রোববার, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২

যে যাকে ভালোবাসে হাশরের ময়দানে তাকে পাবে ?

যে যাকে ভালোবাসে হাশরের ময়দানে তাকে পাবে ?

সংগৃহীত

মানুষ যাকে ভালোবাসে, তার কাছেই টান অনুভব করে। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে চায়, তার সঙ্গে জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে চায়। ভালোবাসা যেন মানুষের হৃদয়ে প্রবাহিত এক অদৃশ্য স্রোত, যা তাকে বেঁধে রাখে কোনো না কোনো সম্পর্কে। কিন্তু সেই স্রোতের শেষ গন্তব্য কোথায়? দুনিয়ার এই ভালোবাসা কি কেবল এখানে থেমে যাবে, নাকি আখিরাতেও তার ছাপ বহন করবে?

কারণ, প্রতিটা নারী-পুরুষই চান দুনিয়ার জীবন শেষে পরকালেও যেন তিনি তার প্রিয়জনের সঙ্গ পান। এ প্রেক্ষাপটে অনেক নারী-পুরুষ প্রশ্ন করেন, ‘তিনি যাকে ভালোবাসেন তার সঙ্গে কি তার হাশর হবে? জান্নাতে কি তারা একসঙ্গে থাকবেন?'

চলুন, জেনে নিই শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি—

যা বলা হয়েছে হাদিসে

হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালোবাসে (কিয়ামতে) সে তারই সঙ্গী হবে। (বোখারি : ৬১৭০)

হাদিসের ব্যাখ্যায় বিশেষজ্ঞ আলেমের ভাষ্য

দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামিয়া দারুল উলুম কানাইঘাট, সিলেট-এর নাইবে শায়খুল হাদিস আল্লামা শামছুদ্দীন দুর্লভপুরি কালবেলাকে জানান, উল্লিখিত হাদিসে আল্লাহ তার বান্দাদের যে বৈধ-বিশ্বাসভিত্তিক ভালোবাসার নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাখার জন্য উৎসাহিত করেছেন, সে সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ইমানের বন্ধনগুলোর মধ্যে একটি।

কাজেই হাদিসে ‘যে যাকে ভালোবাসবে কেয়ামতের ময়দানে সে তার সঙ্গে থাকবে’ এ কথার মানে হলো, ভালোবাসা যখন আল্লাহর জন্য হবে, আল্লাহকে খুশি করার জন্য হবে, তখন দুজনই জান্নাতি হবে। আর দুজন জান্নাতি হলে তো অবশ্যই একসঙ্গে থাকবেন।

কিন্তু যদি ভালোবাসাটা আল্লাহর জন্য না হয়, দুজন আল্লাহওয়ালা না হন, তাহলে সেক্ষেত্রে এই হাদিস প্রযোজ্য না। কারণ, হাদিসের উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর জন্য ভালোবাসা।

শায়খ শামছুদ্দীনের ভাষ্য, এখন কেউ যদি কাউকে দুনিয়ার জন্য ভালোবাসে, অর্থাৎ আমাদের সমাজে ভালোবাসার নামে নারী-পুরুষের যে অবৈধ সম্পর্ক চলে, সেরকম ভালোবাসা বা সম্পর্ক হলে জান্নাতে একসঙ্গে থাকার সুযোগ নেই। বরং দুজন জাহান্নামি হওয়ার শঙ্কা বেশি।

প্রসঙ্গত, আমাদের সমাজে অনেককে একটি কথা বলতে শোনা যায় যে, মৃত্যুর পর ভাইবোনের আর কখনো দেখা হবে না। অনেকে এই কথাটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসও করেন। তবে এই কথাটি আসলে সঠিক নয়। ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই।

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘মৃত্যুর পর ভাইবোনের আর দেখা হবে না এমন কোনো কথা কোরআন-সুন্নাহর কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই। এটা একান্ত কারো মনগড়া বাক্য।’

তার দাবি, যদি ভাইবোন জান্নাতি হন তবে পরকালে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ হবে।

পবিত্র কোরআনের সুরা আবাসার ৩৪ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘সেদিন (কেয়ামত) মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে। সেদিন মানুষ পলায়ন করবে আপন ভ্রাতা হতে।’

আহমাদুল্লাহ জানান, এই আয়াতই প্রমাণ করে মৃত্যুর পর ভাইবোনের দেখা হবে। কাজেই যারা বলেন মৃত্যুর পর ভাইবোনের দেখা হবে না, তাদের কথাটি সম্পূর্ণ ভুল।

সূত্র: কালবেলা