শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চা-শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ

চা-শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ

একাধিক বৈঠক একাধিক আলোচনা ফলে চা-শ্রমিক দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা থেকে বেড়ে নির্ধারিত হয়েছে ১২০ টাকায়। চুক্তি অনুযায়ী বর্ধিত এই ১৮ টাকার ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই মজুরি কার্যকর হবে।

জানা যায়, চুক্তি বিলম্বিত হওয়ায় দুর্গাপূজার আগেই মজুরি বৃদ্ধি ও সে অনুযায়ী বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে চা-শ্রমিকেরা তাদের নিজ নিজ বাগানে বাগানে ৬ অক্টোবর থেকে দুই ঘণ্টা/তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন ও মিছিল-সমাবেশ করেছেন।

চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন (বাচাশ্রই) এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় নতুন চুক্তিতে এই বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। পরে বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের প্রফিডেন্ট ফান্ড অফিসে সমঝোতা বৈঠকে মজুরি বৃদ্ধির প্রাথমিক চুক্তি সই হয়।

বাচাশ্রই সূত্র জানায়, গত ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর চা-শ্রমিকদের মজুরির দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী নতুন চুক্তির কথা উল্লেখ থাকলেও নানান সমস্যার কারণে ইতোমধ্যে ২২/২৩ মাস গড়িয়ে যায়। সেই অনুযায়ী ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে দুই পক্ষের মধ্যে নতুন চুক্তির বিষয়ে চা-বাগানের মালিকপক্ষ প্রতিনিধি এবং চা-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। বাচাশ্রই এর পক্ষ থেকে তাদের চাহিদা বিটিএর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এরপর দুইপক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বৈঠকে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা চলেছে।

শনিবার (১৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের (বাচাশ্রই) সংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, আমরা বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ৩০০ টাকা দাবি করলেও চুক্তির আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছে ১২০ টাকা। আগে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ছিল ১০২ টাকা। বর্ধিত ১৮ টাকা চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই মজুরি কার্যকর হবে। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ অক্টোবর (২০২০) পর্যন্ত বকেয়া মজুরি চার দফায় পরিশোধ করা হবে।

এখন আপাতত বকেয়া হিসেবে মজুরির সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা করে চা-শ্রমিকরা পাবেন। চা-শ্রমিকদের নতুন মজুরি আগামী সোমবার (১৯ অক্টোবর) থেকে দেওয়ার কথা বলেও জানান এ শ্রমিকনেতা।

ফিনলের চিফ এক্সিকিউটিভ স্টেট (সিইএস) তাহসিন এ চৌধুরী বলেন, ‘বাগান থেকে চা-শ্রমিকরা কিন্তু শুধু দৈনিক মজুরিই পান না। এর সঙ্গে আরো অনেক সুবিধাদি পেয়ে থাকেন। এগুলো হলো- নামমাত্র মূল্যে চাল/রেশন, হাউজ ফ্যাসিলিটি (বসতভিটায় থাকায় সুবিধা), প্রফিডেন্ট ফান্ড ফ্যাসিলেটি (ভবিষ্য তহবিল) মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটি (চিকিৎসা সুবিধা), তাদের সন্তানদের জন্য অ্যাডুকেশন ফ্যাসিলিটি (শিক্ষার সুবিধা) এগুলো শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর মূল্য নির্ধারণ করলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জনপ্রতি চা-শ্রমিক বাবদ ৩৭০ টাকা করে খরচ হয় আমাদের। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে একজন দিনমজুরের ন্যূনতম মাসিক আয় ৯ হাজার টাকা। আমরা চা-শ্রমিকদের ৩০০ টাকা করে দিলেও কিন্তু ৯ হাজার টাকার ওপরে হয়। চা-শ্রমিকসহ তাদের প্রতিনিধিরা যখন বিভিন্ন জায়গায় বলে আমরা ১০২ টাকা করে মজুরি পাই, এ কথা কিন্তু পুরোপুরি সত্য নয়। ’

‘১০২ টাকা দিয়ে বর্তমান সময়ে একটা পরিবার চলতে পারে না, তাহলে চা-শ্রমিকরা এতদিন ১০২ কিভাবে চললো? কারণ তারা এজন্য চলতে পারে যে, তারা শুধু বাগান থেকে দৈনিক ১০২ টাকা মজুরিই পায় না, এর সঙ্গে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে বলেও জানান চা-শিল্প বিশ্লেষক তাহসিন এ চৌধুরী।

দৈনিক বগুড়া