
সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ‘বিয়ার ক্যান হাউস’ নামে পরিচিত বাড়িটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। নকশা করেন জন মিলকোভিস নামের এক মার্কিন নাগরিক। স্থপতি না হলেও গৃহসজ্জার সামগ্রী নিয়েই ছিল তাঁর কারবার। ১৮ বছর ধরে তিলে তিলে কাজ এগিয়ে নেন তিনি। বাড়ির মেঝে ও উঠানে মার্বেল, পাথর ও ধাতব টুকরা বসিয়ে বেশ চমকপ্রদ নকশা করেছেন মিলকোভিস। তবে মূল আকর্ষণ বিয়ার ক্যান দিয়ে তৈরি বাড়িটির দেয়াল, ছাদ ও বেড়া। বিয়ারের বোতলের দেয়াল একদিকে যেমন তাপ নিরোধক, অন্যদিকে এগুলোর রঙিন আলো–ছায়ার খেলা দেখে মনে হয় রঙিন কাচের জানালা। মোজাইক বানাতে ভাঙা বোতলের ব্যবহার বাড়িয়েছে সৌন্দর্য ও শৈল্পিকতা। এ ছাড়া ধাতব ক্যানের ঢাকনা দিয়ে মালা গাঁথার মতো করে ছাদের চারদিকে ঝোলানো হয়েছে। রোদ পড়লেই সেগুলো ঝলমল করে ওঠে। হালকা বাতাস বইলেই তৈরি হয় অন্য রকম সুর। সাধারণ ও ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে তৈরি এই বাড়ি দেখতে অনেকেই এখন ভিড় জমান। মজার ব্যাপার হলো, বাড়িতে ব্যবহৃত সব বিয়ার মিলকোভিস নিজেই পান করেছেন বলে ধারণা করা হয়। ‘রিপলি’স বিলিভ ইট অর নট’–এর অনুমান, প্রায় ৫০ হাজার বিয়ারের বোতল পুনর্ব্যবহার করে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে।
যে বাড়ির সবকিছুই খোলা
‘ট্রান্সপারেন্ট হাউস’ বা ‘স্বচ্ছ বাড়ি’র নকশা করেন জাপানি স্থপতি সু ফুজিমোতো
ছবি: আর্ক ডেইলি ডটকম
বাড়ি বা ঘরের কথা বললে আপনার মাথায় কী আসে? বাইরের দুনিয়া থেকে একান্তই নিজস্ব জায়গা, যেখানে গোপনীয়তা রক্ষার জন্য মাথা ঘামাতে হয় না। তবে এই ধ্যানধারণা ও নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২০১১ সালে ‘ট্রান্সপারেন্ট হাউস’ বা ‘স্বচ্ছ বাড়ি’র নকশা করেন জাপানি স্থপতি সু ফুজিমোতো। বাড়িওয়ালার নাম অনুসারে এটি ‘হাউস এনএ’ নামেও পরিচিত। টোকিওর একটি আবাসিক এলাকায় মাত্র ৯১৪ বর্গফুট জায়গায় নির্মিত তিনতলা বাড়িটির প্রতিটি দেয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে স্বচ্ছ কাচ। স্বাধীনতা ও উন্মুক্ততাকে প্রাধান্য দিতেই এই অভিনব চিন্তা। মূলত ‘গাছের ভেতরে বসবাস’—এ ভাবনাকে মাথায় রেখেই নকশা করেছেন ফুজিমোতো। গাছে যেমন বিভিন্ন উচ্চতায় ডালপালা ছড়িয়ে থাকে, তেমনি এ বাড়িতেও মেঝের জন্য ২১টি আলাদা প্লেট বসানো হয়েছে। সব কটিই আবার ভিন্ন উচ্চতায় অবস্থিত, মই ও সিঁড়ির মাধ্যমে যা যুক্ত। তাই বাড়ির সদস্যদের একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ কিছুটা চ্যালেঞ্জই বটে।
ছাদের ওপরে বাড়ি
ছাদের ওপর এ রকম বাড়ির অস্তিত্ব চোখে পড়ে চীনের আরও কিছু এলাকায়
ছবি: দ্য মাইন্ড সার্কেল ডটকম
শপিং মলের ছাদে পুল, জিমসহ নানা আয়োজন থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে আস্ত বাড়ি? চীনা এক কোম্পানি এমনটাই ঘটিয়েছে ২০০৯ সালে। দেশটির হুনান প্রদেশের হেঙ্গইয়াং শহরের একটি শপিং মলের ছাদে রীতিমতো ২৫টি বিলাসবহুল ভিলা বা ছোট আকারের বাড়ি তৈরি করেছিলেন ডেভেলপাররা। ২০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে তৈরি এসব ভিলা নির্মাণে সরকারের অনুমতি না থাকায় প্রাথমিকভাবে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সরকার শর্ত জুড়ে দেয়, বিক্রি না করলে এগুলো থাকতে পারে। বিলাসবহুল এই বাড়িগুলো তখন থেকে কর্মী ও নির্মাণকাজে যুক্ত অভিবাসী শ্রমিকদের অস্থায়ী বাসস্থান। ছাদের ওপর এ রকম বাড়ির অস্তিত্ব চোখে পড়ে চীনের আরও কিছু এলাকায়। বলা হয়ে থাকে, চড়া দামের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও গ্রাহকদের নতুনত্বের স্বাদ দিতে এগুলো নির্মিত হয়েছিল।
প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি
বাড়ির মূল কাঠামোতে ব্যবহার করা হয়েছে ১ হাজার ২০০টি প্লাস্টিকের বোতল
ছবি: ওয়েলকাম আর্জেন্টিনা
দেয়াল থেকে ছাদ—পুরো বাড়িই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এমনকি প্রবেশপথের বড় গেটটিও। বাড়িটির নাম ‘লা কাসা দে বোতেলাস’ বা বোতলবাড়ি। আর্জেন্টিনার পুয়ের্তো ইগুয়াজুতে অবস্থিত বাড়িটির মালিক আলফ্রেডো সান্তা ক্রুজ ও তাঁর পরিবার। বাড়ির মূল কাঠামোতে ব্যবহার করা হয়েছে ১ হাজার ২০০টি প্লাস্টিকের বোতল। ছাদ তৈরি হয়েছে ১ হাজার ৩০০টি টেট্রা প্যাক দিয়ে। ১৪০টি সিডি কেস দিয়ে তৈরি হয়েছে দরজা ও জানালা। প্লাস্টিক বোতল দিয়ে বানানো হয়েছে বিছানা ও সোফা। সব মিলিয়ে টেকসই বাড়িটি পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের একটি অনন্য উদাহরণ।
সূত্র: প্রথম আলো