মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ইসলামিক শিক্ষা

কারও শরীরে পা লাগলে হাত ‍দিয়ে ছুঁয়ে সালাম করা কি জায়েজ?

কারও শরীরে পা লাগলে হাত ‍দিয়ে ছুঁয়ে সালাম করা কি জায়েজ?

সংগৃহীত

সালাম শান্তির সোপান। ইসলামী অভিবাদনের এক অনিন্দ্য কথন। সালাম অন্তরে প্রশান্তির জন্ম দেয়। কল্যাণ বয়ে আনে। দাম্ভিক আত্মাকে পবিত্র করে তোলে। অহংকার থেকে মুক্তি দান করে। পরস্পর পরস্পরে সৃষ্ট বিদ্বেষ বিদূরিত করে। সালামের মাধ্যমে একে অপরের শান্তি কামনা করা হয়। এতে করে মানুষে মানুষে হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। সমাজে অনাবিল সুখ-শান্তি আর ভালোবাসা বিরাজিত হয়।

হাদিস শরিফে এসেছে, যখন একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালাম ও মুসাফাহা করেন, তখন আল্লাহতায়ালা তাদের বিদায় নেওয়ার আগেই উভয়ের গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সালামের সর্বোত্তম অনুসরণকারী। ছোট-বড় সবাইকে তিনি নিজে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিতেন। তার এই আমল আমাদের জন্য এক অনন্য আদর্শ।

নবীজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা প্রকৃত ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ইমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসতে লাগবে? (কাজটি হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’ (তিরমিজি : ২৬৮৮)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা যখন ঘরে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। (সুরা নূর : ৬১)।

হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম’। তখন তিনি (নবীজি সা.) বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে একটু বাড়িয়ে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’ তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে আরও একটু বেশি বাড়িয়ে বললেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু।’ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’ (সুনানে তিরমিজি : ২৬৯০)।

সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বেশি বেশি সালাম দিতেন। সালাম প্রদানে তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হতো। অধিক ছওয়াব হাসিলে ব্যাপক সালাম প্রদানের জন্য তারা বাজারে যেতেন!

তবে, সালামের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে প্রায়সময়ই একটি বিষয় দেখা যায় যে, অনিচ্ছাকৃত কারও শরীরে পা লাগলে ওই ব্যক্তিকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে সালাম করা হয়। কেউ কেউ হাত দিয়ে ছুঁয়ে সালামের পর নিজের হাতে চুমুও খেয়ে থাকেন। এমনটা করা কি শরিয়তসম্মত?

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, পৃথিবীর একেক দেশে সম্মান প্রদর্শনের জন্য একেক রীতি প্রচলিত রয়েছে। বাংলাদেশে কারও শরীরে পা লাগলে সেটিকে অপমান হিসেবে ধরা হয়। এ জন্য দেশীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী কারও শরীরে পা লাগলে দুঃখপ্রকাশ করা যেতে পারে। এতেই ওই ব্যক্তি বুঝে যাবেন যে, ইচ্ছাকৃত তাকে অপমান করার জন্য পা লাগানো হয়নি। তবে হাত দিয়ে ছুঁয়ে সালাম করা বা হাতে চুমু খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, ইসলামে এমন কোনো নির্দেশনা নেই। একই সঙ্গে সাওয়াব লাভের আশায় কারো পায়ে ধরে সালাম করা যাবে না বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

আর হাদিস শরিফেও বড়জোর মুসাফাহা-মুআনাকার কথা এসেছে, কিন্তু পা ধরার কথা আসেনি। আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যখন তার কোনো ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন সে কি মাথা ঝুঁকাবে বা তাকে জড়িয়ে ধরবে বা চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। লোকটি বলল, তাহলে কি কেবল হাত ধরবে ও মুসাফাহা করবে? নবীজি বললেন, হ্যাঁ৷ (তিরমিজি : ২৭২৮, ইবনে মাজাহ : ৩৭০২) নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা ঝুঁকাতে নিষেধ করেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, পা ছুঁয়ে ‘সালাম’ করার সময় সাধারণত মাথা ঝুঁকে যায়। আর রুকুর কাছাকাছি হয়ে সালামের জন্য ইশারা করা, ঝুঁকে পড়া মাকরুহ। (সাকবুল আনহুর ৪/২০৫)

সূত্র: কালবেলা

সর্বশেষ:

শিরোনাম: