلاَةِ الْوُسْطَى
অর্থ : সমস্ত নামাজের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের ব্যাপারে। (আয়াত : ২৩৮)।
শানে নুযুল : অধিকাংশ সময় ব্যবসায়িক লেন-দেনের কারণে সাহাবায়ে কেরামের আসরের নামাজ বিলম্বিত হয়ে যেত। এমনকি সূর্য্য ডুবে যাওয়ার উপক্রম হত। এ প্রসঙ্গে উক্ত আয়াত নাজিল হয়।
وَقُومُواْ لِلّهِ قَانِتِينَ
অর্থ : আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও। (আয়াত-২৩৮)।
শানে নুযুল : হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যুগে আমরা নামাজের মধ্যেও কথাবার্তা বলতাম। তখন উক্ত আয়াত নাজিল হয়। এর দ্বারা আমাদের চুপ থাকতে নির্দেশ দেয়া হলো।
فَإنْ خِفْتُمْ فَرِجَالاً أَوْ رُكْبَانًا فَإِذَا أَمِنتُمْ فَاذْكُرُواْ اللّهَ كَمَا عَلَّمَكُم مَّا لَمْ تَكُونُواْ تَعْلَمُونَ
অর্থ : অতঃপর যদি তোমাদের কারো ব্যাপারে ভয় থাকে, তাহলে পদচারী অবস্থাতেই পড়ে নাও অথবা সওয়ারীর ওপরে। তারপর যখন তোমরা নিরাপত্তা পাবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তোমাদের শেখানো হয়েছে, যা তোমরা ইতোপূর্বে জানতে না। (আয়াত-২৩৯)।
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا وَصِيَّةً لِّأَزْوَاجِهِم مَّتَاعًا إِلَى الْحَوْلِ غَيْرَ إِخْرَاجٍ
অর্থ: আর তোমাদের মধ্যে যারা আপন স্ত্রীদের রেখে মৃত্যুবরণ করবে তাদের দায়িত্ব হলো স্ত্রীদেরকে ঘর থেকে বের না করে এক বছর পর্যন্ত তাদের খরচের ব্যাপারে ওসিয়ত করে যাওয়া। অতঃপর যদি সে স্ত্রীরা নিজ থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে তারা নিজের ব্যাপারে যে উত্তম ব্যবস্থা করে, তাতে তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী বিজ্ঞতা সম্পন্ন। (আয়াত-২৪০)।
শানে নুযুল : হজরত মুকাতেল বিন হাব্বান (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, জনৈক ব্যক্তি তায়েফ থেকে ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা ও স্ত্রীসহ মদিনায় আগমন করেন। এখানে এসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি রাসূল (সা.)-কে জানানো হলে তিনি তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তার পিতা-মাতা ও সন্তানদের যথারীতি অংশ দিলেন। কিন্তু স্ত্রীকে কিছুই দিলেন না। তার স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর এক বছরের ব্যয়ভার বহন করার জন্য তাকে নির্দেশ দিলেন। এ প্রসঙ্গে উক্ত আয়াত নাজিল হয়।
বি:দ্র: এ নির্দেশ ছিল মীরাসের আয়াত নাজিল হওয়ার পূর্বের। পরে যখন মীরাসের আয়াত নাজিল হয় এবং স্ত্রীকেও স্বামীর বাড়িঘর ও অন্যান্য জিনিসে অংশ দেয়া হয় তখন এ আয়াতটির নির্দেশ রহিত হয়ে যায়। (মারেফুল কোরআন)।
وَلِلْمُطَلَّقَاتِ مَتَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ
অর্থ: আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খরচ দেয়া পরহেযগারদের ওপর কর্তব্য। (আয়াত-২৪১)।
كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
অর্থ : এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তা বুঝতে পার। (আয়াত-২৪২)।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ خَرَجُواْ مِن دِيَارِهِمْ وَهُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللَّهُ مُوتُواْ ثُمَّ أَحْيَاهُمْ إِنَّ اللهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَشْكُرُونَ.
অর্থ : তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন? অথচ তারা ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন মরে যাও। তারপর তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের ওপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না।
(আয়াত-২৪৩)
শানে নুযুল : বনী ইসরাঈলদের এক সম্প্রদায় আরুয়াত অথবা দাউরাদান নামক স্থানে বসবাস করত। সেখানে এক মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দিল, তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার। তারা ভীত হয়ে সবাই সে শহর ত্যাগ করে দু’টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী একটি প্রশস্ত ময়দানে গিয়ে বসবাস করতে লাগল। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এবং দুনিয়ার অন্যান্য জাতিকে এ কথা অবগত করানোর জন্য যে, মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে গিয়ে কেউ রক্ষা পেতে পারে না, তাদের কাছে দু’জন ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা দু’জন সে ময়দানের দু’ধারে দাঁড়িয়ে এমন বিকট শব্দ করলেন যে, সবাই একসঙ্গে মৃত্যুবরণ করল। তাদের মধ্যে একটি লোকও জীবিত ছিল না। পার্শ্ববর্তী লোকেরা যখন এ সংবাদ জানতে পারল, তখন সেখানে গিয়ে দশ হাজার মানুষের কাফন-দাফন করার ব্যবস্থা করা যেহেতু খুব সহজ ব্যাপার ছিল না, তাই তাদের চারদিকে দেয়াল দিয়ে একটি বন্ধ কূপের মতো করে দেয়া হলো। স্বাভাবিকভাবেই তাদের মৃত দেহগুলো পঁচে গলে গেল, আর হাড়গোড়গুলো তেমনি পড়ে রইল। দীর্ঘকাল পর বনী ইসরাঈলের হিযকীল (আ.) নামক একজন নবী সেখান দিয়ে যাবার পথে সে বন্ধ স্থানে বিক্ষিপ্তাবস্থায় হাড়গুলো থাকতে দেখে বিস্মিত হলেন। তখন ওহীর মাধ্যমে তাকে এ লোকদের সমস্ত ঘটনা অবগত করানো হলো। তিনি দোয়া করলেন যে, হে আল্লাহ তায়ালা! আপনি তাদের সবাইকে পুনর্জীবিত করে দিন। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন। আর সবাইকে পুনর্জীবিত করে দিলেন। উক্ত ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (মাআরেফুল কোরআন)।
وَقَاتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
অর্থ: আল্লাহর পথে লড়াই কর এবং জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু শুনেন। (আয়াত-২৪৪)।
مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً وَاللهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ.
অর্থ : কে সে, যে আল্লাহকে স্বদ্বয়তার সঙ্গে করজে হাসানা প্রদান করবে? তিনি তা বহু বৃদ্ধি করবেন। আর আল্লাহ সংকোচিত ও সম্প্রসারিত করেন এবং তার নিকটেই প্রত্যাণীত হবে। (আয়াত-২৪৫)।
শানে নুযুল : একদা আবু দারদাহ (রা.) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দু’টি বাগান আছে, আমি এর একটি দান করলে ওই জাতীয় বাগান বেহেশতে পাব কি এবং আমার স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিও আমার সঙ্গে থাকবে কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর সে বাগানের দ্বারে গিয়ে তার স্ত্রীকে এ সুসংবাদটি জানাল, তাতে সে আনন্দে বলে উঠল, ‘আপনার কৃত বস্তুতে আল্লাহ বরকত দান করুন। অতঃপর আবু দারদাহ (রা.) উত্তম বাগানটি আল্লাহর রাস্তায় দান করলেন। তার এ দানের প্রসঙ্গে উক্ত আয়াতটি নাজিল হয়।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلإِ مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ مِن بَعْدِ مُوسَى إِذْ قَالُواْ لِنَبِيٍّ لَّهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُّقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ إِن كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلاَّ تُقَاتِلُواْ قَالُواْ وَمَا لَنَا أَلاَّ نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَقَدْ أُخْرِجْنَا مِن دِيَارِنَا وَأَبْنَآئِنَا فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْاْ إِلاَّ قَلِيلاً مِّنْهُمْ وَاللّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ
অর্থ: মূসার পরে তুমি কি বনী ইসরাঈলের একটি দলকে দেখনি, যখন তারা বলেছে নিজেদের নবীর কাছে যে, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নির্ধারিত করে দিন যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী বললেন, তোমাদের প্রতিও কি এমন ধারণা করা যায় যে, লড়াইর হুকুম যদি হয়, তাহলে তখন তোমরা লড়বে না? তারা বলল, আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করব না। অথচ আমরা বিতাড়িত হয়েছি নিজেদের ঘর-বাড়ী ও সন্তান-সন্ততি থেকে। অতঃপর যখন লড়াইয়ের নির্দেশ হলো, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তাদের সবাই ঘুরে দাঁড়ালো। আর আল্লাহ তায়ালা জালেমদের ভালো করেই জানেন। (আয়াত-২৪৬)।
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ اللّهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوتَ مَلِكًا قَالُوَاْ أَنَّى يَكُونُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ أَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ قَالَ إِنَّ اللّهَ اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ وَاللّهُ يُؤْتِي مُلْكَهُ مَن يَشَاء وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
অর্থ: আর তাদেরকে তাদের নবী বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলতে লাগল তা কেমন করে হয় যে, তার শাসন চলবে আমাদের ওপর। অথচ রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে আমাদেরই অধিকার বেশি। আর সে সম্পদের দিক দিয়েও স্বচ্ছল নয়। নবী বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর তাকে পছন্দ করেছেন এবং স্বাস্থ্য ও জ্ঞানের দিক দিয়ে প্রাচুর্য দান করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকেই রাজ্য দান করেন, যাকে ইচ্ছা। আর আল্লাহ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সব বিষয়ে অবগত। (আয়াত-২৪৭)।
وَقَالَ لَهُمْ نِبِيُّهُمْ إِنَّ آيَةَ مُلْكِهِ أَن يَأْتِيَكُمُ التَّابُوتُ فِيهِ سَكِينَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِّمَّا تَرَكَ آلُ مُوسَى وَآلُ هَارُونَ تَحْمِلُهُ الْمَلآئِكَةُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
অর্থ: বনী-ইসরাঈলদেরকে তাদের নবী আরো বললেন, তালূতের নেতৃত্বের চিহ্ন হলো এই যে, তোমাদের কাছে একটা সিন্দুক আসবে তোমাদের পালকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মনের সন্তুষ্টির নিমিত্তে। আর তাতে থাকবে মূসা, হারুন এবং তাদের সন্তানবর্গের পরিত্যক্ত কিছু সামগ্রী। সিন্দুকটিকে বয়ে আনবে ফেরেশতারা। তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তাহলে এতে তোমাদের জন্য নিশ্চিতই পরিপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে। (আয়াত-২৪৮)।
فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوتُ بِالْجُنُودِ قَالَ إِنَّ اللّهَ مُبْتَلِيكُم بِنَهَرٍ فَمَن شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَمَن لَّمْ يَطْعَمْهُ فَإِنَّهُ مِنِّي إِلاَّ مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً بِيَدِهِ فَشَرِبُواْ مِنْهُ إِلاَّ قَلِيلاً مِّنْهُمْ فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ قَالُواْ لاَ طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوتَ وَجُنودِهِ قَالَ الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلاَقُو اللّهِ كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللّهِ وَاللّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ
অর্থ: অতঃপর তালূত যখন সৈন্য-সামন্ ত নিয়ে বেরুল, তখন বলল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদিগকে পরীক্ষা করবেন একটি নদীর মাধ্যমে। সুতরাং যে লোক সেই নদীর পানি পান করবে সে আমার নয়। আর যে, লোক তার স্বাদ গ্রহণ করলো না, নিশ্চয়ই সে আমার লোক। কিন্তু যে লোক হাতের আঁজলা ভরে সামান্য খেয়ে নেবে তার দোষ অবশ্য তেমন গুরুতর হবে না। অতঃপর সবাই পান করল সে পানি, সামান্য কয়েকজন ছাড়া। পরে তালূত যখন তা পার হলো এবং তার সঙ্গে ছিল মাত্র কয়েকজন ঈমানদার, তখন তারা বলতে লাগল, আজকের দিনে জালূত এবং তার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই, যাদের ধারণা ছিল যে, আল্লাহর সামনে তাদের একদিন উপস্থিত হতে হবে, তারা বার বার বলতে লাগল, সামান্য দলই বিরাট দলের মোকাবিলায় জয়ী হয়েছে আল্লাহর হুকুমে। আর যারা ধৈর্য্যশীল আল্লাহ তাদের সঙ্গে রয়েছেন। (আয়াত-২৪৯)।
وَلَمَّا بَرَزُواْ لِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ قَالُواْ رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
অর্থ: আর যখন তালূত ও তার সেনাবাহিনী শত্রুর সম্মুখীন হলো, তখন বলল, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের মনে ধৈর্য্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ-আর আমাদের সাহায্য কর সে কাফের জাতির বিরুদ্ধে। (আয়াত-২৫০)।
فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ اللّهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاء وَلَوْلاَ دَفْعُ اللّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الأَرْضُ وَلَـكِنَّ اللّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ
অর্থ: তারপর ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়। (আয়াত-২৫১)।
تِلْكَ آيَاتُ اللّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ
অর্থ: এগুলো হলো আল্লাহর নিদর্শন, যা আমরা তোমাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে থাকি। আর আপনি নিশ্চিতই আমার রসূলদের অন্তর্ভুক্ত। (আয়াত-২৫২)।
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِّنْهُم مَّن كَلَّمَ اللّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ وَلَوْ شَاء اللّهُ مَا اقْتَتَلَ الَّذِينَ مِن بَعْدِهِم مِّن بَعْدِ مَا جَاءتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَلَـكِنِ اخْتَلَفُواْ فَمِنْهُم مَّنْ آمَنَ وَمِنْهُم مَّن كَفَرَ وَلَوْ شَاء اللّهُ مَا اقْتَتَلُواْ وَلَـكِنَّ اللّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ
অর্থ: এই রসূলগণ-আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ তো হলো তারা যার সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন, আর কারো মর্যাদা উচ্চতর করেছেন এবং আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে প্রকৃষ্ট মুজেযা দান করেছি এবং তাকে শক্তি দান করেছি ‘রুহূল কুদ্দুস’ অর্থৎ জিবরাঈলের মাধ্যমে। আর আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে পরিস্কার নির্দেশ এসে যাবার পর পয়গম্বরদের পেছনে যারা ছিল তারা লড়াই করতো না। কিন্তু তাদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়ে গেছে। অতঃপর তাদের কেউ তো ঈমান এনেছে, আর কেউ হয়েছে কাফের। আর আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তারা পরস্পর লড়াই করতো, কিন্তু আল্লাহ তাই করেন, যা তিনি ইচ্ছা করেন। (আয়াত-২৫৩)।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَنفِقُواْ مِمَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لاَّ بَيْعٌ فِيهِ وَلاَ خُلَّةٌ وَلاَ شَفَاعَةٌ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম। (আয়াত-২৫৪)।
দৈনিক বগুড়া