বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

সন্তান ধারণে সমস্যার সমাধান খাবারেই

সন্তান ধারণে সমস্যার সমাধান খাবারেই

সংগৃহীত

আজকের ব্যস্ত, চাপপূর্ণ জীবনে অনেক দম্পতির মুখে শোনা যায় একটি সাধারণ কিন্তু বেদনাদায়ক কথা—‘সন্তান হচ্ছে না’। কখনো দেরিতে গর্ভধারণ, কখনো দীর্ঘ সময়েও না হওয়া। এটা কি শুধুই ভাগ্য? না, এর পেছনে লুকিয়ে আছে আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক চাপ।

ভালো খবর হলো, প্রকৃতিতেই এমন অনেক খাবার আছে, যেগুলো নারীদের ও পুরুষদের উর্বরতা বা ফার্টিলিটি বাড়াতে সাহায্য করে। সঠিক পুষ্টি গ্রহণ শুধু হরমোনের ভারসাম্যই ফিরিয়ে আনে না, বরং এটি ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর গুণগত মানও উন্নত করে।

চলুন জেনে নিই, কোন কোন খাবার ও পুষ্টি উপাদান গর্ভধারণে সহায়ক হতে পারে।

ফার্টিলিটি বাড়ায় এমন ১০টি পুষ্টি উপাদান ও তাদের উৎস

ভিটামিন ডি

কাজ: শরীরের যৌন হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে, ডিম্বস্ফোটন ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।

উৎস: ডিম, চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন, টুনা), দুধজাত খাবার, কড লিভার তেল, রোদ।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি নারীদের গর্ভধারণে সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে।

ভিটামিন ই

কাজ: শুক্রাণুর গুণমান ও গতিশীলতা উন্নত করে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে ডিএনএ রক্ষা করে।

উৎস: সূর্যমুখী বীজ, বাদাম, জলপাই তেল, পালং শাক, পেঁপে।

ভিটামিন সি

কাজ: হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ডিম্বাণুর ও শুক্রাণুর স্বাস্থ্য উন্নত করে। গর্ভপাতের ঝুঁকি কমায়।

উৎস: আমলকী, পেয়ারা, লেবু জাতীয় ফল, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, আলু, টমেটো।

লাইপোইক অ্যাসিড

কাজ: ডিম্বাশয় রক্ষা করে, শুক্রাণুর গুণগত মান উন্নত করে।

উৎস: আলু, পালং শাক, লাল মাংস।

ভিটামিন বি৬

কাজ: হরমোন নিয়ন্ত্রণ, পিএমএস কমানো এবং রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করে।

উৎস: কলা, টুনা, লিভার, স্যামন, পালং শাক, ব্রোকলি।

ভিটামিন বি১২

কাজ: শুক্রাণু উন্নত করে, জরায়ুর আস্তরণ মজবুত করে, গর্ভপাতের সম্ভাবনা হ্রাস করে।

উৎস: ঝিনুক, লিভার, মাছ, ডিম, পনির।

ফলিক অ্যাসিড

কাজ: ভ্রূণের সঠিক গঠন নিশ্চিত করে, জন্মগত ত্রুটি রোধ করে।

উৎস: শাকসবজি (পুঁই, পাট, সরিষা), ডাল, বীজ (তিল, তিসি, সূর্যমুখী)।

সেলেনিয়াম

কাজ: ফ্রি র‍্যাডিক্যাল থেকে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু রক্ষা করে।

উৎস: মাছ, চিংড়ি, ব্রাজিল নাট, মাশরুম, টার্কি।

জিঙ্ক

কাজ: হরমোন ভারসাম্য ও প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়।

উৎস: কলিজা, ঝিনুক, কুমড়োর বীজ, তিল, দই।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

কাজ: জরায়ুর রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

উৎস: চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, সার্ডিন)।

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান

সঠিক খাদ্য পরিকল্পনায় আরও যা রাখা উচিত:

প্রোটিন: ডিম, মাছ, ডাল, মাংস

কার্বোহাইড্রেট: ব্রাউন রাইস, ওটস, আলু

ফাইবার: শাকসবজি, ফল, বাদাম

চর্বি (Healthy Fats): অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, বাদামের তেল

কিছু পরামর্শ

- সব সময় মনে রাখবেন, খাদ্য শুধু শরীর নয়, মন ও হরমোনও নিয়ন্ত্রণ করে।

- যদি দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও ফল না আসে, তবে অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

- ধূমপান, অতিরিক্ত চিনি বা ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন।

সন্তান ধারণ শুধু শরীরের নয়, পুরো জীবনের প্রস্তুতির অংশ। আর সেই প্রস্তুতির ভিত্তি শুরু হয় খাবার থেকে। প্রতিদিনের ছোট পরিবর্তন আপনাকে একদিন বড় সুখবর দিতে পারে।

সূত্র: কালবেলা

সর্বশেষ:

শিরোনাম: