
সংগৃহীত
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহারহাট গ্রামটি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যেখানে মানুষ এবং পাখির মধ্যে গড়ে উঠেছে এক অসাধারণ সখ্যতা। প্রতি বছর মার্চ মাসে শামুকখোলের ঝাঁক এই গ্রামে আসে, তাদের কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। নভেম্বরের শেষে যখন তারা চলে যায়, তখন গ্রামের মানুষের মনে বাজতে থাকে এক ধরনের বিষাদের সুর।
এই পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গ্রামের তরুণরা মিলে গড়ে তুলেছেন এক অভিনব অভয়ারণ্য। তাদের দাবি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে আরও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
এই গ্রামে প্রায় বিশটি গাছে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধেছে, যা দেখতে এক বিশাল পাখির রাজত্বের মতো। এই পাখির লম্বা পা এবং বিশেষ আকৃতির ঠোঁট শামুক ভাঙার জন্য খুবই উপযোগী। তবে, তারা শুধু খাবারের সন্ধানেই আসে না, তাদের নতুন প্রজন্মকে বড় করার জন্যও এই স্থানটি বেছে নিয়েছে।স্থানীয়দের এই উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিতে ২০১৭ সালে বগুড়ার উপজেলা প্রশাসন বিহারহাটকে ‘পাখির রাজ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে।
২০১১ সালে গ্রামের একটি বটগাছে কিছু পাখির আগমনের মধ্য দিয়ে এই গল্পের শুরু। প্রথমদিকে পাখির অবাধ বিচরণ এবং বিষ্ঠায় বিরক্ত হলেও, ধীরে ধীরে এলাকাবাসী তাদের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করতে শুরু করে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই সম্পর্ক, মানুষ আর পাখির মধ্যে ভালোবাসার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই গ্রামের গল্প শুধু একটি অভয়ারণ্যের নয়, বরং প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতি মানুষের গভীর মমতার এক অনন্য উদাহরণ।
শিকারিদের থেকে পাখিদের রক্ষা করতে স্থানীয়রা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যা এই অভয়ারণ্যকে আরও সুরক্ষিত করে তোলে। জোড়ায় জোড়ায় থাকার কারণে এই পাখিদের মানিকজোড় নামেও ডাকা হয়। বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার শামুকখোল পাখি এই গ্রামে বাস করে।
শামুকখোলের আগমনের পর থেকেই স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা সক্রিয় হন। তারা মানুষকে পাখি শিকারের ক্ষতিকর দিক এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলেন। তাদের এই প্রচেষ্টায় গ্রামবাসীও শামিল হয়, এবং খুব দ্রুতই পাখির নিরাপত্তা তাদের নিজেদের দায়িত্বে পরিণত হয়।
বিহারহাট গ্রামের রুবেল হোসেন বলেন, আমাদের এমন সম্পর্ক হয়ে গেছে যে, বাইরে থেকে কেউ পাখি ধরতে বা মারতে এলে আমরা তাদের বাধা দিই।
শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, বিহার হাটে শতবর্ষী গাছের ডালে গড়ে উঠেছে পাখির এক নিরাপদ রাজ্য। এসব পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শিকারিদের তৎপরতা রুখতে পাখিশিকারিদের দেখলেই দ্রুত আটক করার জন্য বিহার ইউনিয়নে দায়িত্বরত বিট পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া আছে।