শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২

ইসলামী জীবন

শিশুর লালনপালনে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন মহানবী (সা.)

শিশুর লালনপালনে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন মহানবী (সা.)

সংগৃহীত

সন্তান আল্লাহর এক মহান নিয়ামত—তাদের কোমল হৃদয় সহজেই ন্যায়ের পথে গড়ে তোলা সম্ভব যদি পরিবার ভালোবাসা ও কোমল আচরণে তাদের লালন করে। ইসলামে সন্তানকে আমানত বলা হয়েছে; তাই তাদের সৎ, নৈতিক ও ঈমানদার হিসেবে গড়ে তোলা বাবা-মায়ের ফরজ দায়িত্ব।

ছেলে-মেয়ের প্রতি সমান ভালোবাসা

ইসলামে ছেলে ও মেয়ের প্রতি সমান আচরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনো সন্তানকে অন্যের চেয়ে বেশি ভালোবাসা বা গুরুত্ব দেওয়া অন্যায়। নবীজির (সা.) শিক্ষায় স্পষ্ট বলা আছে—সন্তানদের পোশাক, আহার, শিক্ষা, স্নেহ ও যত্নে সমতা বজায় রাখতে হবে।

আজকের বাস্তবতায় অনেক অভিভাবক মনে করেন, কেবল আর্থিক যোগানই সন্তান পালনের দায়িত্ব শেষ করে দেয়। কিন্তু ভালোবাসা, সময় ও মমতা ছাড়া সেই দায়িত্ব কখনো পূর্ণ হয় না।

ভালোবাসা প্রকাশের গুরুত্ব

অনেক অভিভাবক মনের ভেতর সন্তানের প্রতি ভালোবাসা লালন করলেও তা প্রকাশ করেন না। এটি ভুল পদ্ধতি। সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা উচিত। নবী করিম (সা.) নিজের জীবনে এর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে খেলতেন, তাদের কাঁধে তুলে নিতেন, স্নেহ করতেন এবং দোয়া দিতেন।

শিশুদের সঙ্গে নবীজির আচরণ

একটি হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন—একবার নবীজী (সা.) তার নাতি হাসানকে বুকে তুলে ধরলেন এবং দোয়া করলেন, হে আল্লাহ, আমি তাকে ভালোবাসি; আপনিও তাকে ভালোবাসুন এবং যে তাকে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসুন। (সহিহ মুসলিম)

আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, আমি কখনও এমন কাউকে দেখিনি, যিনি শিশুদের প্রতি আল্লাহর রাসুলের মতো সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি তার সন্তান ইব্রাহিমকে বুকের কাছে নিয়ে চুমু দিতেন। (সহিহ মুসলিম)

একইভাবে উসামা ইবন যায়েদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে এক হাঁটুর ওপর এবং হাসান ইবন আলীকে অন্য হাঁটুর ওপর বসিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন আমি তাদের প্রতি দয়া করি। (বুখারি)

ভালোবাসা না দেখানোর পরিণতি

এক ব্যক্তি নবীজিকে বলেছিলেন, তার দশ সন্তান, অথচ কাউকে কখনো চুমু দেননি। নবীজী (সা.) তখন বলেন, যে অন্যের প্রতি দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হবে না। (বুখারি)

নবীজির দয়ার পরিচয় মেলে নামাজেও। আনাস (রা.) বলেন, নবীজী লম্বা সময় নিয়ে নামাজ আদায় করতে চাইতেন, কিন্তু শিশু কান্নার শব্দ শুনে দ্রুত শেষ করতেন, কারণ তিনি জানতেন—মায়ের মন কেমন অস্থির হয়। (বুখারি)

আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, নবীজী (সা.) নামাজের সময় নাতনি উমামাহকে কাঁধে নিয়ে দাঁড়াতেন, রুকুতে গেলে তাকে নামিয়ে দিতেন, আবার দাঁড়ালে কোলে নিতেন।

ছোটদের প্রতি সহনশীলতা ও মমতা

উম্মে খালিদ (রা.) বর্ণনা করেন, ছোটবেলায় নবীজীর কাছে গেলে তিনি স্নেহভরে ইথিওপীয় ভাষায় বলেছিলেন, সানাহ, সানাহ অর্থাৎ ভালো। পরে নবীজী তার জন্য দীর্ঘ জীবনের দোয়া করেছিলেন।

আয়েশা (রা.) বলেন, এক শিশু নবীজীর কোলে প্রস্রাব করে ফেললে তিনি তা ধুয়ে ফেলেন, রাগ করেননি। এটি প্রমাণ করে—তিনি শিশুদের কোমলতা অবলম্বন করতেন এবং শিশুদের অবুঝ মানসিকতা গভীরভাবে বুঝতেন।

সন্তানদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ

সবশেষে নবীজীর স্পষ্ট নির্দেশনা : আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তানদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করো— ছোট হোক বা বড়।(বুখারি ও মুসলিম)

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয়—সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা, সময় দেওয়া ও ন্যায্য আচরণ করাই তাদের প্রকৃত অধিকার। সন্তানকে শুধুই বড় করার নয়, বরং ভালো মানুষ বানানোর শিক্ষা লুকিয়ে আছে নবীজির প্রতিটি আচরণে।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ:

শিরোনাম: