সংগৃহীত
মানুষের ইবাদত, ত্যাগ, চেষ্টা—সবই আল্লাহ তায়ালার জ্ঞাতসারে ঘটে। কিন্তু মানুষের কর্মের মাঝে কিছু দৃশ্য এতটাই নির্মল ও বিশুদ্ধ হয়, তা আল্লাহর আরশের দরবারে বিশেষ মর্যাদা পায়। হাদিসে এসেছে, বিশ্বজগতের মালিক দুই শ্রেণির মানুষের কর্ম দেখে খুশিতে হাসেন। জান্নাত দানের ঘোষণা করেন। এই দুই শ্রেণির লোক কারা- কালবেলার পাঠকদের জন্য তা জানিয়েছেন সিলেটের শীর্ষ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামিয়া দারুল উলুম কানাইঘাটের নায়বে শায়খুল হাদিস মাওলানা শামছুদ্দীন দুর্লভপুরি।
তিনি বলেন, মু’জামে তবরানিতে ইমাম তবরানি (রাহি.) বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। ওই হাদিসে ইবনে মাসউদ (রা.) জানান, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা দুই ব্যক্তিকে দেখে হাসেন । এদের একজন হলো ওই ব্যক্তি, যে শীতের কঠিন রাতে আরামের বিছানা ছেড়ে উঠে ঠান্ডা পানি দিয়ে ওজু করে নামাজ আদায় করেন। এই লোকটির অবস্থা দেখে আল্লাহ তায়ালা হাসেন এবং সবকিছু জানা সত্ত্বেও তিনি ফেরেশতাদের ডেকে জিজ্ঞেস করেন, আমার এই বান্দা কীসের আশায় এই কষ্ট স্বীকার করল? ফেরেশতারা বলেন, ইয়া আল্লাহ, আপনার কাছে যে জান্নাত বা মহা নিয়ামত রয়েছে তার আশায় এবং আপনার কাছে জাহান্নামের যে ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে তার ভয়ে সে শীতকে উপেক্ষা করে নামাজ আদায় করছে। তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা লিখে রাখো, সে আমার কাছে যা পাওয়ার জন্যে নামাজ আদায় করছে, তাকে আমি তা প্রদান করলাম, আর যা থেকে সে আমার কাছে আশ্রয় চায় বা যে শাস্তির ভয় করে, তা থেকে তাকে নিষ্কৃতি দিলাম।
শায়খ শামছুদ্দীন বলেন, হাদিসে উল্লিখিত এই নামাজের ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের অনেকে বলেছেন, এখানে ফজরের সালাতের কথা বলা হয়েছে। তবে বেশিভাগ মুহাদ্দিসগণের দাবি, এটা দ্বারা তাহাজ্জুদের সালাতকেই বোঝানো হয়েছে।
আরেকজনকে দেখে বা তার আচরণ দেখে আল্লাহ তায়ালা খুশিতে হাসেন, সেই বক্তি হলো ওই লোক, যে আল্লাহর রাহে জিহাদের জন্য বের হয় এবং আল্লাহর ভয়ে ও আল্লাহর নিয়ামতের আশায় নিজের জীবনকে বিসর্জন দেয়। এই ব্যক্তির ব্যাপারেও আল্লাহ তায়ালা তাঁর ফেরেশতাদের সঙ্গে প্রথম ব্যক্তির অংশের মতো কথোপকথন করে থাকেন।
উল্লিখিত দুই ব্যক্তির প্রসঙ্গে ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ হাদিসের গ্রন্থ মুসনাদে আহমদের বরাত দিয়ে বলেন, দুনিয়াতে কারো কোনো আচরণে যদি আল্লাহ হাসেন, তাহলে আখিরাতে ওই ব্যক্তির থেকে হিসাব গ্রহণ করা হবে না। এর মানে হলো আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট। অর্থাৎ বিনা হিসেবে জান্নাতে যাওয়া লোকদের ভেতর এরাও পড়বে।
উল্লেখ্য, আল্লাহ বান্দার মতো হাসেন, তা নয়; এমনটা কখনো বিশ্বাসও করা যাবে না। কারণ, তাঁর সঙ্গে কোনো ব্যক্তি, সৃষ্টি বা বস্তুর সাদৃশ্য হয় না। তাই তাঁর হাসি তাঁর শানে যেভাবে শোভনীয়, তিনি সেভাবেই হাসেন। এ ব্যাপারে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘কোনো কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়।’ (সুরা শুআরা : ১১)
মোল্লা আলি কারি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর হাসির উদ্দেশ্য হলো তাঁর সন্তুষ্টি। তাই যেসব হাদিসে তাঁর হাসির কথা রয়েছে, সেসবের মর্ম হবে ওই ব্যক্তির ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন, তার কল্যাণের ব্যবস্থা করবেন।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ : ৮/৩৫৫৯, ৯/৪০৩০)
সূত্র: কালবেলা




















