শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

মাতৃভাষায় নবী-রাসূলদের নিকট কিতাব অবতীর্ণের কারণ কী?

মাতৃভাষায় নবী-রাসূলদের নিকট কিতাব অবতীর্ণের কারণ কী?

সংগৃহীত

ভাষা হলো চিন্তার বাহন। মানুষ যা চিন্তা করে সেসব চিন্তা ও অনুভূতি ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করে। তবে অসংখ্য ভাষার ভেতর প্রত্যেকটা মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূণ হচ্ছে তার মাতৃভাষা। জন্মের পর পর যে ভাষা সে তার আশপাশে শুনতে পায়, তার মায়ের মুখ থেকে শুনতে পায়; তাই হলো মাতৃভাষা।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘দয়াময় আল্লাহ, তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাষা’। (সূরা: আর-রাহমান, আয়াত: ১-৪)

বাংলা, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মানি, পর্তুগিজ, চাইনিজ, জাপানিজ, কোরিয়ান, রুশ ও প্রতিটি ভাষাই আল্লাহর পক্ষ থেকে। মানব ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকে অসংখ্য জাতি আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ভাষা ছিল। প্রত্যেক জাতির কাছে নবী রাসূল এসেছেন। আল্লাহ সেই নবীদের তাদের স্বজাতির ভাষায় অর্থাৎ মাতৃভায়ায় প্রেরণ করেছেন এবং কিতাবও নাজিল করেছেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাসি করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করবার জন্য, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (সূরা: ইব্রাহিম, আয়াত: ৪)

আসমানি প্রসিদ্ধ ৪টি কিতাব ৪ ভাষায় এবং প্রতিটি কিতাব প্রত্যেক নবী ও তার উম্মতের মাতৃভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। দাউদ (আ.) এর প্রতি জবুর অবতীর্ণ হয়েছে ইউনানি ভাষায়, যা তার মাতৃভাষা ছিল। মূসা (আ.) এর ওপর তাওরাত অবতীর্ণ হয়েছে হিব্রু ভাষায়, যা ছিল ইহুদিদের মাতৃভাষা। ঈসা (আ.) এর প্রতি অবতীর্ণ ইনজিলের ভাষা ছিল সুরয়ানি (গ্রিক), যা খ্রিস্টানদের মাতৃভাষা ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন তার মাতৃভাষায় তথা আরবি ভাষায়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি কোরআনকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো’। (সূরা: ইউসূফ, আয়াত: ২)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আমি কোরআনকে আপনার ভাষায় (আরবি) সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি এর দ্বারা মুত্তাকিদের সুসংবাদ প্রদান এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারেন’। (সূরা: মারিয়াম, আয়াত: ৯৭)

আল্লাহ আরো বলেন, ‘এমনিভাবে আমি আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করেছি এবং এতে নানাভাবে সতর্ক বাণী ব্যক্ত করেছি; যাতে তারা আল্লাহভীরু হয়। অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার খোরাক জোগায়’। (সূরা: তোয়াহা, আয়াত: ১১৩)

মাতৃভাষার দক্ষতার গুরুত্ব সম্পর্কে কোরআন হাদিসে অনেক ভাষ্য আছে। এবং মাতৃভাষায় পারদর্শিতা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি মুসা ও হারুন (আ.) এর ঘটনা থেকে।

আল্লাহ তাআলা যখন মুসা (আ.)-কে নবী হিসেবে মনোনীত করলেন তখন মুসা তার আপন বড় ভাই হারুনকে তার সহকারী নবী হিসেবে মনোনীত করার আবেদন করেন। মুসা (আ.) এই আবেদনের কারণ হিসেবে বলেন, হারুনের ভাষা অধিক স্পষ্ট। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে অধিক বাগ্মী, অতএব তাকে আমার সাহায্যকারীরূপে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সমর্থন করবে’। (সূরা: কাসাস, আয়াত: ৩৪) এ আয়াত থেকে জানা গেল যে, ওয়াজ ও প্রচারকার্যে ভাষার প্রাঞ্জলতা ও প্রশংসনীয় বর্ণনাভঙ্গি কাম্য। এই গুণ অর্জনে প্রচেষ্টা চালানো নিন্দনীয় নয়।

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তখন মুসা বললো, হে আমার প্রতিপালক, আমি আশঙ্কা করি যে, তারা আমাকে অস্বীকার করবে এবং আমার হৃদয় সংকুচিত হয়ে পড়ছে, আর আমার জিহবা তো সাবলীল নয়, সুতরাং হারুনের প্রতিও প্রত্যাদেশ পাঠান’। (সূরা: শুআরা, আয়াত: ১২-১৩)

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

সর্বশেষ: