বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

আমেরিকায় পড়াশোনায় বিপর্যয় : এআই কী সমাধান দেবে, নাকি সমস্যা বাড়াবে?

আমেরিকায় পড়াশোনায় বিপর্যয় : এআই কী সমাধান দেবে, নাকি সমস্যা বাড়াবে?

সংগৃহীত

করোনা মহামারি আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন এক ক্ষত তৈরি করেছে, যেখান থেকে এখনও বের হতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অবস্থা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমেছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে শিশুদের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, মনোযোগের ঘাটতি এবং দীর্ঘ সময় পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। এখন শিক্ষার্থীদের এই সংকট থেকে টেনে তুলতে কেউ কেউ ভরসা রাখছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর।

শিক্ষায় এআই : নতুন আশা না নতুন ভয়?

মিসিসিপি, লুইজিয়ানাসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ইতিমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠ্যক্রম বদলে দিচ্ছে। অন্যদিকে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো এআই টিউটর চালু করছে। যা শিশুদের পড়ার সময় ভুল ধরিয়ে দেয়, উচ্চারণ ঠিক করে এবং শিক্ষার্থীর সক্ষমতা অনুযায়ী পাঠের স্তর নির্ধারণ করে।

ডেনভার পাবলিক স্কুলগুলো গত বছর থেকে “আমিরা লার্নিং” নামের একটি এআই টুল ব্যবহার করছে। এই সফটওয়্যার শিক্ষার্থীর পড়া শুনে তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করে। যেমন- কোনো শব্দে শিক্ষার্থী আটকে গেলে প্রোগ্রামটি তাদের শব্দটা বানান করে পড়তে সাহায্য করে বা মাউস ব্যবহার করতে বলে।

ওই স্কুলের পরিচালক জেনিফার বেগলি জানান, “শিক্ষার্থীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে একজন বন্ধুর মতো মনে করে। তারা আনন্দের সঙ্গে পড়ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ফিডব্যাক পাচ্ছে। একজন শিক্ষক যা একসঙ্গে ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য করতে পারেন না, এআই সেটা তাৎক্ষণিকভাবে করছে।”

শিক্ষককে বদলাতে পারবে না এআই

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইয়িং জু গবেষণায় দেখিয়েছেন, শিশুরা যখন এআই চ্যাটবটের সঙ্গে পড়াশোনা করে, তখন তারা প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে পড়ার প্রায় সমান উপকার পায়। তবে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, এআই শিক্ষক বা অভিভাবকের বিকল্প নয়। বরং একটি সহায়ক মাধ্যম।

টেক্সাসের বয়েজ অ্যান্ড গার্লস ক্লাবের নির্বাহী পরিচালক আন্ড্রা জোন্স বলেন, “একজন অভিভাবক বা শিক্ষক যখন শিশুর সঙ্গে বই পড়ে, সেটার মানসিক প্রভাব কোনো প্রযুক্তি দিতে পারে না। কোলে বসিয়ে গল্প শোনানোর সময়টা শেখার পাশাপাশি ভালোবাসারও সময়।”

এই ক্লাবটি সম্প্রতি “এডসোমা” নামের একটি এআই অ্যাপের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। যা শিশুদের পড়া শুনে উচ্চারণ ঠিক করে দেয় এবং বই নির্বাচনে সাহায্য করে।

ডেটা প্রাইভেসি ও স্ক্রিন টাইম নিয়ে উদ্বেগ

এআই ব্যবহারে সবচেয়ে বড় দুটি উদ্বেগ হলো- শিশুদের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা। নিউইয়র্কের সরকারি স্কুলগুলো গত বছরই এক এআই-নির্ভর রিডিং প্রোগ্রামের চুক্তি বাতিল করেছে। কারণ সেখানে ডেটা গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

অন্যদিকে ডেনভার স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের তথ্য ব্যবহারে কঠোর নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণ করছে।

ধনীরা বই পড়বে, গরিবরা এআই-এর ওপর নির্ভর করবে?

এআইএডু নামের একটি অলাভজনক সংস্থার প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স কটরান সতর্ক করে বলেছেন, “দশ বছর পর হয়তো দেখা যাবে- গরিব বাচ্চারা শুধু এআই শিক্ষকের কাছে পড়ছে। আর ধনী বাচ্চারা পড়ছে প্রকৃত শিক্ষকের কাছে। ক্লাসিক সাহিত্য ও কলমে লেখারও অনুশীলন করছে।”

তার মতে, প্রযুক্তি যদি ভারসাম্যহীনভাবে ব্যবহৃত হয় তাহলে শিক্ষায় বৈষম্য আরও গভীর হতে পারে।

পেনসিলভানিয়ার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান জর্ডান ক্যাল্ডওয়েল বলেন, “আমরা এআই ব্যবহার করছি, তবে সতর্কভাবে। দিনে সারাক্ষণ প্রযুক্তির ভেতর ডুবে থাকলে শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। স্কুলে বই, গল্প, লাইব্রেরি- এগুলোর অভিজ্ঞতা কোনো সফটওয়্যার দিতে পারবে না।”

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ:

শিরোনাম: