শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশি পর্যটকদের আনাগোনায় গতি ফিরছে পর্যটনে

দেশি পর্যটকদের আনাগোনায় গতি ফিরছে পর্যটনে

সাধারণ চোখে দেখলে পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সে কথা সবাই স্বীকার করবেন। করোনাকালের স্থবিরতা কাটিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, সিলেট ও পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন স্পটগুলো মানুষের পদচারইায় মুখর হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিদেশি পর্যটক আসার ক্ষেত্রে স্থবিরতা একেবারেই কাটেনি।

বাংলাদেশে প্রধানত ভারত, নেপাল, জাপান থেকে পর্যটকেরা আসেন। সেটা এখন একেবারেই নেই। আর ইউরোপ থেকে যে পর্যটকেরা আসেন, তা আগামী দুই বছরেও স্বাভাবিক হবে বলে আশা করতে পারছেন না পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি গত দুই বছরে পর্যটন খাতের যে ক্ষতি হয়েছে, পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা যে আর্থিক ক্ষতি ও ঋণের চাপে পড়েছেন, তা থেকে কবে বেরিয়ে আসতে পারবেন, তার উত্তরও কারো কাছে নেই।

এর পরেও হোটেলগুলো চালু হয়েছে, দেশের ঘরবন্দি মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ছে—এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্ট সবাই। এদিকে করোনাকালে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন খাতকে সহায়তা করতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যাতে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সেবা খাত হিসেবে পর্যটন খাতেরও সেই সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই প্রণোদনা না পাওয়ায় এই খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, বাস্তবতা হচ্ছে, যাদের স্থায়ী বিনিয়োগ আছে, যেমন হোটেল, রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি শুধু তারাই এই সুবিধা পেয়েছে। পর্যটন খাতের সঙ্গে কিন্তু সুন্দরবনে ভেতরে যে নৌকা চালায় সে যেমন যুক্ত, আবার সমুদ্রসৈকতে যে ছবি তোলে বা গাইড তারাও যুক্ত। এদের বাঁচিয়ে রাখে প্রধানত ট্যুর অপারেটররা। ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানকে অবলম্বন করে সবাই নিজ নিজ ব্যবসা টিকিয়ে রাখে। কিন্তু এই ট্যুর অপারেটররাই উপেক্ষিত।

এই বাস্তবতায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হচ্ছে দিবসটি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে পর্যটন’। এই স্লোগানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটনশিল্পের কর্মকাণ্ডে সর্বজনীন অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করার প্রয়াস রয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হেমন্ত ঋতু বাংলায় বেড়ানোর উপলক্ষ্য নিয়ে হাজির হয়। শুরু হয় পর্যটনের মৌসুম। এখন হাতছানি দিচ্ছে কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিনের সমুদ্রসৈকত। আমন্ত্রণী গান শোনাচ্ছে সবুজ পাহাড় আর পাহাড়ি ঝরনাগুলো। সমুদ্র, অরণ্য, পাহাড়, ঝরনা আর হ্রদ এখন পুরোদমে প্রস্তুত পর্যটকদের বরণে। সাড়া মিলছে প্রকৃতিপ্রেমী আর ভ্রমণপিপাসু মানুষের। মহামারির কারণে সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ১৯ আগস্ট খুলেছে দেশের পর্যটনকেন্দ্রের দুয়ার। খুলে দেওয়া হয়েছে হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন এলাকার বিনোদনকেন্দ্রগুলোও।

দীর্ঘদিন পর খুলে দেওয়ায় ভিড় বাড়তে শুরু করেছে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে। কঠোর বিধিনিষেধে বন্ধ থাকায় আর্থিক অনটন গেলেও এখন নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন এই খাতের পেশাজীবীরা।

কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, সাজেক, কাপ্তাই লেক, নীলগিরি, রাতারগুল, কুয়াকাটা, সুন্দরবনসহ দেশের মূল পর্যটন আকর্ষণগুলোতে এখন লোকে লোকারণ্য। এমনকি পতেঙ্গা সৈকত, খৈয়াছড়া ঝরনা, গুলিয়াখালী সৈকত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মতো জায়গাগুলোতেও পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। ঘুরতে যাওয়ার জন্য ঢাকার খুব কাছে গাজীপুরের বিভিন্ন রিসোর্টও এখন বেশ জনপ্রিয়।

করোনাকালের আগে বাংলাদেশের পর্যটন খাত বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে চলছিল। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কমপেটেটিভনেস রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম বলা হয়েছে। এ রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচ ধাপ এগিয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ১২৫তম।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এইচ এম হাকিম জানান, খুব ধীরে হলেও পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে, সেটাকে ভালো বলা যাবে না। যেখানে হোটেলগুলো বন্ধ ছিল, কর্মীরা কর্মহীন হয়ে বসে ছিলেন, তারা কাজে ফিরেছেন। এটা স্বস্তির। কিন্তু হোটেলগুলো লাভের মুখ দেখছে না। যত দিন না আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল স্বাভাবিক হবে, তত দিন পর্যন্ত ব্যবসা ভালো হওয়ার সুযোগ নেই।

এ প্রসঙ্গে নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের বাংলাদেশ মুখপাত্র ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর ট্যুরিজম বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মো. তাসলিম আমিন শোভন  বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাত স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও বিদেশে পর্যটক যাওয়া এবং বিদেশি পর্যটক আসা এখনো বন্ধই। এ খাতের পর্যটন ব্যবসায়ীরাই পর্যটন খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকেন। এই ব্যবসায়ীদের করোনাকালের স্থবিরতা এখনো কাটেনি। কবে কাটবে তার কোনো নিশ্চয়তাও জানা নেই কারো।

দ্য বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম নাসিম বলেন, ‘আমাদের অবস্থা ভালো নয়। সুন্দরবন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো ট্যুর পরিচালনা শুরু করা যায়নি পর্যটকের অভাবে। বিদেশি পর্যটকদের কিছু বুকিং পাওয়া গেছে, সেটাও আগামী বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে। সেটা তো অনিশ্চিত। সুতরাং আমরা বেশ খারাপ অবস্থাতেই রয়েছি।’

দৈনিক বগুড়া