
সংগৃহীত
খুন, ডাকাতি, অপহরণ এবং ধর্ষণ—গত এক বছরে এই চার ধরনের অপরাধের মামলা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। এর মধ্যে পুরোনো খুনের অনেকগুলো ঘটনায় গত ১২ মাসে মামলা হয়েছে। তবে গত এক বছরে ছিনতাই ও দস্যুতা, চুরি ও চোরাচালানের মামলা আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের আট ধরনের অপরাধের ঘটনায় হওয়া মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুলাইয়ের এই মামলাগুলো থেকে অপরাধ পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেকটা ধারণা পাওয়া যায়। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় গত বছরের শুরুর দিকে অনেক ঘটনায় মামলা হয়নি। তাই কোনো কোনো অপরাধের ঘটনা পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি হবে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকেরা।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অপরাধের যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, এর বাইরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হিসেবে সামনে এসেছে মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) তৈরি করে সহিংসতা। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদের নামে মব তৈরি করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা, লুট, কাউকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি, মামলা ও গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের ঘটনাও ঘটেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর অপরাধভিত্তিক শ্রেণি আলাদা করে মামলার তথ্য সংরক্ষণ করে। তবে মব তৈরি করে অপরাধে জড়ানোর হিসাব আলাদাভাবে রাখে না পুলিশ। এ কারণে গত এক বছরে মব তৈরি করে কতসংখ্যক অপরাধ হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গত সাত মাসে মব-সহিংসতা ও গণপিটুনির অন্তত ১৭৩টি ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৯ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১৫৮ জন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আইন হাতে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ আক্রমণ ও বিশৃঙ্খলার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে, যা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উপরন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও কখনো কখনো মবের শিকার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কখনো কখনো নিজেদের বাঁচাতে অপরাধ দমনের চেষ্টা না করে তাঁরাও ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন।
সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছে রংপুর জেলার তারাগঞ্জে। ৯ আগস্ট সেখানে ভ্যানচোর সন্দেহে দুই নিরপরাধ মানুষ—রূপলাল দাস (৪০) ও প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক প্রদীপ লালকে (৩৫) গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও ‘মবের ভয়ে’ তাঁদের উদ্ধার না করে ফিরে যায়। ঘণ্টাখানেক পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই একজন মারা যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা পর অন্যজনও মারা যান।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর পরও কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলো না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অপরাধে জড়িত ব্যক্তি বা তখনকার সুবিধাভোগীদের আইনের আওতায় আনতে বেশ কিছু সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ হয়েছে। তবে এই প্রতিবাদগুলো পরবর্তী সময়ে যখন সহিংস রূপ নিল, তখনো কেন থামানো গেল না—সেই আলোচনাও রয়েছে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমানে তারা মবের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ভূমিকায় আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, শুরুতে মব নিয়ন্ত্রণে বল প্রয়োগ করার মতো মনোবল পুলিশের ছিল না। একদল ছাত্র আসতে দেখলে পুলিশ পালিয়ে যেত। পরে অবশ্য বেশ কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ায় মব সৃষ্টি এখন কমে এসেছে।
খুন, ডাকাতি ও অপহরণ
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এক বছরে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩ হাজার ৮৬৬টি খুনের মামলা হয়েছে। এর আগের বছর ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত খুনের ঘটনায় মামলা হয় ২ হাজার ৯৭৫টি।
তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক ঘটনায় ৬৩৭টি হত্যা মামলা হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর। এসব মামলা বাদ দিলে গত এক বছরে হত্যা মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ২২৯।
আইজিপি প্রথম আলোকে বলেন, খুন বেশি হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। তবে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ৮৩৪ জন শহীদ হয়েছেন। এসব ঘটনায় আগস্ট মাসে কোনো মামলা হয়নি। সেই শহীদদের মামলাগুলো এখন হচ্ছে। এ ছাড়া ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একশ্রেণির লোক থানায় অভিযোগে নিয়ে যেতে পারত না। অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে তাদের জামায়াত-বিএনপি বলে ধরে ফেলত। আগের ক্রসফায়ারের ঘটনায়ও এখন মামলা হচ্ছে। এ ছাড়া আগের সরকারের সময় অনেক মানুষ গুম হয়েছে। এখন সেসব ঘটনায় অপহরণের মামলা হচ্ছে। গুম কমিশন থেকে এ রকমের ১৬০টি ঘটনা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে।
অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরিসংখ্যান যা-ই হোক, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বোধ তৈরি করেছে। যেমন গত ৯ জুলাই পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে পিটিয়ে ইট-পাথরের খণ্ড দিয়ে আঘাত করে তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও চিত্র পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এই ঘটনার এক মাসের মাথায় ৭ আগস্ট গাজীপুরে এক ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিও করার সময় সন্ত্রাসীরা স্থানীয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যা করে। সেটাও জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্যে ঘটে। দুই ঘটনায়ই আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরে আসেনি। গাজীপুরের ঘটনার এক দিন পর রংপুরে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।
শেখ হাসিনার পতনের পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। উদ্বিগ্ন লোকজন অনেক এলাকায় রাতের বেলায় পাহারাও বসান। সড়কে কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
শুরুতে মব নিয়ন্ত্রণে বল প্রয়োগ করার মতো মনোবল পুলিশের ছিল না। পরে অবশ্য বেশ কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ায় মব সৃষ্টি এখন কমে এসেছে।
বাহারুল আলম, আইজিপি
পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে সারা দেশে ১ হাজার ১৫৬টি ডাকাতির মামলা হয়েছে। এর আগের বছর একই সময়ে ডাকাতির মামলা ছিল ৩৩০টি। দণ্ডবিধি অনুযায়ী, দস্যুতার ক্ষেত্রে অপরাধী এক থেকে চারজন হয়ে থাকে। চারজনের বেশি হলে তা ডাকাতি হিসেবে ধরা হয়।
গত এক বছরে নিরাপত্তাহীনতা তৈরির অন্যতম কারণ হিসেবে সামনে এসেছে অপহরণের ঘটনা। গত ১১ জানুয়ারি গাজীপুরে অপহরণের শিকার হন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক আমিনুর রহমান। তাঁকে সড়ক থেকে তুলে নিয়ে চোখে স্কচটেপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর হাতুড়ি দিয়ে হাঁটুতে আঘাত ও শারীরিক নির্যাতন করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে অপহরণের ঘটনায় সারা দেশে ৯৫৪টি মামলা হয়েছে। আগের বছর এই সময়ে অপহরণের মামলা হয়েছিল ৫১৩টি।
আতঙ্কের নাম মব
উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ বা মব নিয়ে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখা গেছে। পুলিশও বিভিন্ন সময়ে সংঘবদ্ধ আক্রমণের শিকার হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত এক বছরে পুলিশের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় ৫৬০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মব সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর অন্তত ২২৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, মব সন্ত্রাস ও গণপিটুনির শিকার হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত—প্রায় ৮ মাসে সারা দেশে ১১১ জন নিহত হয়েছেন। গত সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসক বলেছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ৪ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, মবের প্রতিটি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর। কেউ যাতে আইন নিজ হাতে তুলে না নেয়, সে জন্য সবাইকে সতর্ক করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তবে এই সতর্কতার পরও মব সৃষ্টি করে বেশ কিছু অপরাধ সংঘটনের ঘটনা দেখা যায়। গত ১৭ জুলাই আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে মব সৃষ্টি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদসহ কয়েকজন এই টাকা নিয়ে আরও ৫০ লাখ চাঁদা দাবি করেছিলেন। দ্বিতীয় দফা টাকা আনতে গেলে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
গুলশানসহ রাজধানীতে এর আগেও এমন আরও ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকার পরিস্থিতি বেশি খারাপ ছিল। সেখান বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে লুটপাটের অভিযোগও আছে।
এই বিষয়ে গত ১২ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য চাওয়া হয়। পরদিন জানানো হয়, উপদেষ্টা যা বলেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আলাদা করে বক্তব্য দেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মবের ঘটনা পুলিশকে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় ফেলেছে। কোথাও কোথাও থানায়ও আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। মবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়। পুলিশ বিভাগ তাঁকে রাখার চেষ্টা করলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের কারণে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়। এই ঘটনা মবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের পর থেকে এ ধরনের ঘটনা কিছুটা কমেছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।
ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতন
দেশে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় সাধারণত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়। ১০ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত অপরাধের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে।
সেই হিসাবে গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত—১১ মাসে ১৭ হাজার ৯০০টি ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। এর আগের বছর একই সময়ে একই ধরনের অপরাধের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৭৯২।
এই এক বছরে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল মাগুরায় বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে একটি শিশু ধর্ষণের ঘটনা। ৬ মার্চ এ অভিযোগ করেছিল পরিবার। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। এ ঘটনায় করা মামলায় আসামি ছিলেন শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ। তাঁকে মাগুরার আদালত গত ১৭ মে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
কমেছে তিন অপরাধ, বেড়েছে উদ্ধার
গত এক বছরে চুরি, সিঁধেল চুরি ও চোরাচালান কমেছে। ঘরের ভিটায় সিঁধ কেটে বা গ্রিল ভেঙে-কেটে চুরির ঘটনাকে সিঁধেল চুরি বলা হয়। এই সময়ে (আগস্ট ’২৪-জুলাই ’২৫) চুরি ও সিঁধেল চুরির ঘটনায় ১১ হাজার ২৬৬টি মামলা হয়েছে। এর আগের বছর একই সময়ে ১২ হাজার ১৫৭টি মামলা হয়েছিল। এ ছাড়া গত এক বছরে চোরাচালানের ঘটনায় ১ হাজার ৯৬২টি মামলা হয়েছে। এর আগের বছর এ সময়ে এ-সংক্রান্ত ঘটনায় মামলা হয় ২ হাজার ৩৫৬টি।
এদিকে গত এক বছরে মাদকদ্রব্য ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার বেড়েছে। গত এক বছরে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৬৪টি মামলা হয়েছে। এর আগের বছর এ সময় এ-সংক্রান্তে মামলা হয় ৬৮ হাজার ৮৭৫টি।
গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এক বছরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৫টি। এর আগের বছর এ সময় এ-সংক্রান্তে মামলা হয় ১ হাজার ৪৩০টি।
পুলিশ দুর্বল, দরকার কঠোরতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়লেও তা থেকে দ্রুত উত্তরণে রাষ্ট্র ও সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। পুলিশ দুর্বল অবস্থায় আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক কর্মকর্তাকে দীর্ঘদিন পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। অপারেশনাল কাজের বাইরে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে ফেলে রাখা হয়েছিল। অনেকে দুর্নীতি বা নৈতিক স্খলনের কারণেও পদোন্নতি পাননি। বঞ্চিত হিসেবে এ ধরনের কর্মকর্তারা ভালো পদায়ন ও পদোন্নতি পেয়েছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে দক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এমন কর্মকর্তারা অধস্তনদের উজ্জীবিত করতে যেমন পারছেন না; তাঁদের ভালো-মন্দের দায়িত্ব নিতেও সাহস পান না।
আবার পুলিশের অনেকেই চাকরির নিশ্চয়তা নিয়েও অস্থিরতায় আছেন। আস্থার সংকটের কারণে অনেক সদস্য সাহসিকতা নিয়ে কাজ করতে পারছেন না। ফলে মানুষের মনে নিরাপত্তাবোধ তৈরিতে অগ্রগতি কম।
এ বিষয়ে কথা হয় টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুকের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পুলিশ শক্ত অবস্থান নিতে পারছে না। ফলে জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়েছে।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমস্যাগুলো আরও ঘনীভূত হবে। এই সময়ে মব, সহিংস ঘটনাসহ চুরি, ছিনতাই, দস্যুতা, খুন ও ডাকাতি আরও বাড়বে। এ জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে পুলিশকে বিশেষায়িত করা দরকার। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়া জরুরি।
সূত্র: প্রথম আলো