
সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঠেলে দিয়েছে সোনার বাজারে। ফলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সোনার দাম প্রতি আউন্স ৪ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
১৯৭০-এর দশকের পর এটাই সোনার নামে সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন। চলতি এপ্রিলের পর থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক বাণিজ্যে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টিকারী নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করা চলমান শাটডাউনের কারণে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশে বিলম্ব ঘটেছে। এটিও বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে সোনাকে দীর্ঘদিন ধরেই ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে আসছে। কারণ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা কিংবা বাজারের অস্থির সময়েও সোনার মূল্য বজায় থাকে কিংবা বৃদ্ধি পায়।
এদিকে, ব্রিটেনের ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বাজারমূল্য অতিরিক্ত ফুলে-ফেঁপে উঠেছে এবং এতে আর্থিক বাজারে ‘সংশোধনের তীব্র ঝুঁকি’ তৈরি হতে পারে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উত্থানের কারণে শেয়ারের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে ১০ শতাংশ কিংবা তার বেশি পতন ঘটলে সেটিকে ‘কারেকশন বা সংশোধন’ ধরা হয়।
বুধবার বিকেলে এশিয়ার বাজারে স্পট গোল্ডের মূল্য বাড়তে বাড়তে আউন্স প্রতি ৪ হাজার ৩৬ ডলারে পৌঁছায়। আগের দিনও স্পট গোল্ড ফিউচারের মূল্য প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছিল।
সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ওসিবিসি ব্যাংকের রেইট স্ট্র্যাটেজিস্ট ক্রিস্টোফার ওং বলেন, মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা সোনার দাম বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মাসব্যাপী শাটডাউনের সময়ও সোনার দাম প্রায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে শাটডাউন যদি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হয়, তাহলে দাম কমতেও পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংকের বাজার কৌশলবিষয়ক প্রধান হেং কুন হাউ বলেন, ‘‘সোনার এই নজিরবিহীন উত্থান বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে গেছে। তার মতে, মার্কিন ডলারের দুর্বলতা এবং খুচরা (অ-পেশাদার) বিনিয়োগকারীদের ক্রয়ও সোনার দাম বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।’’
যদিও স্বল্পমেয়াদী অনিশ্চয়তার কারণে সাম্প্রতিক এই দামবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কৌশলগতভাবে সোনা কেনা, মার্কিন ট্রেজারি ও ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টাই দীর্ঘমেয়াদে সোনার দামের উত্থানপতনের মূল চালিকা শক্তি।
২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো একত্রে ১ হাজার টনের বেশি সোনা কিনছে; যেখানে ২০১০–২০২১ সময়কালে গড় ক্রয় ছিল ৪৮১ টন। আর গত বছর বিশ্বে সবচেয়ে বড় ক্রেতাদের মধ্যে ছিল পোল্যান্ড, তুরস্ক, ভারত, আজারবাইজান ও চীন।
সব বিনিয়োগকারী সরাসরি সোনা কেনেন না। অনেকে বিনিয়োগ করেন স্বর্ণ নির্ভর এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ)। বিশ্ব স্বর্ণ পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত সোনা-নির্ভর ইটিএফে ৬৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে; যা রেকর্ড।
মূল্যবান ধাতুর বিক্রেতা ও সরবরাহকারী সিলভার বুলিয়নের প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগর গ্রেগারসেন, গত এক বছরে তাদের গ্রাহকসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সোনার দাম হয়তো কমবে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে অন্তত আগামী পাঁচ বছর এটি ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট