বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

বিলুপ্তির পথে বগুড়ার শেরপুরের মৃৎশিল্প

বিলুপ্তির পথে বগুড়ার শেরপুরের মৃৎশিল্প

সংগৃহীত

প্রত্যেকটি দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। একেকটি শিল্পের বিস্তারের পেছনে রয়েছে দেশ বা জাতির অবদান।আবহমান বাংলার বিভিন্ন শিল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কুমাররা প্রাচীনকাল থেকে এই মৃৎশিল্পের কাজ করে আসছে। কুমারপাড়ায় ঢুকলেই সাদামাটির একটা ঘ্রাণ মানুষকে মাতোয়ারা করে তুলত। কুমার পরিবারের জীবিকা অর্জনের প্রধান বা একমাত্র উৎস ছিল এই মৃৎশিল্প। আজকের এই সভ্যতার যুগে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসনে দেশিয় সংস্কৃতি ছিঁকেয় উঠতে বসেছে। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প তাই আজ বিলুপ্তির পথে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবালা পালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুশীল পাল (৫৬) বলেন,পহেলা বৈশাখে মাটির তৈরি বাসনসহ মাটির হাঁড়ি-পাতিলের প্রচুর চাহিদা ছিল। বর্তমানে ওয়ানটাইম প্লেট এসে সে স্থান দখল করে নিয়েছে। তাই এখন সারা বছর দইয়ের সরা, দইয়ের গ্লাস তৈরি করছি। শুধুমাত্র এক-দুই ধরনের পণ্য বিক্রি করে সংসার চালানো কঠিন। উৎপাদনের খরচসহ মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় মূলধন সংকটে আছি। প্রয়োজনীয় সরকারি পৃষ্টপোষকতাসহ বরাদ্দ পেলে বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তা না হলে মৃৎশিল্পীদের স্থান হবে ইতিহাসের পাতায়।

কল্যানী কুমারপাড়ার সুশান্ত কুমার পাল বলেন, এক সময় আমরা বিভিন্ন রকম পণ্য তৈরি করতাম। সেগুলো বিভিন্ন মেলা বা হাট বাজারে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা রোজগার করতাম। এখন পণ্যের চাহিদা কমে গেছে, অন্যদিকে জ্বালানি খরচ ও মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় এই কাজে আশানুরুপ লাভ হচ্ছে না। এ কারণে আমরা এই শিল্পের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে আগে মাটির পাতিলে রান্না হতো। ঠান্ডা পানির আধার হিসেবে ঘরের কোনায় স্থান পেত মাটির কলস। পিঠা তৈরির তা, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, প্রদীপদানি, মোমদানি, মাটির তৈরি খেলনাসহ কোনোকিছুরই আর চাহিদা নেই। এসব জিনিসের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, সিরামিক, অ্যালুমিনিয়ামের বাসন-কোসন। অন্যদিকে মাটির তৈরি জিনিসপত্র পোড়ানোর ব্যবহৃত কাঠ এখন ২০০-২৫০ টাকা মণ। প্রতি বস্তা কাঠের গুঁড়া ১২০-১৫০ টাকা। প্রধান উপাদান মাটির দামও অনেক চড়া। মাটির তৈরি পণ্য উৎপাদনের খরচসহ সবকিছুর দাম বাড়লেও, মাটির পণ্যের দাম বাড়েনি। উপরন্তু, চাহিদা কমেছে। ফলে, এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে।

মৃৎশিল্পী লিপন পাল বলেন, বংশ পরম্পরায় চলে আসা এ পেশা ছাড়ার কথা ভাবতেই খুব কষ্ট হয়। যদিও, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে আর এমনটা মনে হয় না। মনে হবেই বা কেন? তারা তো এটা দেখেই বড় হয়েছে যে, এ পেশা লালন করে আমাদের নুন আনতে পানতা ফুরায়। বংশীয় পেশা টিকে রাখতে গিয়ে আমাদের জীবনধারণই কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আলম বলেন, মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও ঋণদান কর্মসূচিসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মসূচি আরও বেগবান করার চেষ্টা করবে উপজেলা প্রশাসন।

সর্বশেষ: