
সংগৃহীত
হঠাৎ করেই যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বগুড়ার ধুনট উপজেলার সহড়াবাড়ীসহ ডান তীরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সহড়াবাড়ী ও এর ভাটির কিছু অংশে ভাঙন সবচেয়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
পাউবো বগুড়া সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনা নদীর ডান তীরে সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা থেকে ধুনট উপজেলার বানিয়াজান পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় আট কিলোমিটার নদীতীর রয়েছে। ইতোমধ্যেই ধুনটের সহড়াবাড়ীতে বেশ কয়েকটি দোকানসহ একটি বাজারের প্রায় অর্ধেক নদীতে বিলীন হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সোনাতলা থেকে ধুনট পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভাঙনরোধের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
সহড়াবাড়ী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, নদীভাঙনের কারণে গত বুধবার সকাল থেকে গতকাল শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত অন্তত আটটি দোকান নদীতে বিলীন হয়েছে। বাজারের অর্ধেক এখন নদীর তীরে নেই।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে সহড়াবাড়ীর স্পারের ভাটিতে ভাঙন দেখা দিলেও তা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আগে যমুনার পানি ১০০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘূর্ণিবর্ত সৃষ্টি হয়। এর পর পরই সহড়াবাড়ী বাজার এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়। গত তিন দিনে নদীভাঙনে ৪৩০ মিটার এলাকা বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধে ইতোমধ্যেই দুই হাজার জিও টিউব ও সাড়ে পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’
রেজাউল করিম ২০০৩ সালে সহড়াবাড়ী বাজারে দোকান দেন। এতদিন বেশ ভালোভাবেই চলছিল। গত বুধবার দুপুরে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই দোকানটি নদীতে বিলীন হয়ে গেল। একই সঙ্গে আরও সাত-আটটি দোকান নদীতে বিলীন হলো। পানি উন্নয়ন বোর্ড যেন স্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।’
প্রায় ৩৫ বছর ধরে সহড়াবাড়ী বাজারে রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা চালানো মতিনুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘বুধবার হঠাৎ ভাঙনের মুখে পড়ে আমার স্থাপনাটি নদীতে চলে গেছে। অনেক কষ্টে দাঁড়ানো এই ব্যবসা হয়তো আর টিকে থাকবে না। ইতোমধ্যেই অনেকেই স্থাপনা সরিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।’
এবারের ভাঙনে সহড়াবাড়ী বাজারের পাশাপাশি একটি নৌকাঘাট বিলীন হয়েছে। কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি ও বসতবাড়িও এখন হুমকির মুখে আছে।
পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, এবারে সহড়াবাড়ীতে তীব্র ভাঙনের অন্যতম কারণ হলো নদীর সামনেই থাকা একটি বড় ডুবোচর। এই চরের কারণে যমুনার মূল প্রবাহ সরাসরি আঘাত হানছে সহড়াবাড়ীর ডান তীরে।