বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

এবার ৭ ছক্কার বিধ্বংসী ইনিংস, হেটমায়ারের ‘ওয়ান-ম্যান শো’ চলছেই

এবার ৭ ছক্কার বিধ্বংসী ইনিংস, হেটমায়ারের ‘ওয়ান-ম্যান শো’ চলছেই

সংগৃহীত

এক ম্যাচে শেষ বলে ছক্কায় জয়ের নায়ক, পরদিন শেষের আগের বলে ছক্কায়। টানা দুই দিনে শিমরন হেটমায়ারের বিরোচিত ব্যাটিং কীর্তির রেশ মিলিয়ে যায়নি পুরোপুরি। দুই দিন পর আবার উত্তাল তার ব্যাট। এবার লক্ষ্য অত বড় না হলেও বিপর্যয়ে পড়া দলকে এগিয়ে নিলেন তিনি শক্ত হাতে। আরও একবার শেষ ওভারের ফয়সালায় ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিল তার আরেকটি ছক্কা। মুগ্ধতায় অধিনায়ক সিকান্দার রাজা বললেন, ‘প্রতি ম্যাচেই ওয়ান-ম্যান শো।’

মেজর লিগ ক্রিকেটে চলছে হেটমায়ারের ম্যাচ জেতানো ব্যাটিংয়ের এই একক প্রদর্শনী। পাঁচদিনের মধ্যে তৃতীয়বার শেষ ওভারের ফয়সালায় সিয়াটল ওর্কাসের জয়ের নায়ক ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটসম্যান। এবার ৭ ছক্কায় ৩৭ বলে ৭৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে ৪ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন তিনি স্যান ফ্রান্সিসকো ইউনিকর্নসের বিপক্ষে।

টুর্নামেন্টের প্রথম পাঁচ ম্যাচেই হেরেছিল সিয়াটল। সেই দলটিই হেটমায়ারের ব্যাটের তাণ্ডবে তারা জিতে নিল টানা তিন ম্যাচ।

গত শুক্রবার দলকে জিতিয়েছিলেন তিনি শেষ বলে ছক্কা মেরে। ২৩৮ রান তাড়ায় সেদিন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান করেছিলেন ৯ ছক্কায় ৪০ বলে অপরাজিত ৯৭। পরদিন ছক্কায় ম্যাচ শেষ করেন তিনি শেষের আগের বলে। ২০৩ রান তাড়ায় সেদিন ৬ ছক্কায় অপরাজিত ছিলেন ২৬ বলে ৬৪ রান করে।

সেই দুই ম্যাচ ছিল ডালাসে। মাঝে বিরতি ছিল দুই দিন। টুর্নামেন্ট চলে আসে ফ্লোরিডায়। কিন্তু ভেন্যুর বদল হলেও তিনি আগের রূপেই। এবার সিয়াটলের লক্ষ্য ছিল ১৬৯। কিন্তু রান তাড়ায় ধুঁকছিল তারা। দশম ওভারে রান ছিল ৪ উইকেটে ৫৬। সেখান থেকেও দলকে জিতিয়ে ছেড়েছেন হেটমায়ার।

ফ্লোরিডার লডারহিলে মঙ্গলবার ২০ ওভারে ১৬৮ রান তোলে স্যান ফ্রান্সিসকো। চারে নেমে চার ছক্কায় ২৮ বলে ৪১ করেন সাঞ্জায় কৃষ্ণামুর্তি, ২২ বলে ৩৫ করেন জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক। অপরাজিত ৩১ রান করতে ৩৭ বল খেলে ফেলেন টিম সাইফার্ট, ওপেনিংয়ে ফিন অ্যালেন করেন ১৫ বলে ২৩। শেষ ওভারে দুই ছক্কায় ৩ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন রোমারিও শেফার্ড।

রান তাড়ায় সিয়াটল পাঁচ ওভারের মধ্যে হারায় স্টিভেন টেইলর (০) ও কাইল মেয়ার্সকে (৩)। ওপেনার শায়ান ২৭ বলে ৩৭ রান করলেও দলের রানের গতি খুব ভালো ছিল না।

দশম ওভারে যখন পরপর দুই বলে আউট হন অধিনায়ক সিকান্দার রাজা (১৪ বলে ১১) ও জাহাঙ্গির, ৪ উইকেট হারিয়ে তখন পথহারা সিয়াটল। রান রেট ছয়ের নিচে।

ওই ওভারেই ক্রিজে গিয়ে দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে হেটমায়ারের শুরু। দুটি ছক্কা মারেন তিনি পরের ওভারে। একটু পর যদিও বিদায় নেন হাইনরিখ ক্লসেন (৮ বলে ৫), হেটমায়ার ছিলেন অবিচল। তার ব্যাটে চার-ছক্কা আসতে থাকে নিয়মিতই।

উপযুক্ত কোনো সঙ্গী তিনি পাননি। ক্লসেনের পর অ্যারন জোন্স ১৪ বল খেলে ১২ রান করে বিদায় নেন। কিন্তু হেটমায়ার কারও দিকে তাকিয়ে থাকেননি। স্নায়ুর চাপ, প্রতিপক্ষের বোলিং, কিছুই পাত্তা না দিয়ে দলকে এগিয়ে নেন তিনি।

শেষ চার ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪৫ রানের। বলতে গেলে একাই সেই পথ পাড়ি দেন তিনি। সিয়াটলের টানা তৃতীয় ম্যাচে লড়াই গড়ায় শেষ ওভারে। এবার শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৮ রানের। শেফার্ডের প্রথম ডেলিভারিতে রান না হলেও দ্বিতীয়টিতে স্লোয়ার ডেলিভারিতে ১০২ মিটার লম্বা ছক্কায় উড়িয়ে দেন হেটমায়ার। পরেরটিতে দুই রান নিয়ে শেষ করে দেন ম্যাচ।

ম্যাচের পর সিয়াটল অধিনায়ক সিকান্দার রাজা স্তুতির জোয়ারে ভাসালে টানা তিন ম্যাচে দলের জয়ের নায়ককে।

“হেট্টির (হেটমায়ার) কথা বিশেষভাবে বলতেই হবে, প্রতি ম্যাচেই ‘ওয়ান-ম্যান শো’ দেখিয়ে চলেছে সে। একটা দল যখন পাঁচ ম্যাচের সবকটিতে হারে, কোনো একজনের এভাবেই উঠে দাঁড়াতে হয়। সে ঠিক সেই কাজটিই করে চলেছে। আশা করি, আরও কিছু ম্যাচ আমাদেরকে টেনে নেবে সে।”

টানা দুই দিনে আগের দুই জয়ের পর হেটমায়ার বলেছিলেন ক্লান্তিতে নুইয়ে পড়ার কথা। দুই দিনের বিরতিতে তিনি চনমনে। আরেকবার ম্যাচ জেতানোর পর তিনি শোনালেন তার সাফল্যের রহস্য।

“আমার মনে হয়, প্রার্থনা আমাকে সহায়তা করে। আমি ও আমার স্ত্রী প্রচুর প্রার্থনা করি। এটা কিছুটা কাজে লাগে। পাশাপাশি চিন্তাভাবনায় পরিষ্কার থাকতে হয়। কারণ, একেক ম্যাচের পরিস্থিতি একেকরকম, মনে ভাবনা আসতেই পারে যে, ভিন্নভাবে খেলতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি চেষ্টা করছি যাতে অতিরিক্ত না ভাবি। স্রেফ চেষ্টা করছি মাঠে নেমে নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ও শট খেলতে, এখনও পর্যন্ত তা কজে দিচ্ছে।”

“ব্যাটিংয়ের কথা বললে, আমি অফ-সাইডে আগের চেয়ে অনেক বেশি খেলার চেষ্টা করছি। আগে সব বলই লেগ সাইডে টেনে মারার চেষ্টা করতাম। এই ভুল আমার ছিল। এখন চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব ‘শেপ’ ঠিক রাখার এবং বলকে যেখানে পাঠানোর কথা, সেখানেই পাঠানোর। মনে হয়, ভালোই করতে পারছি তা! এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।”

এবারের আইপিএল একটুও ভালো কাটেনি হেটমায়ারের। ১১ কোটি রুপির ক্রিকেটার রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ১৪ ম্যাচে রান করেছিলেন ২১.৯৭২ গড়ে ২৩৯। কিন্তু মেজর লিগ ক্রিকেটে ৬ ম্যাচেই তার রান এখন ৩০৯, ব্যাটিং গড় ১০৩, স্ট্রাইক রেট ২২০.৭১!

সূত্র: বিডি নিউজ ২৪

সর্বশেষ: