বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

স্বাস্থ টিপস

গর্ভাবস্থায় পা ফোলা, করণীয়

গর্ভাবস্থায় পা ফোলা, করণীয়

সংগৃহীত

গর্ভাবস্থায় শরীরের কোষে অতিরিক্ত তরল জমে অনেকের পা ফুলে যায়। এটা খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি ও পাতায় এ সময় শরীরের কোষ অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে। সাধারণত ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর ক্ষেত্রে এ সমস্যা দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে প্রায় ২৫ শতাংশ ওজন বাড়ে অতিরিক্ত এই তরলের কারণে। গর্ভাবস্থার শেষ কয়েক মাসে এই সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায় পায়ে কিছুটা পানি আসা স্বাভাবিক। কিন্তু পায়ের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও পানি জমলে, প্রস্রাবে প্রোটিনের আধিক্য দেখা দিলে বা শ্বাসকষ্ট হলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কেন পানি জমে

গর্ভকালে প্রথম তিন মাসে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এ কারণে এ সময় কারও কারও পায়ে এবং কারও কারও শরীরে পানি আসতে পারে। গর্ভস্থ শিশুর আকার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি রক্ত ও তরল উৎপাদিত হয়। চতুর্থ মাসের শুরু থেকে জরায়ুর আকার বাড়তে থাকে। গর্ভস্থ শিশু আরও বড় হলে তার মাথার চাপে মায়ের নিম্নাঙ্গের যেসব শিরা দিয়ে হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহিত হয়, সেগুলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে নিম্নাঙ্গ থেকে হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং শিরা থেকে তরল বের হয়ে শরীরের টিস্যুতে জমা হয়।

কারও আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বা নতুন করে গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট বা কিডনির রোগ দেখা দিলে পায়ে পানি আসতে পারে। একটানা অনেকক্ষণ কাজ করা, খাবারে পটাশিয়ামের অভাব, অতিরিক্ত ক্যাফেইন, বাড়তি লবণ খেলে এই প্রবণতা বাড়ে।

যা করবেন

গর্ভাবস্থায় পায়ে ভর দিয়ে একটানা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না। কিছুক্ষণ পরপর বসুন বা বসার ভঙ্গি পরিবর্তন করুন। বসার সময় পা টুলের ওপর তুলে রাখতে পারেন। আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করবেন। লবণের পরিমাণ সীমিত রাখুন। প্যাকেটজাত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলবেন। পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার যেমন কলা, অ্যাপ্রিকট, কমলা, মিষ্টি আলু, বিট ইত্যাদি খান। আর খেতে হবে প্রচুর পানি। এতে শরীর আর্দ্র থাকবে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যাবে। তবে চিনিযুক্ত পানীয় যেমন সোডা বা প্যাকেটজাত জুস না খাওয়া ভালো। নিয়মিত হাঁটাচলা বা হালকা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। ব্যায়ামের ফলে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক কাপড় পরার চেষ্টা করুন।

কখন সতর্ক হবেন

পায়ের পাশাপাশি হঠাৎ হাতে, মুখে পানি এলে, সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও কাশি হলে সতর্ক হতে হবে। এক পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া, সঙ্গে ব্যথা, গর্ভের শিশুর নড়চড়া কমে যাওয়া, অতিরিক্ত পানি জমে ত্বকে শক্ত ভাব চলে আসতে থাকলে, পানি জমার স্থানে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রস্রাবে সংক্রমণ বা উচ্চ রক্তচাপ না হয়ে থাকলে এমনিতে সামান্য পানি জমা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। তবে অস্বাভাবিক কোনো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডা. খায়রুন নেছাগাইনি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শিবচর, মাদারীপুর

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ: