
সংগৃহীত
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি- মার্চ) রেকর্ডসংখ্যক মানুষ কানাডা ছেড়ে গেছেন। স্ট্যাটিসটিকস কানাডা (StatCan) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ২৭ হাজার ৮৬ জন কানাডিয়ান নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা দেশ ছেড়েছেন। এই সংখ্যা ২০১৭ সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি চলতি বছরের একটি প্রাথমিক চিত্রমাত্র, কারণ সাধারণত তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশত্যাগের হার সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। অন্যদিকে, একই সময়ে ৯ হাজার ৬৭৬ জন প্রবাসী কানাডায় ফিরে এসেছেন, যা গত বছরের তুলনায় সামান্য বেশী।
উল্লেখযোগ্যভাবে, অস্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যেও দেশত্যাগের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ২,০৯,৪০০ জন অস্থায়ী বাসিন্দা—বিশেষত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও ওয়ার্ক পারমিটধারী—কানাডা ছেড়েছেন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৃদ্ধি একটি ভবিষ্যৎ সংকটের ইঙ্গিত। মে মাসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিক ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা সীমিত করার পরিকল্পনার ঘোষণা দেন, যা এই প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।
কেন দেশ ছাড়ছেন মানুষ?
StatCan-এর পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোতে দেখা যায়, সাধারণত অভিবাসীরা কানাডায় আসার তিন থেকে সাত বছরের মধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যাঁদের সন্তান নেই, কিংবা যাঁরা ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী, তাঁদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। উদ্যোক্তা ও উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীদের মধ্যে কানাডা ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমানোর হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
কোন দেশ থেকে অভিবাসীরা এসেছেন, সেটিও একটি বড় ভূমিকা রাখে। যেমন, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, হংকং ও লেবাননের অভিবাসীরা তুলনামূলক বেশি হারে কানাডা ত্যাগ করেন। বিপরীতে, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও জ্যামাইকান অভিবাসীদের মধ্যে এই হার কম।
কোথায় যাচ্ছেন কানাডিয়ানরা?
বিভিন্ন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, অনেক কানাডিয়ান আমেরিকা , ইতালি, পর্তুগাল, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও মেক্সিকোর মতো দেশে চলে গেছেন। তুলনামূলক কম ব্যয়ের জীবনযাপন, অনুকূল আবহাওয়া ও ডিজিটাল নোম্যাড ভিসার সুযোগ গ্রহণ করাই তাঁদের পছন্দের কারণ।
বাংলাদেশিরা কোথায় যাচ্ছেন
কানাডায় পড়তে আসা অনেক বাংলাদেশি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এবং কাজের ভিসায় কানাডায় এসেছিলেন তারা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে দেশে ফিরে গিয়েছেন। কানাডায় পড়তে এসে কম যোগ্যতা থাকার কারনে পিআর হওয়ার সম্ভাবনা এখন বেশ কঠিন হওয়ার ফলে এবং যারা কাজের ভিসায় এসেছিলেন তাদের ভিসা বর্ধিত না হওয়ার কারণে তারা দেশে ফিরে গিয়েছেন।
অন্যদিকে কানাডায় এসে যেসব বাংলাদেশী কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আমেরিকায় গিয়ে সেটেল হচ্ছেন এবং একটা বড় অংশ কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি ও দেশটির পাসপোর্ট নিয়ে কানাডার নাগরিক হিসেবে উচ্চ বেতনে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে কাজ করছেন। অন্যদিকে একসময় বিজনেস ভিসায় কানাডায় এসে বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা কানাডিয়ান পাসপোর্ট নিয়ে আবার বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে নিজের ব্যবসার হাল ধরেছেন। তবে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা কানাডায় অবস্থান করছেন ।
মানুষের এই চলে যাওয়ার প্রবনতা কানাডার ভবিষ্যৎ শ্রমবাজার, শিক্ষা খাত এবং অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: প্রথম আলো