সংগৃহীত
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক সেকেন্ডের এই ভূমিকম্পে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি জায়গায় বিল্ডিং ধসে পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। এর মাত্রা ছিল ৫.৭ রিখটার স্কেল। এটি মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প।
এদিকে, মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিস) বলছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদী।
কোরআন-হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে যখন ব্যাপক হারে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অন্যায়-অবিচার ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে তখন মানুষ ভূমিকম্পের মুখোমুখি হবে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথরবর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কখন সেটা হবে হে আল্লাহ রাসুল?’ তিনি (সা.) বলেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বিস্তৃতি লাভ করবে এবং মদ্যপানের সয়লাব শুরু হবে। (তিরমিজি : ২২১২)
যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন জাতিকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন, পরীক্ষা করেছেন। সতর্কবার্তা না শুনে যারা আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে ফেরেনি তাদের কঠিন শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করেছেন তিনি। কোরআনে বিভিন্ন নবীর যুগের মানুষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভয়ংকর ভূমিকম্পে ধ্বংস করা এক জাতির ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে পবিত্র এই ঐশী গ্রন্থে। তারা হলেন হজরত লূত আলাইহিস সালামের জাতি। এই জাতি সমকামীতার মতো বিকৃত পাপাচারে লিপ্ত ছিল, তারাই এই বিকৃত পাপের সূচনা করে। এর আগে কোনো জাতির কল্পনাতেও ছিল না এই পাপাচার।
আল্লাহতায়ালা এই জাতিকে দিয়েছিলেন উর্বর ও শস্যে ভরপুর ভূমি। বিভিন্ন ধরণের প্রাচুর্য ছিল তাদের মাঝে। প্রাচুর্যময় জীবনযাত্রার সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠে লুত (আ.)-এর জাতি।
তারা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল এবং আল্লাহর নবীকে সবসময় কষ্ট দিতো। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি লূত (আ.)-কে প্রেরণ করেছিলাম। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা চরম অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার কাজ করছো যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বে কেউ কখনো করেনি। তোমরা কামপ্রবৃত্তি পূরণ করার জন্য মেয়েদের কাছে না গিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।’ ( সুরা আ’রাফ : ৮০-৮১)
আল্লাহর নবী লূত আলাইহিস সালাম তাদের বারবার এই পাপাচার থেকে দূরে সরে আসতে বলেছেন, কিন্তু তারা নবীর কথা না শুনে উল্টো তাকে কষ্ট দিয়েছে। আল্লাহর নবীর বিরোধিতা করে তাদের পাপাচারে সহযোগিতা করতেন স্বয়ং লূত আ.-এর স্ত্রীও। এর ফলে আল্লাহ তায়ালা একদিন প্রভাতে ভোর বেলা তাদের শক্তিশালী ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করে দেন। ভূমিকম্প এতো শক্তিশালী ছিল যে তাদের পুরো নগরটি সম্পূর্ণ উল্টে যায়।
তাফসিরে পাওয়া যায়, হজরত জিব্রাইল (আ.), ইস্রাফিল (আ.) ও মিকাইল (আ.) সুদর্শন পুরুষের রূপ ধরে হজরত লূত (আ.) এর এলাকায় উপস্থিত হন এবং মেহমান হন। লূত (আ.) গোপনে তাদেরকে আশ্রয় দেন, কিন্তু তার (লূত আ.) এক স্ত্রী এই খবর পাপাচারী সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দেয়।
পাপাচারী সম্প্রদায় তাদের বিকৃত রুচি চরিতার্থ করার জন্য লূত (আ.)-এর বাসস্থান আক্রমণ করে। শেষ পর্যায়ে লূত (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তার মেহমানদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। তখন ফেরেশতাগণ বলে ওঠেন, কোরআনের ভাষায়, ‘হে লূত (আ.)! আমরা তোমার পালনকর্তার পক্ষ হতে প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখনো তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে না। ব্যস তুমি কিছুটা রাত থাকতে থাকতে নিজের লোকজন নিয়ে বাইরে চলে যাও। আর তোমাদের কেউ যেন পেছনে ফিরে না তাকায়। কিন্তু নিশ্চয় তোমার স্ত্রীর ওপরও তা আপতিত হবে, যা ওদের উপর আপতিত হবে। ভোর বেলাই তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব নিকটে নয়?’(সুরা হুদ : ১১)
মুফাসসিরগণ বলেন, এরপর প্রথমে জিব্রাইল (আ.) তাদের সামনে আসেন এবং তার ডানা দ্বারা হালকা আঘাত করেন। এতেই সকল পাপাচারী অন্ধ হয়ে যায়। এরপর জিব্রাইল (আ.) লূত (আ.)-এর নিরাপদে সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। তিনি সরে গেলে জিব্রাইল (আ.) তার ডানা দিয়ে সমগ্র সাদ্দূম নগরীকেই গোড়াসহ তুলে ফেলেন, এত উঁচুতে নিয়ে যান যে প্রথম আসমানের রক্ষী ফেরেশতারাও সাদ্দূম নগরীর কুকুর আর মোরগের ডাক শুনতে পাচ্ছিল। ঘুমন্ত মানুষের ওপর তাদের ঘরবাড়ি আছড়ে পড়ে। পাশাপাশি আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো কঙ্কর নিক্ষিপ্ত হতে থাকে।
এবার পুরো জনপদকে উল্টো করে সজোরে জমিনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। এবার আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেক পাপীর নাম লেখা পাথর বর্ষণ করা হয়, এমনকি যেসব পাপী বাসিন্দা কোনো কাজে সেই নগরীর বাইরে ছিল তাদের উপরও প্রস্তর খণ্ড এসে পড়ে। এরপর আল্লাহ সে স্থানে দূষিত পানির জলাধারা প্রবাহিত করে দেন।
কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘অবশেষে আমার (আল্লাহর) আদেশ চলে আসল, তখন আমি উক্ত জনপদকে ধ্বংস করে দিলাম এবং তাদের উপর স্তরে স্তরে পাথর বর্ষণ করলাম।’ (সুরা হুদ : ৮২)
ওই মহাপ্রলয়ের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। ওই জনপদের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান।
সূত্র: কালবেলা



















