মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সুন্দর পোশাক পরার ব্যাপারে নবিজির (সা.) নসিহত

সুন্দর পোশাক পরার ব্যাপারে নবিজির (সা.) নসিহত

মানুষের ইজ্জতের হেফাজত ও শালিনতার বস্তু সুন্দর পোশাক। কোরআন-সুন্নায় সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরার নির্দেশনা এসেছে। আবার পোশাকের কারণেই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জাহান্নামি হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। কী ধরনের পোশাক পরার কারণে নারীরা জাহান্নামি হবে তা-ও হাদিসে বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরায় ইসলামের কিছু দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হলো-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুই প্রকার জাহান্নামি মানুষ আসবে; যাদের আমি আমার যুগে দেখতে পাচ্ছি না। এক প্রকার হচ্ছে, ওই সব নারী!-

১. যারা কাপড় পরেও উলংগ থাকবে।
২. তারা সাজ-সজ্জা করে পর পুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও অন্য পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট থাকবে।
৩. তাদের মাথার খোপা (সাজ সজ্জা ও ফ্যাশনের কারণে) উটের কুঁজের মত (উঁচু, যা) এদিক-ওদিক হেলানো থাকবে।
তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না; এমনকি তারা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ, জান্নাতের সুঘ্রাণ ৫শ’ বছর রাস্তার দূরত্ব থেকেও অনুভব করা যাবে।’ (মুসলিম)

হাদিসে উল্লেখিত পোশাক (কাপড়) পরেও উলংগ থাকা’র মর্মার্থ হচ্ছে-
> যেসব নারী এমন পাতলা কাপড় পরে; যার ফলে কাপড়ের ওপর থেকেই শরীরের ভেতরের চামড়া ও পশম দেখা যায়।
> আবার এমন টাইট বা আঁট-শাট শোশাক পরে যে, তাতে তাদের শরীরের আকার-আকৃতি সুস্পষ্ট হয়ে পড়ে।
> তারাও এ কথার সঙ্গে জড়িত, যারা পরিপূর্ণ পর্দা করে না বরং পর্দার নামে ফ্যাশন করে। বিভিন্ন ডিজাইনের টাইট-ফিটিং বোরকা পড়ে। যার ফলে তাদের শরীরের গঠন ও আকৃতি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।

সুন্দর পোশাক পরায় ইসলামের দিকনির্দেশনা
১. পোশাক পরে শুকরিয়া আদায় করা
সুন্দর ও উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ আল্লাহ তাআলার দেওয়া বড় নেয়ামত। তাই প্রত্যেক বান্দার উচিত, সুন্দর পোশাক পরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো নতুন কাপড় পরতেন তখন আল্লাহর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই দোয়া পাঠ করতেন-
اللّهُـمَّ لَـكَ الحَـمْـدُ أنْـتَ كَسَـوْتَنيهِ، أَسْأَلُـكَ مِـنْ خَـيرِهِ وَخَـيْرِ مَا صُنِعَ لَـه، وَأَعوذُ بِكَ مِـنْ شَـرِّهِ وَشَـرِّ مـا صُنِعَ لَـهُ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু কামা কাসাওতানিহি, আসআলুকা মিন খইরিহি ওয়া খইরি মা সুনিআ লাহু, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহি ওয়া শাররি মা সুনিআ লাহু।’

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমারই প্রশংসা। তুমিই আমাকে এই পোশাক পরিয়েছ। আমরা তোমার কাছে এই কাপড়ের কল্যাণ ও উপকারিতা প্রার্থনা করি এবং এর অকল্যাণ ও অপকারিতা থেকে তোমার আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৭৬৭)

২. সতর ঢেকে রাখা
সুন্দর ও উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ এমন হতে হবে, যা পুরো সতর ঢেকে রাখে। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের মূল উদ্দেশ্যই সতর ঢাকা। পোশাক প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ قَدۡ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکُمۡ لِبَاسًا یُّوَارِیۡ سَوۡاٰتِکُمۡ وَ رِیۡشًا ؕ وَ لِبَاسُ التَّقۡوٰی ۙ ذٰلِکَ خَیۡرٌ
‘হে আদম সন্তান! আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ২৬)

৩. বাহবা পাওয়ার জন্য পোশাক না পরা
বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে নামিদামি কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরনের বাহারি পোশাক বাজারজাত করে থাকে। উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা এসব পোশাকের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখায়। অথচ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব পোশাক না পরার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন-
‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। এরপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে।’ (আবু দাউদ ৪০২৯)

৪. পোশাক পরায় কৃপণতা ত্যাগ করা
ইসলামে অপচয় ও কৃপণতা দুটিই নিন্দনীয় অপরাধ। পোশাক-পরিচ্ছদে পরার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। সামর্থ্য থাকার পরও কেউ যদি কৃপণতা করে নিম্নমানের পোশাক পরে তবে ইসলাম তা পছন্দ করে না। একবার আবুল আহওয়াসের পিতা মালিক বিন আউফ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলেন। তখন তাঁর পরনে ছিল অতি নিম্নমানের পোশাক। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি সম্পদ আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, কী সম্পদ আছে? সে বলল, সব ধরনের সম্পদই আল্লাহ তাকে দান করেছেন। উট, গরু, ছাগল, ঘোড়া, গোলাম ইত্যাদি। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, ‘যখন আল্লাহ তাআলা তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন তখন তোমার ওপর (পোশাক-পরিচ্ছদে) তাঁর নেয়ামতের ছাপ থাকা চাই।’ (নাসাঈ ৫২৯৪)

৫. পোশাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা
পোশাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে রাখা। ইসলামের নির্দেশনাও এমন। হজরত সাহল বিন হানজালিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কোনো এক সফর থেকে ফেরার পথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে আগমন করছ। সুতরাং তোমাদের হাওদাগুলো গুছিয়ে নাও এবং তোমাদের পোশাক পরিপাটি করো, যাতে তোমাদের (সাক্ষাৎ করতে আসা) মানুষের ভিড়ে তিলকের মতো (সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন) মনে হয়। (জেনে রেখো) আল্লাহ তাআলা স্বভাবগত নোংরামি বা ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা থাকা, কোনোটাই পছন্দ করেন না। ’ (আবু দাউদ ৭০৮৩)

৬. প্রদর্শনের মানসিকতা পরিহার করা
পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষকে দেখানোর মানসিকতা পরিহার করা জরুরি। সর্বাবস্থায় সকল কাজেই প্রদর্শনেচ্ছা নিন্দনীয় কাজ। পোশাক-পরিচ্ছদের মাধ্যমেও যেন এই ব্যাধি মানুষের অন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়েও হাদিস শরিফে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। এক হাদিসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকারবশত মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না (রাগান্বিত থাকবেন)। (বুখারি ৫৭৯১)

বিশেষ করে
পোশাক পরার ক্ষেত্রে দেখেশুনে শালীন পোশাক পরা। পাতলা ও খাটো পোশাক পরিহার করা। টাইট-ফিটিং তথা আঁট-শাট পোশাক থেকে বিরত থাকা। অন্যের সামনে নিজের রূপ ও সৌন্দর্য দেখানো থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণীতে যে বিষয়গুলো ওঠে এসেছে, তা থেকে নিজেদের বিরত রাখার পাশাপাশি ঢিলে-ঢালা পোশাক পরা এবং বাইরে বের হলেও ঢিলে-ঢালা বোরকা পরিধান করা। পোশাক পরায় ইসলামের দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর নারী-পুরুষ সবাইকে পোশাক-পরিচ্ছদ পরায় নিজেদের হেফাজত রাখার তাওফিক দান করুন।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: