• বুধবার ০৭ জুন ২০২৩ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২৪ ১৪৩০

  • || ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৪

ঠাকুরগাঁওয়ে ভুট্টার ডাঁটায় ঝুলছে ঝিঙে, লাভবান দুই শতাধিক কৃষক

দৈনিক বগুড়া

প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২২  

গাছ থেকে ভুট্টা তোলা শেষে জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ডাঁটায় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে হলদে ফুল। সবুজ পাতা আর হলদে ফুলের মাঝে জড়িয়ে আছে ঝিঙে আর ঝিঙে। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামের চিত্র এটি। উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামের ৬০ হেক্টর আবাদি জমিতে এভাবে ভু্ট্টা ও ঝিঙের সমন্বিত চাষ করে লাভবান হয়েছেন দুই শতাধিক কৃষক।

সচরাচর ঝিঙে চাষিরা আগে ঝিঙে চাষে ব্যবহার করতো বাঁশের কঞ্চি বা বাঁশের তৈরি মাচা বা খুঁটিতে। কিন্তু এখন তার বিপরীতে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে রাণীশংকৈল উপজেলার কৃষকরা। ঝিঙে গাছের লতাপাতা মাটিতে গড়াগড়ি না খায়, তারজন্য মাচা বা খুঁটি হিসেবে ভুট্টার গাছকেই ব্যবহার করছেন। এতে একদিকে খরচ কম হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকরা ভালবান হচ্ছেন । 

অন্যদিকে ভু্ট্টা গাছের ডাঁটায় ঝিঙে গাছের লতাপাতা বেয়ে উঠে। এভাবেই ভু্ট্টার গাছ গুলো ঝিঙে গাছের খুঁটি হিসাবে ব্যবহার করেন তারা। এতে অতিরিক্ত সার বা সেচ কোনোটাই লাগে না। শুধু মাত্র পোকামাকড় দমনে জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় তাদের। 

ওই গ্রামের কৃষক সামসুল আলম। তিন বিঘা জমিতে ভুট্টার সঙ্গে ঝিঙে চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার ভুট্টার আবাদের সাথে ঝিঙে চাষ করে ৬০ মণ ঝিঙে পেয়েছি। এ যাবত বিক্রি করেছি ৫০ হাজার টাকা। এখনও গাছে ফল আসছে। আশা করি আরও কিছু টাকার ঝিঙে বিক্রি করতে পারবো।

একই গ্রামের কৃষক আকতার হোসেন বলেন, ‘ভুট্টা চাষের পর আমরা আগাম আলু চাষি করি। এবার কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার ডাঁটায় ঝিঙে চাষ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার ঝিঙে বিক্রি করেছি। ভুট্টা তুলে নেওয়ার পরে এবং আলু রোপনের জমি প্রস্তুত করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত জমি থেকে ঝিঙে তুলে বাজারে বিক্রি করা যায়। এর আগে আগাম আলু চাষ করার জন্য জমি কিছু দিন এমনিতে পরে থাকতো। এখন ভুট্টার আবাদের সঙ্গে ঝিঙে চাষ করায় আমাদের খরচ কম হচ্ছে ও আমরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবানো হচ্ছি।

রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, উপজেলার দুই শতাধিক কৃষক ৬০ হেক্টর জমিতে অভিনব এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ঝিঙে চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষ করলে খরচ খুবই কম হয়। এতে স্বল্প খরচে এক জমিতে দুই ফসলের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

কৃষকরা আরও জানান, গত চার বছর ধরে ভুট্টার সাথি ফসল হিসেবে ঝিঙে আবাদ করায় এক খরচেই দুটি ফসল পাওয়া যাচ্ছে। ঝিঙে চাষের জন্য আলাদা কোনো খরচ লাগছে না। ফলে এই পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষ করে একদিকে পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে এসব বাজারে বিক্রি করে বেশ আয়ও হচ্ছে তাদের।

এছাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় ব্যাপক ভুট্টা চাষ হয়। খেত থেকে ভুট্টা তোলা শেষ হলে শুরু হয় আগাম আলু চাষের ব্যস্ততা। এ অল্প সময়ে অন্য কোনো ফসল চাষের সুযোগ নেই। তাই আগে চাষিরা জমি ফেলে রাখতেন। কিন্তু চাষিরা এখন সেই জমিতে ভুট্টার বীজ বপনের এক মাসের মধ্যেই সাত থেকে আট ফুট দূরে দূরে ভুট্টা গাছের গোড়ায় ঝিঙের বীজ বপন করেন। বীজ অঙ্কুরোদগমের পর ভুট্টার ডাঁটা জড়িয়ে বেড়ে উঠতে থাকে ঝিঙে গাছের লতাপাতা। ভুট্টা তোলার উপযোগী সময়ে ঝিঙে গাছেও ফুল আসা শুরু করে। এর মধ্যে ভুট্টা পরিপক্ক হলে মোচা ভেঙে নেওয়ার পরেও খেতে ভুট্টার ডাঁটা থেকে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই সেই ডাঁটায় ঝিঙে গাছের লতাপাতায় ফুল ও ফলে ভরে ওঠে। তখন সেখান থেকে ঝিঙে তুলে বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা। এভাবে স্থানীয়দের সবজির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এই সবজি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এই পদ্ধতিতে একই সঙ্গে দুটি ফসল পাওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় বেশ খুশি স্থানীয় কৃষকরা।

রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ  জানান, 'জানামতে একমাত্র রাণীশংকৈল উপজেলায় ভুট্টার ডাঁটা ঝিঙের মাচা বা খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছেন কৃষকেরা। লেহেম্বা ব্লকের বিরাশিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ৬০ হেক্টর জমিতে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ মণ ঝিঙে তুলে বাজারজাত করছে চাষিরা। এই পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষে আমরা কৃষকদের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করছি।

দৈনিক বগুড়া
দৈনিক বগুড়া